• শিরোনাম

    “অবশেষে ” আজকের চাঁদটা ভরাট,বিদ্যুৎ নেই, আলোকিত রাত যেন আকাশ ভেঙে জ্যোৎস্না পড়ছে।

    স্টাফ রিপোর্টার মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

    apps

    “অবশেষে ” আজকের চাঁদটা ভরাট,বিদ্যুৎ নেই, আলোকিত রাত যেন আকাশ ভেঙে জ্যোৎস্না পড়ছে। ঘরের ভিতরটা ফুলে ফুলে সাজানো, গোলাপ আর গাদা ফুলের পাঁপড়িতে ঢেকে আছে বিছানার চাদর। সাদিয়া বিছানার একপাশে বসে আছে, লাল শাড়িতে ওকে খুব সুন্দর লাগছে। বিদ্যুৎহীন ঘরটা যেন সাদিয়ার আলোয় জ্বলজ্বল করে জ্বলছে।সিনেমার নায়িকাদের চেয়ে অপরুপ লাগছে। সুজন রুমের ভিতর পায়চারি করছে, আড় চোখে বার বার সাদিয়ার দিকে তাকাচ্ছে, কাছে যেতে লজ্জা লাগছে, অথচ এমন একটি ক্ষণ আসবে বলে কত বছর অপেক্ষা আর সংগ্রাম করতে হয়েছে।আজ জ্যোৎস্না না হয়ে বৃষ্টি হলে ভালো হত।সারারাত চা আর সাদিয়ার সাথে না বলা গল্প গুলো করা যেত। দুনিয়ার সব ভাবনা একে একে হানা দিচ্ছে সুজনের মনে, মনে পড়ছে সেই প্রথম থেকে আজ অবদি সাদিয়ার সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো। জীবন সিনেমা নয় আবার জীবন থেকেই সিনেমার গল্প নেয়া হয়।আজ এই দম্পতির গল্প অনেকটা সিনেমার মতো। স্কুল পেরিয়ে সবেমাত্র কলেজে ওঠেছিলো ওরা।দুজনেই বিঙান বিভাগের শিক্ষার্থী তবে আচরণে দুজন দুমেরুর, সুজন ছিলো প্রচন্ড দুষ্ট আর সাদিয়া দায়িত্বশীল মেধাবী। প্রথম দেখায় ভালো লাগা আর ভালোলাগা থেকেই শুরু হয় ভালোবাসার। সদ্য কৈশোর পেড়িয়ে যৌবনে পা রাখা সুজন অকপটে বলে “সাদিয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি ” কথায় বলে মেয়েরা আটেই আঠারো, মানে বুদ্ধি বয়সের তুলনায় বেশি তাই হেসেই উড়িয়ে দেয় সুজনের প্রস্তাব কিন্তু নাছোড়বান্দা প্রেমিক না শুনতে প্রস্তুত নয়। ভালোবাসা আদায় করতেই হবে।সাদিয়ার পিছনে আঠার মত লেগে থাকাটা, রসায়ন আর গণিত কোচিং ক্লাস করার মত নিয়মিত হয়ে ওঠেছিল কিন্তু ফলাফল সুজনের পক্ষে আসেনি তখনও। এরই মধ্যে নবীনবরনের অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারিত হয়।ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত বলে সুজনের মনে একটু ভিন্ন অনুভূতি, এই নবীন বরণে সাদিয়ার সামনে নায়ক সাজার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। যেহেতু অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মহোদয় উপস্থিত থাকবে তাই লোক সমাগম বেশি হবে।নতুনদের চেয়ারে বসার সম্ভাবনা কম! তাই সুজন মনে মনে ভেবে রাখে, নবীন বরণের দিন সাদিয়া সহ তার বন্ধবীদের সামিনের সারির চেয়ার বসাবে রাজনৈতিক প্রভাবে। যেন তাদের মন জয় করতে পারে। কথায় বলে অভাগা যেদিকে যায় সাগর শুকিয়ে যায়, তাই হলো, নবীন বরণে সাদিয়া তার বান্ধবীদের পরিবর্তে নিজের বড় বোনকে সাথে নিয়ে আসে। সিনিয়র ভাইদের মন জয় করে যে কয়টা চেয়ার সংরক্ষণ করে রেখেছিল সুজন, মনের দুঃখে চেয়ার গুলো বেদখল করে দিয়ে মনে মনে গাইতে লাগলো আমার মত এত সুখী নয়ত কারো জীবন। সাদা ইউনিফর্ম পড়ে সাদিয়া রোজ ক্লাসে আসতো। চুল গুলো দুইবেণী করে রাখত, এত অপরুপ লাগত সাদিয়াকে,সুজন চোখ সারাতেই পারতো না।ডানপিটে স্বাভাবের সুজন থেমে থাকার পাত্র নয়, যে করেই হউক সাদিয়ার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শুনতেই হবে।সুজন মেসের বড় ভাই হাবিব মিয়ার সাথে সব শেয়ার করলো। হাবিব মিয়া একটা জটিল বুদ্ধি আটে, সাদিয়ার সব বন্ধু বান্ধবীদের সাথে সুজনকে বন্ধুত্ব করতে বলে, সবার এত ভালো ভাবে মিশতে হবে, সবাই যেন তোমার গল্পই করে, সবার মুখে তোমার প্রশংসা শুনতে শুনতে সাদিয়ার মনে দুর্বলতা আসবে এবং ক্লাসে কোচিং এ ভালো ছাত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। আইডিয়াটা মনে ধরে সুজনের কারণ ছাত্র হিসেবে সুজন খারাপ না। সব সময় ক্লাসে সেরা ছাত্রদের মধ্যে অন্যতমই ছিল সুজন। সাদিয়া কোন কোচিং সেন্টারে পড়ে এসব খোঁজ নিয়ে সুজনও ভর্তি হয়ে গেল সাদিয়ার ব্যাচে। আস্তে আস্তে তাদের দুজনের বন্ধুত্ব হলো। কোচিং ক্লাসে, কলেজ ক্যাম্পাসে, রাস্তায় দেখা হলে কুশল বিনিময় বাড়তে থাকে। কিন্ত প্রেম আর হচ্ছে না। নায়ক নায়িকার প্রেম না হলেও এরমধ্যে আগমন ঘটে খল নায়িকার, সাদিয়ার বান্ধবী ইমু। ইমু সুজনের প্রেমে পড়ে গেল, সুজন ইমুর রসায়ন খুব চলছে, আনন্দের সাথে গোপনে প্রচারণা চালাচ্ছে ইমু অথচ এই ব্যাপারে সুজন কিছুই জানে না। যখন সুজন জানতে পারলো, মনে মনে ভাবল, ক্লাসে দুইশত ছাত্রী প্রায়, প্রেমে পড়বি বাকিরা পড়তি ইমু কেন?? সাদিয়ার বান্ধুবীই প্রেমে পড়লি?? সমস্যার সমাধান তো করতেই হবে, সুজন ইমুকে সব কিছু বুঝিয়ে বলে নিজে প্রেমে না পড়ে সুজন সাদিয়ার পূর্ণদর্ঘ্য প্রেম কাহিনি এগিয়ে নিয়ে সাহায্য প্রত্যাশা করে।কিন্তু ইমুর ষড়যন্ত্রে সুজন সাদিয়া দূরে দূরে যায় সরে.. সুজন করুন সুরে গাইতে শুরু করে, “আজ দুজনার দুটি পথ অগো দুটি দিকে গেছে বেকে”। ভাঙা গড়ার প্রতিযোগিতায় কখন যে দুজন দুজনতে বিলীন হয়ে গেছে তা বলা মুশকিল। তাদের রয়েছে অসংখ্য স্মৃতি। কিছু স্মৃতি আনন্দের কিছু বেদনার। কিন্তু আজ এই আনন্দের দিনে সুজনের মনে শুধু বেদনার স্মৃতি মনে পড়ছে। তখন দুজনেই অনার্সে পড়ে, একদা মনে হলো তাদের ইন্টারমিডিয়েট কলেজে যাবে তাদের পুরনো স্মৃতি মন্থন হবে। তারিখ নিরধারিত হলো, সাদিয়া গ্রামেই ছিল সুজন ক্লাস ফাকি দিয়ে ঢাকা থেকে নরসিংদী আসে, সারাদিন ঘুরাঘুরি আনন্দের পর বিকেলে যে যার নীড়ে ফিরবে। সুজন সাদিয়াকে রিক্সায় তোলে দিয়ে নিজে লেগুনা ধরে বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা হলো। সুজন ভালোভাবে ঢাকায় ফিরলেও মাখপথে এক্সিডেন্ট করে পা ভেঙে ফেলে সাদিয়া। সাদিয়া বেশ কয়েকবার ফোন করলেও সুজনের সংযোগ পায়নি। রাতে সাদিয়ার এক্সিডেন্টের খবরে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা হলো। এদিকে সুজনের সাথে দেখা করতে এসে পা ভেঙে বাড়ি ফিরেছে সাদিয়া, এই কথা পরিবারের সবাই জেনে গেছে। তাই কেউ সাদিয়ার প্রতি যত্নশীল না, সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলেও বড় দুলাভাই সাদিয়াকে ঢাকা নিয়ে আসে।খুদে বার্তার মাধ্যমে সাদিয়া সুজনকে জানায় ঢাকার ব্যয়বহুল একটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। সে যেন সাদিয়াকে দেখতে যায় কিন্তু এমনভাবে যেতে হবে তার পরিবারের কেউ যেন না বুঝতে পারে। যে হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছে সুজন জীবনেও যায়নি কোনদিন। গুগল মানচিত্রের সাহায্যে নির্ধারিত দিনে সকালেই হাজির হয় সুজন।কথা ছিল গেইট দিয়ে যাওয়ার সময় অথবা হাসপাতাল থেকে সাদিয়া বের হওয়ার সময় শুধু দুজন দুজনকে দেখবে কিন্তু কোন কথা হবে না। সকাল নয়টা থেকে বিকেল তিনটা অবধি এপোলো হাসপাতালের গেইটে

    বাংলাদেশ সময়: ৭:১৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আজ বিজয়া দশমী

    ২৬ অক্টোবর ২০২০

    পরম শ্রদ্ধেয় বাবার স্মরণে

    ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

    আর্কাইভ