শুক্রবার ১১ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

শারদীয় উৎসবের আজ মহাষ্টমী, ঢাকায় হচ্ছে না কুমারীপূজা

  |   শনিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২০   |   প্রিন্ট

শারদীয় উৎসবের আজ মহাষ্টমী, ঢাকায় হচ্ছে না কুমারীপূজা

শান্ত বণিক, বিশেষ প্রতিনিধি: শুরু হয়েছে দুর্গাপূজা। আজ (শনিবার, ২৪ অক্টোবর) মহাষ্টমী। শারদীয় দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিন। এবার করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে রাজধানী ঢাকায় কোনো মণ্ডপে কুমারীপূজা উদযাপন করা হচ্ছে না। তবে ঢাকার বাইরে কয়েকটি জায়গায় কুমারীপূজা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত।

এদিকে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছরের মহাষ্টমীর সকালটা অন্যরকম৷ আকাশে জমেছে কালো মেঘ৷ সকাল থেকেই বৃষ্টি৷ ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনায় বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা।

ষষ্ঠীতে দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধে খড়গ-কৃপাণ, চক্র-গদা, তীর-ধনুক আর ত্রিশুল হাতে হাজারো মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তবে করোনা সংকটে এই প্রথম দুর্গাপূজায় থাকছে না কোনো উৎসবের আমেজ। ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী শাস্ত্রিয় পূজা ছাড়া সব আনুষ্ঠানকতা বন্ধ করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটি।

শুক্রবার সকাল থেকে মহাসপ্তমী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দেবী দুর্গার প্রতিবিম্ব আয়নায় ফেলে বিশেষ ধর্মীয় রীতিতে স্নান সেরে, বস্ত্র ও নানা উপাচারে সজ্জিত করা হয়। এরপর ত্রিনয়না দেবীর তৃতীয় চক্ষুদান করা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন শেষে দেবীর মহাসপ্তমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পূজার প্রথম অঞ্জলি দেয়া হয়।

উপোস থেকে মায়ের পায়ে অঞ্জলি দিয়ে দিন শুরু করেন ভক্তরা। অঞ্জলি দিতে দেবী দুর্গার সামনে ফুল-বেলপাতা দুই হাতের মুঠোয় আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়েছিলেন অনেক ভক্ত। এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবে মহাসপ্তমীর দিনে প্রথম অঞ্জলি দেয়া হয়।

অষ্টমীর দিন সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে মায়ের পুষ্পাঞ্জলি সরাসরি সম্প্রচার করবে কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল। একই সময়ে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির নামের ফেইসবুক পেজ থেকে মায়ের পুষ্পাঞ্জলি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। বাড়িতে বসেই এবার ভক্তদের মায়ের চরণে অঞ্জলি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে।

আজ সকাল ৫টা ১৬ মিনিটের মধ্যে দুর্গা দেবীর মহাষ্টম্যাদিবিহিত পূজা প্রশস্তা ও মহাষ্টমীর ব্রতবাস শুরু হয়। সকাল ৬টা ৩৫ থেকে ৭টা ২৩ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা। মহাষ্টমীর মূল আকর্ষণ ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনসহ অন্যান্য স্থানে এবার কুমারীপূজা হবে না।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি গণমাধ্যমকে বলেন, অষ্টমী ও নবমী পূজার দিন সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে মায়ের পুষ্পাঞ্জলি সরাসরি সম্প্রচার করবে কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল। একই সময়ে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির নামের ফেইসবুক পেজ থেকে মায়ের পুষ্পাঞ্জলি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। বাড়িতে বসেই এবার ভক্তরা মায়ের চরণে অঞ্জলি দেবেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বলেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে এ বছর ঢাকায় কোনো মণ্ডপে কুমারীপূজা উদযাপন করা হচ্ছে না। তবে ঢাকার বাইরে কয়েকটি জায়গায় কুমারীপূজা হতে পারে।

বুধবার (২১ অক্টোবর) বোধনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার ঢাকে পড়ে কাঠি। দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনাপূজার মধ্য দিয়ে দেবীর বোধন হয়। বুধবার পঞ্চমী তিথিতে সায়ংকালে অর্থাৎ সন্ধ্যায় এই বন্দনাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে সূচনা হয়েছিল দেবীপক্ষের। প্রতি বছর দেবীপক্ষের শুরুর সপ্তাহবাদে দুর্গাপূজা শুরু হলেও ‘মল মাস’ বা ‘অশুভ মাসের’ কারণে এবার দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে মহালয়ার ৩৫ দিন পার করে।

পঞ্জিকা মতে, ২০২০ সালে মা দুর্গার আগমন হচ্ছে দোলায়। দোলায় চড়ে বাপের বাড়ির উদ্দেশে স্বামীর ঘর থেকে রওনা দেবেন তিনি। ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, দোলায় আগমন এর অর্থ মড়ক। ফলে পূজার বা তার পরবর্তী সময়েও মহামারির পরিস্থিতি বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মায়ের গমন এবার গজে। অর্থাৎ হাতিতে চড়ে মা বাপের ঘর ছেড়ে পাড়ি দেবেন স্বর্গে। গজে চড়ে গমনের ফল শুভ হয়।

তবে এই বছরের পূজা অন্যান্য বছরের মতো নয়। করোনা আতঙ্কের আবহেই এবার দেবীপক্ষের সূচনা হয়। আর মহামারির দুর্যোগ মাথায় নিয়েই এবার হচ্ছে মাতৃবন্দনা।

এবার সারাদেশে ৩০ হাজার ২২৫টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুর্গাপূজা। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ২৩৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিলো ২৩৭টি। ঢাকা বিভাগে সাত হাজার ১৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর অনুষ্ঠিত হয়েছিল সাত হাজার ২৭১টি মন্দিরে। গত বছরের তুলনায় চট্টগ্রাম বিভাগে এবার ৫৫০টি কম মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এ বিভাগে এবার পূজা অনুষ্ঠিত হবে তিন হাজার ৯০৬টি।

খুলনা বিভাগে চার হাজার ৬৮৯টি, সিলেট বিভাগে দুই হাজার ৬৪৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে এক হাজার ৫৮৪টি, বরিশাল বিভাগে এক হাজার ৭০১টি, রংপুর বিভাগে পাঁচ হাজার ২৫০টি এবং রাজশাহী বিভাগে তিন হাজার ৪৩৫টি মণ্ডপে এবার দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

করোনাভাইরাসের কারণে এবার পূজার অনুষ্ঠানমালা শুধু ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে মন্দির বা মণ্ডপ প্রাঙ্গণে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পূজামণ্ডপে যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের গাইডলাইন অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। মণ্ডপ ও ভক্ত পুজারিদের নিরাপত্তায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

Facebook Comments Box

Posted ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২০

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আজ বিজয়া দশমী
(934 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১০ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com