| রবিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২০ | প্রিন্ট
শান্ত বণিক, বিশেষ প্রতিনিধি: কল্পারম্ভ আর সন্ধিপূজার মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে সনাতম ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার তৃতীয় দিন ‘মহাঅষ্টমী। সকালে ষোড়শ উপাচারে অনুষ্ঠিত হয় দেবীর পূজা। ১০৮ পদ্ম এবং প্রদীপ দিয়ে দুর্গতিনাশিনী দুর্গার আরাধনা করা হয়। বেশিরভাগ ভক্ত এবার অঞ্জলি নিয়েছেন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছু দর্শনার্থী অবশ্য মন্দিরে উপস্থিত হয়ে ভোগ নিবেদন আর উপবাসে অঞ্জলি গ্রহণ করেছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার রাজধানীর কোন মন্দিরে কুমারী পূজার আয়োজন হয়নি। তবে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাঁচদিনব্যাপী শুরু হওয়া সার্বজনীন উৎসবের আজ মহানবমী। মন্ডপে মন্ডপে বাজবে বিদায়ের সুর। সোমবার দশমী শেষে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে উৎসবের।
করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক আর কার্তিকের নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টির কারণে এবারের উৎসবের আনন্দ অনেকটাই ম্লান করেছে। প্রাণঘাতী ভাইরাসের কারণে এবারের পূজায় বেচাকেনাও হয়েছে অনেক কম। খুব একটা ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি দোকানপাট ও শপিংমলগুলোতে। অনেকেই অর্থনৈতিক টানাপড়ের মধ্যে গত বছরের পোশাক দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ কেনাকাটা করলেও বাজেটে কাটছাঁট করতে হয়েছে।
ষষ্ঠী থেকে সপ্তমী হয়ে অষ্টমীতেও ছিল বৃষ্টি। দিনভর থেমে থেমে বাদলা হাওয়া মন্ডপে যেতে বাধা সৃষ্টি করেছে। তবুও উৎসব বলে কথা। অনেকেই বৃষ্টির মধ্যে এসেছেন ম-পে। ভোগ দিয়েছেন। মায়ের পায়ে দিয়েছেন পদ্ম। করোনার কারণে এবার পদ্ম ফুলেরও আকাল। দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। তারপরও মিলছে না।
শনিবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, ভক্তদের উপস্থিতি আগের চেয়ে অনেক কম। যারা আসছেন তাদের বেশিরভাগই স্বাস্থ্যবিধি মেনে। তাছাড়া মন্ডপ প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন না থাকায় ভক্তরা দ্রুতই বাড়ি ফিরছেন। অন্য বছরের চেয়ে এবারের আলোকসজ্জাও অনেক কম হয়েছে। কয়েকটি মন্দিরে একেবারেই সীমিত পরিসরে হয়েছে প্রসাদ বিতরণ। আরতিতেও খুব একটা ভিড় দেখা যায়নি।
করোনা মহামারীর কারণে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে এবার সরাসরি টেলিভিশনে এবং ফেসবুকে অঞ্জলি দেয়ার ব্যবস্থার কথা আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। ভক্তদের বাসায় বসেও অঞ্জলি নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এবার অনেক ভক্তই বাসায় বসে অঞ্জলি গ্রহণ করেন।
মহাঅষ্টমীর মূল আকর্ষণ হচ্ছে কুমারী পূজা। সকল নারীর মধ্যে মাতৃরূপ এই উপলব্ধি সবার মধ্যে জাগ্রত করার লক্ষ্যে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে প্রতিবছর এই কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হলেও এবার নির্দেশনার কারণে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়নি।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকানুযায়ী ভোর ৫টা ১৭ মিনিট থেকে সকাল ৭টার মধ্যে দুর্গাদেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা প্রশস্ত। অনেকের বিশ^াস মহানবমীর দিন হচ্ছে দেবী দুর্গাকে প্রাণ ভরে দেখে নেয়ার ক্ষণ। এই দিন অগ্নিকে প্রতীক করে সব দেবদেবীকে আহুতি দেয়া হয়। অগ্নি সব দেবতার যজ্ঞভাগ বহন করে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। এই দিনই দুর্গা পূজার অন্তিম দিন। পরের দিন কেবল বিজয়া ও বিসর্জনের পর্ব।
নবমী নিশিথে উৎসবের রাত শেষ হয়। নবমী রাত তাই বিদায়ের অমোঘ পরোয়ানা নিয়ে হাজির হয়। এ সব বিবেচনা করে অনেকেই মনে করেন নবমীর দিন আধ্যাত্মিকতার চেয়েও অনেক বেশি লোকায়ত ভাবনায় ভাবিত থাকে মন।
করোনা মহামারীর কারণে সংক্রমণ এড়াতে এ বছর বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বিধায় এবারের দুর্গোৎসবকে ‘দুর্গা পূজা’ হিসেবে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ।
সন্ধ্যায় আরতির পরই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে পূজা ম-প। থাকছে না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতা। জনসমাগমের কারণে স্বাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই দুর্গা পূজায় আগেই প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
চন্ডীপাঠ, বোধন এবং দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে বাঙালী শারদীয় দুর্গা পূজা। এবার দেবী এসেছেন দোলায়, যাবেন হাতিতে চড়ে। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সর্বশেষ দেয়া তথ্য অনুসারে, এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার ২শ’ ২৩টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর সারাদেশে দুর্গা পূজার মন্ডপের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। গতবছরের তুলনায় এবার ১ হাজার ১শ’ ৭৫টি মন্ডপে পূজা কম হচ্ছে। অন্য দিকে ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা মন্ডপের সংখ্যা ২শ’ ৩৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২শ’ ৩৭টি। আর ঢাকা জেলায় পূজা হচ্ছে ৭শ’ ৪০টি।
Posted ১২:৪৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২০
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।