ফরিদ আহাম্মদ, অতিরিক্ত সচিব | বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২২ | প্রিন্ট
বাংলাদেশ এখন ধীরে ধীরে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে প্রবেশ করছে। ইতঃমধ্যে ইন্টারনেট অব থিংকিং (আইওটি), আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স (এআই) রোবটিক্স, ক্লাউড কমপিউটিং ইত্যাদি দৈনন্দিন কাজে জায়গা করে নিচ্ছে। হয়তবা আর বেশী দিন বাকি নেই যখন প্রচলিত মুদ্রার বিকল্প হিসেবে “ক্রিপ্টোকারেন্সি” জায়গা করে নিবে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়া বাংলাদেশ
৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে দৃপ্ত পায়ে। ডিজিটাল বাংলাদেশের আর্থসামাজিক রাজনৈতিক ও দৈনন্দিন জীবনের সর্বক্ষেত্রেই এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির ধনাত্বক প্রভাব লক্ষনীয়। কিন্তু মূল্যবোধের সাথে আমরা কতটা এগিয়ে তা ভাবনার বিষয়। একদিকে খুলে যাচ্ছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত অন্যদিকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ। “আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম” গানটি শুনলে আমরা যেন আমাদের ছোট বেলায় ফিরে যাই। মনের অজান্তেই স্মৃতিপটে ভেসে উঠে স্বস্তি, সৌহার্দতা, ভ্রাতৃত্ববোধ সম্পন্ন একটি গ্রামীণ সংস্কৃতির আবহ চিত্র। প্রত্যেক মানুষের কাছেই তাঁর অতীত, শৈশব, কৈশোর কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ব্যতিত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুখস্মৃতি নিয়ে হাজির হয়। প্রাচীন প্রস্তর যুগ থেকে ধাপে ধাপে আমরা রোবটিক যুগে প্রবেশ করছি।
প্রযুক্তির প্রায় সর্বশিখরে আমরা। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার প্রভাব যেমন সমাজের সর্বক্ষেত্রে তেমনি পরিবর্তন আনছে আমাদের জীবনধারায়, চলনে বলনে, কথনে, চিন্তা, চেতনায় ও আচরণে। নব্বই দশক থেকে প্রযুক্তি এবং আমাদের পরিবর্তন দৃশ্যনীয় হচ্ছে অধিক মাত্রায়। বিশেষ করে শেষ একদশকে বেশ চোখে পড়ার মত। সাথে সাথে আমাদের আবেদন, অনুভূতি ও মূল্যবোধগুলোও কেমন যেন দিন দিন ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। এই তো সেই আশির দশকে আমরা স্কুলে পড়া অবস্থায় চিঠি লিখতাম বাবা বা মা’র কাছে। কত কিছুই না লিখেছি। উত্তরের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছি। চিঠি পাওয়ার পর নিজের অজান্তেই হয়তোবা ঝরে পড়েছে দু’ফোটা অশ্রæ। এখন একই ছাদের নীচে বসবাস করেও একে অন্যের সাথে মোবাইল ফোনে চ্যাটিং করে। কাছের দূরের ভাইবোনেরা একসাথে এক জায়গায় হলেও পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার চেয়ে প্রত্যেকের হাতে ডিজিটাল মোবাইলসহ নিজ নিজ ভার্চুয়াল ভূবনে মনোনিবেশেই বেশী ব্যস্ত থাকে। স্কুলে পড়ার সময় লক্ষ্য করেছি বড় ভাইয়া বা আপাদের ক্ষেত্রে প্রেম নিবেদনের ক্ষেত্রেও ছিল একটি সৃজনশীলতা। আজকের প্রেক্ষাপটে বহুল উচ্চারিত “যৌন হয়রানির” বিষয়টিও ছিল না। পত্র লেখার মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সূচনা হলেও শব্দ কথন, সুন্দর হাতের লেখার মাধ্যমে নিবেদন এর আলাদা একটা গুরুত্ব ছিল।
আমার হাতের লেখায় কপি করে গ্রামের বড় ভাইয়ের চিঠি’র পান্ডুলিপি তৈরী করে দেয়া এবং এর বিনিময়ে বড়জোর দুএকটি চকলেট পাওয়ার বিষয়টি আজ গ্রামীণ সংস্কৃতিতে শৈশব কালে হারিয়ে যাওয়া একট টুকরো স্মৃতি। আজকের গ্রামীণ সংস্কৃতিতে “গ্রাম আদালত” প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে হাতের কাছে থানা-পুলিশ-ফাঁড়ি তদন্ত কেন্দ্র অনেক কিছুই হয়েছে। কিন্তু নেই সেই তখনকার শ্রদ্ধাবোধের ও নেতৃত্ব মেনে চলার মুরব্বিয়ানা নিয়ন্ত্রিত শাসন ব্যবস্থা”। গ্রামের ছোট-খাটো অপরাধ নিস্পত্তিতে একচেটিয়া ভূমিকা ছিল মুরব্বিয়ানা গ্রাম প্রধানদের, যার ছিলনা আইনগত ভিত্তি কিন্তু সমাজ সংস্কৃতিতে প্রয়োগ ও মেনে চলার সংস্কৃতি ছিল অমোঘ প্রকৃতির। আজকের গ্রামে লক্ষ্য করা যায় যে, যে কোন ধরনের বিচার আচারে বা সালিশে সেই অমোঘ সিদ্ধান্ত দেয়ার ও মেনে চলার রীতি নেই বললেই চলে। ছোট বড় অনেকেই এখন সিদ্ধান্ত প্রদানের অংশীজন এবং মেনে চলার ক্ষেত্রে অনীহাভাব, যার ফলশ্রæতিতে থানা-পুলিশ-উকিল ও দালাল শ্রেনীর দৌরাত্ব।
স্কুলে পড়ার সময় গ্রামের মুরব্বিয়ানা গ্রাম প্রধানকে দেখেছি লেখাপাড়ায় কম হলেও জ্ঞান-বুদ্ধি ও সিদ্ধান্ত প্রদানে দক্ষহস্ত ও নির্মোহ। ছোট বেলায় গ্রাম প্রধানকে দেখেছি বিচার সালিশে ফৌজদারী ও দেওয়ানী বিষয়ে বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষমতা। স্বশিক্ষিত একজন গ্রাম প্রধানকে জমি-জমার সালিশিতে রেকর্ডপত্র সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান না থাকা স্বত্বেও সেই “দিঘাইল্যা” (সিএস রেকর্ড) আরও পাতাইল্যা (এস এ রেকর্ড) রেকর্ডের সংশ্লিষ্ট তথ্য আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে সবার সম্মুখে কার্যকর সিদ্ধান্ত দেয়ার বিষয়টি মনে রাখার মত। এখনকার গ্রাম সংস্কৃতিতে এটি প্রায় উঠে গেছে। ইত্যবসরে সৃষ্টি হয়েছে মধ্যস্বত্বভোগী নানা শ্রেণীর দালাল গোছের ছোট বড় সিদ্ধান্ত প্রণেতা। ফলে কারও সিদ্ধান্ত কেউ মেনে না নেয়ার প্রবণতাও দৃশ্যনীয়। অথচ ছোটবেলার সেই“দিঘাইল্যা” ও “পাতাইল্যা” রেকর্ড এর সিএস ও এসএ রেকর্ড সম্পর্কে ভাল করে বুঝার জন্য প্রশাসনে চাকুরী নিয়ে ভূমি ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। আশির দশকের শেষের দিকে বাসায় টেলিভিশন আসলো, তাও সাদা কালো। রাত ঠিক দশটায় “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে” মিউজিক বাজার সাথে সাথে পড়া থেকে উঠে আসতাম। সারাদিন যে যেখানেই থাকি না কেন, রাতের খাবার একসাথে। রান্না হতো এক পদের তরকারি। সুতা দিয়ে ডিম নিখুঁতভাবে দু’ভাগ করার দক্ষতা ছিলো মায়েদের, যাতে কারো ভাগেই কম না পড়ে। শেয়ারিং বা স্বার্থহীনতার শিক্ষা ওখান থেকেই। বইখাতা বগলধাবা করে দু কিলোমিটার হেঁটে যেতাম স্কুলে। হয়তবা কখনো শীতের বেলায় পাতিলের “কড়কড়া” ঠান্ডা ভাত দিয়ে নাস্তা করে। পথে বাঁদর আর সাপের খেলা, যাদু দেখা, তাবিজ বিক্রি কিংবা বিলের ধারে দুচারটি মাছ ধরা কোন কিছুই বাদ পড়তো না। স্কুলশেষে দাড়িয়াবান্দা বা ফুটবল খেলে ঘর্মাক্ত আর কর্দমাক্ত শরীরে বাড়ি ফেরা। এখনকার বাচ্চাদেরকে দুইশত গজ দূরে একা পাঠাতেই সন্দিহান থাকেন বাবা
মায়েরা। স্কুলের শিক্ষকরা তখনকার সময়ে যে পরিমান “বেত্রাগাত” দিতেন তা ভুলার নয়। কিন্তু স্নেহও ছিল অকৃত্তিম ও অপরিসীম। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে লুকিয়ে রাখা তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা বা ওয়েস্টার্ণ বইগুলো পড়া কেন জানি একটা অভ্যাসে পরিনত হয়েছিল। এখনকার বাচ্চারা এনে দিলেও পড়তে চায়না কিংবা পাঠ্য পুস্তকের ভাড়েই হারিয়ে থাকে। অবসর যেটুকু পায় মোবাইল-কম্পিউটার বা ট্যাবেই ব্যস্ত থাকে। গ্রামীন সংস্কৃতিতে তখনকার সময়ে অর্থ-বিত্তের অভাব ছিল প্রচুর কিন্তু মনস্তাত্বিক দৈন্যতা ছিল না। কারও বাসায় ভালো কিছু রান্না হলে পাশের বাসায় অবশ্যই এক বাটি চলে যেতো। এটিকে অনেকে মঝা করে বাটি চালানও বলতেন। তাছাড়া দ্রব্য বিনিময়ও চলতো। চালটা, চিনি টা, লবন, তৈল, রসুন, পেয়াজ থেকেশুরু করে কোন কিছুই বাদ যেতো না। আবার সময়মতো ফেরতও দেয়া হতো। অলিখিত একটা নিয়ম ছিলো গাছের ফলের ক্ষেত্রে। ফল যতক্ষন গাছে থাকতো ততক্ষন তা মালিকের।
গাছ থেকে ঝরে পড়া আম, তাল, জলপাই, কামরাঙ্গা, বড়ই যে কেউ কুড়িয়ে নিয়ে যেতে পারতো। এমনকি গাছে কাঠাল পেকে গেলে এটিও আবিস্কার দাতাসহ সবাই মিলে মিশে খেতে কোন বাঁধা ছিল না। আজকাল এগুলো নিয়ে বহু ফ্যাসাদ সৃষ্টি হচ্ছে গ্রামে। খুবই লক্ষ্যনীয় একটি বিষয় হলো, গ্রামে কারো বাড়িতে কেউ মারা গেলে নিশ্চিতভাবে তিন দিন সে বাড়িতে আর চুলো জ্বলতো না। পালা করে
আশেপাশের প্রতিবেশী সকলেই তিন বেলার খাবার তৈরী করে পৌছে দিত। এটির মধ্যে ছিল যেমন পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহানুভূতি প্রকাশ তেমনি ফুটে উঠতো আন্তরিকতা ও মুল্যবোধ, যা প্রায় হারিয়ে গিয়েছে। আমার দাদার বাড়ি নরসিংদীর জেলার মনোহরদী উপজেলার খিদিরপুর
ইউনিয়নে। আমাদের এলাকাটি পান চাষ ও কাঁঠালের জন্য বিখ্যাত। তাই কাঁঠালের সাথে পরিচয় সেই শৈশব কাল থেকেই। যদিও এটি যে অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল তা বুঝার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়াশোনা করতে হয়েছিল। আমাদের গ্রামের এলাকায় ছোট বেলায় দেখেছি কাঁঠাল দিয়ে “জাউভাত” খাওয়া ছিল একটি প্রিয় নাস্তা। বিভিন্ন গাছের কাঁঠাল বিভিন্ন রঙের, বিভিন্ন স্বাদের। আমার বাবার পছন্দ ছিল নরম কাঁঠাল যাকে দেশী ভাষায় বলা হয় “লেটকা”। আমার পছন্দ ছিল শক্ত কাঁঠাল যাকে দেশী ভাষায় বলা হলো “চাউলা” যা দেখতে বেশ ছিমছাম কর্পোরেট ভাব।
ছোট বেলায় দেখেছি কাঁঠাল চুরি করে খাওয়ার মধ্যে একটি রোমাঞ্চকর রোমান্টিকতা আছে। অনেকে কাঁঠাল কেটে পাট ক্ষেতের মধ্যে পুঁতে রাখতো এবং পাকার পর পাটক্ষেতে বসেই বন্ধু বান্ধব মিলে খাওয়া হতো। একটি বিষয় ছিল, কারো গাছে কাঁঠাল পেঁকে গেলে এটি অনেকটা “পাবলিক ইজমেন্ট রাইট” এর মত হয়ে যেতো। যার নজরে আগে আসতো তারাই মিলে মিশে এটি খেতো এবং এটি কোন অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতো না। বরং
একটি অলিখিত সমঝোতার বন্ধনে বহমান সংস্কৃতিতে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। এখন আর এটি নেই। শুধু নেই যে তা নয়, এগুলো নিয়ে এখন মামলা মোকদ্দমা পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। স্মৃতিপটে ভেসে উঠা শৈশব কাল এর স্কুল জীবনের কথা ১৯৭৪-১৯৮০ সময়কালের ভাবনা ও সংস্কৃতির সাথে এখনকার তফাৎটা অনেকটা বেশীই মনে হয়। তখনকার সময়ে গ্রাম বাংলার মানুষের টাকার অভাব ছিল, খাবারের অভাব ছিল, ছিল পোষাক পরিচ্ছদের অভাব। কিন্তু ছিল না মূল্যবোধের অভাব, ছিলনা ভ্রাতৃত্ববোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব, ছিল না ঐক্যবদ্ধ সমাজ ব্যবস্থা ও সংহতির অভাব। ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদেরকে এগিয়ে এনেছে অনেকদুর কিন্তু মনের অজান্তেই ঐগুলো থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে অনেকটাই যা এখন নূতন করে ভাবনার বিষয়। সাংস্কৃতিক বিকাশ আর অগ্রসরতার মাঝে হারিয়ে গেছে ছোট বেলার সেই “কিস্?সা” আর “পুথিপাঠের” আসর।
গ্রামবাসীর তখন অর্থের-বিত্তের অভাব থাকলেও মানসিক দৈন্যতা ছিল না। লক্ষ্য করেছি, ফসল উঠার পরে “মুষ্টিচাল” তুলে পাড়াভিত্তিক পুথিপাঠ আর কিস্?সার আয়োজন করা এবং ছোট বড় সবাই মিলে একসাথে উপভোগ করার আনন্দ। বর্তমানে শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় কোন
সময়েই পতিত কোন জমি থাকে না। ফলে বিকেল বেলা ছেলেমেয়েরা মিলেমিশে পতিত, জমিতে “জামবুরা” দিয়ে ফুটবল খেলা বা “ডাংগুলি” খেলা অথবা “ধারিয়াবান্দা” খেলা একেবারেই হারিয়ে যাচ্ছে। আর সেই জায়গা দখল করে নিচ্ছে মোবাইল চ্যাটিংসহ ভার্চুয়াল জগতে বিচরণ। এমনকি “নানাবিধ” মাদক গ্রাম পর্যায়ে ছেলে মেয়েদের হাতে পৗঁছে যাচ্ছে। যার ফলশ্রæতিতে মুরব্বীদেরকে না মানার সংস্কৃতি এবং যে যার মত অসমন্বিত আচরণ করার বিষয় ক্রমশই দৃশ্যমান হচ্ছে।
একটি বিষয় আজও স্মৃতিতে নাড়া দেয় যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশেষ করে শুস্ক মৌসুমে শীতের সময় কারো বাড়িতে আগুন লাগলে দেখেছি আশে পাশে পাড়ার সকল লোক সময়ক্ষণ বিবেচনায় না নিয়ে কিভাবে যার যা আছে তাই নিয়ে “হুড়মুড়” করে ছুটে যেতেন। স্কুলে পড়ার সময় এখনো মনে আছে এক “লোডা” পানি নিয়ে মধ্যরাতে কিভাবে দৗড়ে গিয়েছি যদিও বা আগুন নিভানোর জন্য ঐ পানিটুকু তেমন কোন কাজেই আসেনি। একজনের বিপদে সবার ঝাপিয়ে পড়ার ও সম্মিলিতভাবে সবার কল্যাণে এগিয়ে আসার যে সংস্কৃতি ছিল সেটিই সকলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার সম্মোহনী শক্তি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মনুষ্য সৃষ্টি দুর্যোগ মোকাবেলায় সারা পৃথিবীতে “রেজিলেন্ট” দেশ হিসেবে ইতঃমধ্যে বাংলাদেশের যে সুখ্যাতি তার মুলেও ছিল সম্ভবত সেই গ্রামীন সংস্কৃতির ছাপ। গ্রামীণ সংস্কৃতিতে অভাবের কোন প্রভাব ছিল না পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ঐক্য, সংহতি ও মূল্যবোধে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে সম্ভাবনার নূতন দিগন্তে এসে হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির উত্তম দিকগুলো বোধ করি এখনো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার দাবী রাখে যা নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সৃজনশীল ভূমিকা রাখতে পারে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে খাপ খাইয়ে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এ ডিজিটাল প্রজন্মেরই কেউবা হবে বড় কম্পিউটার বিজ্ঞানী, কেউ হবে সাকিব-মাশরাফির মত বড় ক্রিকেটার বা বড় কোন ডাক্তার-প্রকৌশলী। কিন্তু আবহমান বাংলার শত বছরের লালিত সংস্কৃতি, মূল্যবোধ বা অনুভূতিগুলো কি তাদের মাঝে থাকবে? তবে প্রত্যাশা একটাই যে যেভাবেই বড় হউক না কেন মনুষত্ববোধ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধটা যেন থাকে সকলের মাঝে অমলিন।
লেখন, ফরিদ আহাম্মদ , প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন
Posted ৪:০৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২২
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।