• শিরোনাম

    নরসিংদীবাসীর প্রতি জেলা প্রশাসকের আহবান: যে যেখানে আছে সামর্থ্যবান মানুষ তারা যেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের জন্য এগিয়ে আসে

    অনলাইন ডেস্ক শনিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২০

    নরসিংদীবাসীর প্রতি জেলা প্রশাসকের আহবান: যে যেখানে আছে সামর্থ্যবান মানুষ তারা যেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের জন্য এগিয়ে আসে

    apps

    শান্ত বণিক, বিশেষ প্রতিনিধি: অটিজম বা অটিস্টিক; বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটি বহুল আলোচিত শব্দ। শহর থেকে গ্রাম-সব জায়গাতেই এখন কম-বেশি মানুষ এই শব্দের সঙ্গে পরিচিত। অটিজম সাধারণত বংশগত বা মানসিক রোগ নয়, এটা স্নায়ুগত বা মনোবিকাশজনিত সমস্যা। এ সমস্যাকে ইংরেজিতে ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার’ বলা হয়ে থাকে। আমাদের সমাজে অনেক ব্যক্তি বা পরিবার রয়েছেন যাদের অটিজমে আক্রান্ত শিশু রয়েছে। এই শিশুরা আমাদের সমাজেরই অংশ। প্রয়োজনীয় পরিচর্যা ও সুযোগ পেলে তারাই পরিণত হবে সম্পদে।

    তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অটিজমকে অনেকেই রোগ বলে অভিহিত করেন। অনেকেই এখনও অটিস্টিক শিশু দেখলে তাদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে থাকেন, তাদের বাবা-মাকে নিয়ে নানাভাবে কুসংস্কারের বলি করা হয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এটা প্রকট! কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বর্তমানে অটিজম নিয়ে বাংলাদেশ তথা বিশ্বজুড়েই নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। সবার মধ্যে বেড়েছে সচেতনতা। বাংলাদেশেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, অটিজম আক্রান্তরা নানাভাবে ভূমিকা রেখে চলেছেন।

    নরসিংদী সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় ২০১০ সালে নরসিংদীর কিছু সমমনা ও সমাজসেবী মানুষদেরকে নিয়ে মো. জসিম উদ্দিন সরকার প্রতিবন্ধী ও অটিজম শিশুদের বিশেষ শিক্ষার কার্যক্রম শুরু করে। তখন নরসিংদী সদরে বা জেলায় কি পরিমান অটিজম শিশু রয়েছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান ছিল না। শহর এবং শহরের বাহিরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জরিপ করে তাঁদেরকে খুজেঁ বের করে ৪৫জন বিশেষ শিশু নিয়ে স্কুলের কার্যক্রম শুরু করা হয়। নরসিংদী সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়টি পরিচালনা করতে গিয়ে নরসিংদী রেলওয়ে স্কুলের একটি পরিত্যক্ত ঘরের দু’চালা রুম ব্যবহার করা হয় তৎকালীন সময়ে। এই বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে স্বীকৃতি লাভ করে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। তাদের মধ্যে অটিজম, ডাউনসিনড্রাম ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু আছে।

    ১১ মার্চ ২০১৮ নরসিংদী জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেছেন সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। ১৯৮৪ সালে নরসিংদী জেলা প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো নারী জেলা প্রশাসক হিসেবে তিনি নরসিংদীতে যোগদান করেছেন। তিনি নরসিংদীর ১৭তম জেলা প্রশাসক। সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক গণপরিষদ সদস্য ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম অ্যাড. সৈয়দ সিরাজুল ইসলামের মেয়ে সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। তিনি এ জেলার মানুষের সকলের প্রাণের জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। মমতাময়ী ও পরিবেদনায় কাতর সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন অত্যন্ত ধর্মপরায়ন একজন মানুষ। তিনি ২০০১ সালে হবিগঞ্জ জেলায় সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের ২০১১-২০১২ অর্থ বছরের কর্মকান্ড মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে দেশ সেরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন কালেই ২০১৮ সালের ১১ মার্চ নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ পান সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। প্রাথমিক শিক্ষায় এ জেলায় ব্যাপক অবদানের জন্য তিনি দেশ সেরা জেলা প্রশাসক হিসেবে ‘জাতীয় শিক্ষা পদক ২০১৮’ এ ভূষিত হন। জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস ২০১৯ উপলক্ষে ‘জনপ্রশাসন পদক-২০১৯’ অর্জণ করেন সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। সৈয়দা ফারহানা কাউনাইনের নিজস্ব চিন্তায় অনন্য ও ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ “কর্মসংস্থান নরসিংদী”র মাধ্যমে এ অঞ্চলের (নরসিংদী জেলার) বেকার যুবকদের চাকুরীর ব্যবস্থা করেন। নরসিংদী জেলাকে বেকারমুক্ত করার প্রয়াসের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত ‘জনপ্রশাসন পদক- ২০১৯’ প্রদান করা হয়। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ পদক প্রদান করেন।

    তিনি যোগদানের পর নরসিংদীর সকল অবহেলিত বিষয়ে কাজ করতে শুরু করেন। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নরসিংদী সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়। তিনি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তার সুদৃষ্টিতে আলোর পথে চলতে শুরু করে সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়।

     

    প্রতিবন্ধীদের সৌজন্যে দোয়া ইফতার মাহফিল: মেঘে ঢাকা আলোকিত ভুবন শীর্ষক ইফতার মাহফিল ২০১৮ সালে প্রতিবন্ধীদের সৌজন্যে নরসিংদী সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ৬শতাধিক প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে ইফতার করেন জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। ইফতার মাহফিলে নরসিংদী সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়, জেলা মুক ও বধির স্কুল, সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্কুল, শিশু কল্যাণ প্রাথমিক স্কুল, হজরত কাবুল শাহ কালেক্টরেট পাবিলক স্কুলসহ জেলার বিভিন্ন প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া নরসিংদী জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বলেন, নরসিংদীতে প্রতিবন্ধী শিশুরা অবহেলিত ছিল। এ প্রতিবন্ধীরা যেন সাধারণ মানুষের মতো অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে সে জন্য কাজ করছে জেলা প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে।

     

    বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জেলা প্রশাসক কর্তৃক ঈদ উপহার: নতুন পোশাকের ঘ্রাণে, ঈদের ছোয়া লাগুক শিশুর প্রাণে এ স্লোগান কে সামনে রেখে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মাঝে ২০১৮ সালে ঈদ উপহার হিসেবে নতুন পোশাক বিতরণ করেছেন নরসিংদীর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। এ সময় তিনি বলেন, আজকের দিনের এই সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের শিশুরাই একদিন মূল ¯্রােতধারার সাথে মিলে এ দেশের সার্বিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। কারণ, তাদের মাঝে লুকায়িত আছে সুপ্ত প্রতিভা। এ প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে হবে।

     

     বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জেলা প্রশাসক কর্তৃক খাদ্য সামগ্রী উপহার: ২০১৮ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৩তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে নরসিংদী জেলা প্রশাসনের তিনদিনের কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে কেক ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী উপহার প্রদান করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে নৃত্য ও বিভিন্ন খেলাধুলার মধ্যে বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করেন। জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন অভিভাবক ও শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা তাদের কারণে বিরক্তবোধ করবেন না। কারণ তারাও আমার আপনার মতো মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে তৈরি হতে পারে। এখানে কেউ বিরক্তির কারণ নয়। এরা ভিন্নভাবে মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি। তাই তাদের আদর, ¯েœহ, সোহাগ ও মমতার পরশে বড় করে তুলতে হবে। তাহলেই তারা দেশের কল্যাণে একদিন অবদান রাখবে।

     

    বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে ২০১৮ সালে জাতির পিতার ৯৯তম জন্মদিন জাতীয় শিশু দিবস পালন: নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন এর একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৯৯তম জন্মদিনে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে ৯৯ পাউন্ডের কেক কেটে ৯৯টি বেলুন উড়িয়ে জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালন করেন।

     

     ২০১৮ সালে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে বিশ্ব অটিজম দিবস পালন:  নরসিংদীতে ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে ১১তম বিশ্ব অটিজম দিবস পালন করেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। এ উপলেক্ষ নরসিংদীতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালি শেষে নরসিংদী সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে জেলা প্রশাসক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।

     

    নরসিংদী সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী অটিস্টিক বিদ্যালয়ে উপহার প্রদান: ২০১৯ সালে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়কে স্কুল ভ্যান, কম্পিউটার, প্রজেক্টর, টেলিভিশন, আসবাবপত্র, তবল সেট ও ৫০জন শিক্ষাথীকে নতুন পোশাক প্রদান করেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন।

     

    নরসিংদী সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী অটিস্টিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বনভোজন: আমরা আছি, আপনি কোথায়, এ স্লোগান কে সামনে রেখে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে নরসিংদী সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের নিয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন মাধবদীর হেরিটেজ রিসোর্টে বনভোজন করেছেন। বনভোজন অনুষ্ঠানে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিকুল ইসলামসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

     

    নরসিংদীর প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে দিনব্যাপি প্রশিক্ষণ: ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট নরসিংদী জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় এবং নরসিংদী সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের আয়োজনে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে নরসিংদী সার্কিট হাউজে দিনব্যাপি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। এ সময় তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের সবার ¯েœহে আজকের প্রতিবন্ধীরা একদিন সম্পদে পরিণত হবে। তাদেরকে সমাজের মুলধারায় সম্পৃক্ত করতে হলে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা যারা মানুষ আমাদের বিবেচনা করতে হবে আমরা প্রথম জন্মগ্রহণ করি মানুষ হিসেবে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে বা হতে পারে-তবে তা ¯্রষ্টার ইচ্ছে। এ জন্য আমরা ব্যক্তিকে কখোনোই অযোগ্য বা অপ্রয়োজনীয় ভাবতে পারি না।

     

    ২০১৯ সালে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে বিশ্ব অটিজম দিবস পালন:  নরসিংদীতে ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে ১২তম বিশ্ব অটিজম দিবস পালন করেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। এ উপলেক্ষ নরসিংদীতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালি শেষে নরসিংদী সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

     

    বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে দোয়া ইফতার মাহফিল: ২০১৮ সালের ন্যায় ২০১৯ সালে প্রতিবন্ধীদের সৌজন্যে নরসিংদী সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ৬শতাধিক প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে ইফতার করেন জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। ইফতার মাহফিলে নরসিংদী সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়, জেলা মুক ও বধির স্কুল, সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্কুল, শিশু কল্যাণ প্রাথমিক স্কুল, হজরত কাবুল শাহ কালেক্টরেট পাবিলক স্কুলসহ জেলার বিভিন্ন প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া নরসিংদী জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

     

    সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী অটিস্টিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণী জুয়েনা জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ে: ২০১৯ সালে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণীর বিবাহোত্তর উষ্ণ সংবর্ধনাকে ঘিরে আলোর ঝলকানি আর বিভিন্ন ফুল দিয়ে সাজানো হয় নরসিংদীর সার্কিট হাউজ। সেই সাথে ভালো খাবারের আয়োজন। সার্কিট হাউজের হলরুমে সেজেগুজে আসে শতাধিক অতিথি। হলরুম জুড়ে মৃদুস্বরে বাজছে সানাই। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণী জুয়েনা ও মনিরের বিবাহোত্তর উষ্ণ সংবর্ধনা ও দোয়া অনুষ্ঠান উপলক্ষে সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের সহযোগিতায় এই সব কিছুই আয়োজন করেছেন জেলা প্রসাশক। এতে উপস্থিত থেকে নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানান জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন ও তার স্বামী পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক  মো. সায়েদুর রহমান। নরসিংদীর সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষার্থী জুয়েনা বেগম (১৮) মধ্যম প্রকৃতির বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। সে নরসিংদী শহরের ভেলানগরের আসাদ মিয়ার মেয়ে। অন্যদিকে জুয়েনার স্বামী মনির হোসেন (২৩) রায়পুরার মরজালের মো. ফরিদ মিয়ার ছেলে, পেশায় স্থানীয় ক্যাবল নেটওয়ার্কের টেকনিশিয়ান। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে উচ্ছ্বল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী জুয়েনাকে  চোখে পড়ে জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইনের। তারপর থেকে তিনি সবসময় জুয়েনার খোঁজখবর নিতেন। তার পরিবারকে একটি ভালো, দায়িত্বশীল এবং কর্মঠ ছেলে খোঁজ করতে বলেন। মনিরের খোঁজ পাওয়ার পর প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বহুবার আলোচনা করিয়েছেন। এরপর গত মাসের ২৫ তারিখ শহরের ভেলানগরে তাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়। জুয়েনা ও মনিরের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে তদারকি করেন জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। এছাড়াও আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমল কুমার ঘোষ, সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এইচ এম জামেরী হাসান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ আলম মিয়া, সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন সরকারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং নবদম্পতির পরিবারের সদস্যরা। বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক তার প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রাপ্তির ২৫ হাজার টাকা নববধূ জুয়েনার হাতে তুলে দেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭০ হাজার ও সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের পক্ষ থেকে ৩০ হাজার টাকা নবদম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত সকলের স্নেহভরা ভালবাসায় সিক্ত হন মনির ও জুয়েনা। তাদেরকে শুভেচ্ছা জানান অতিথিরা এবং সবসময় তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

    সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন সরকার জানান, সবসময় প্রাণোচ্ছ্বল আমাদের শিক্ষার্থী এই জুয়েনার শুধুমাত্র বুদ্ধিতেই সমস্যা। জুয়েনার সমস্যা জেনেই ছেলেপক্ষ তাকে মেনে নিয়েছে। তারা এখন ভালোভাবে সংসার করতে পারলেই আমরা খুশি।

     

    সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী অটিস্টিক বিদ্যালয়ে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের মাঝে বই বিতরণ: ২০২০ সালে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের মাঝে শীতবস্ত্র ও বই বিতরণ করেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।

     

    সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী অটিস্টিক বিদ্যালয়ে দরিদ্র শিশুদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ: ২০২০ সালে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন নিজ হাতে সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন দরিদ্র শিশুদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করেন। এ সময় দরিদ্র শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়।

     

    করোনাকালীন সময়ে খাদ্য সামগ্রী: কোভিড-১৯ বৈশি^ক পরিস্থিতিতে নরসিংদী সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের ২৪টি পরিবারের মধ্যে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। পরবর্তীতে আরো ২ দফায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন সরকারের মাধ্যমে ২৪টি পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

     

     বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার প্রদান: ২০২০ সালে জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন এর বিশেষ উদ্যোগে জেলার ১৭৫টি পরিবারের মাঝে ৮/১০ প্রকারের খাদ্য সামগ্রী ঈদ উপহার হিসেবে প্রদান করেন। করোনাকালীন সময়ে জেলা প্রশাসকের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে সর্বমহল থেকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

     

    জেলা প্রশাসক বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বলেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা যেন কোনভাবেই বঞ্চিত না হয় তা আমরা সবচেয়ে আগে নিশ্চিত করেছি। আমাদের নরসিংদীর যারা সামর্থ্যবান ব্যক্তিবর্গ আছে যখনই তারা কোন একটি বিষয়ে কাজ করা কিংবা অনুদান দিতে চেয়েছে আমি তাদের তখনই বলেছি যেন প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের জন্য দেয়া হয়। আমাদের নরসিংদীতে একটি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র রয়েছে। এখানে এসে প্রতিবন্ধীদের সেবা নিতে হয়। আমি গত বছর জাতীয় প্রতিবন্ধী ও আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসকে কেন্দ্র করে আবশ্যিক ভাবে সকল উপজেলায় নিয়মিত জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় মোবাইল টিমের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের সেবার সু ব্যবস্থা করেছি। তবে কোভিডের কারণে সেবার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটেছে। এছাড়া আমি পদাধিকার বলে নরসিংদী সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে কোভিডকালীন সময়ে এ প্রতিষ্ঠানটির পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যারা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ও পিছিয়ে পরা সমাজের মানুষ আমরা তাদের জন্য জেলা প্রশাসনের নিজস্ব তহবিল থেকে কোভিডকালীন ৩/৪ মাস খাদ্য সামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। এছাড়া নরসিংদী জেলার সকল প্রতিবন্ধী স্কুলগুলোকে একটি ছাতার নিচে এনে সকল সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এ জন্য রেলওয়ের অধিগ্রহণকৃত ৫০ শতাংশ জমি অনুমোদনের জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তাব দিয়েছি। বরাদ্দকৃত কাজের অগ্রগতি হয়েছে তবে এখনো পর্যন্ত কোন ফাইনাল সিদ্ধান্ত পাইনি। তারপরও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে একটি ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করার। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সকল শিশুরা এক জায়গার মধ্যেই লেখাপড়া, হোস্টেল ফ্যাসিলিটি, মা-বাবা ও শিক্ষকদের ট্রেনিং, খেলাধুলার ফ্যাসিলিটি সহ সব ধরণের সুযোগ সুবিধা একটি ছাতার মধ্যেই হবে। তিনি আরো বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য যখন যে কোন অবস্থায় ইনফরমেশন পেলে এ বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করে থাকি। আমি মনে করি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শুধু শিশু নয় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ ও অনগ্রসরজাতি যারা আছে তাদের জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই যার যার অবস্থান থেকে কথা বলা উচিত। নরসিংদীবাসীর প্রতি আমার বিশেষ একটি আহবান রইল যে যেখানে আছি সামর্থ্যবান মানুষ তারা যাতে মানসিক বা শারীরিক ভাবে পিছিয়ে পরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এই মানুষের জন্য এগিয়ে আসে। এছাড়া যেটা আমাকে বলা উচিত কিংবা সরকারের নজরে দেয়া উচিত তা আমাকে জানালে আমি অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নিব। এছাড়া বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের যদি চিকিৎসা দেয়ার বিষয় থাকে আমরা তা তাৎক্ষণিক ভাবে দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকি। এসব সেবা আমাদের চলমান প্রক্রিয়া। উদাহরণ স্বরূপ যদি বলি, কয়েকমাস আগে তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বাংলাদেশ জাতীয় হুইল চেয়ার ক্রিকেটার আল-আমিনকে তার পায়ের অপারেশনসহ সু-চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বুকে লালন করে প্রতিটি দিনই আমার কাছে একেকটা দিবস বলে মনে হয়। আমি মনে করি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাবো।

    বাংলাদেশ সময়: ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২০

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আজ বিজয়া দশমী

    ২৬ অক্টোবর ২০২০

    পরম শ্রদ্ধেয় বাবার স্মরণে

    ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

    আর্কাইভ