বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

মনপুরা সরকারি বরাদ্দের চাল না পাওয়া জেলেদের আর্তনাদ!

আলী হোসেন রুবেল, স্টাফ রিপোর্টার ভোলা:   |   শুক্রবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৩   |   প্রিন্ট

মনপুরা সরকারি বরাদ্দের চাল না পাওয়া জেলেদের আর্তনাদ!

এক বেলা খাই, দুই বেলা উপাস থাইক্যা কোনরহমে নিষেধাজ্ঞার সময়ডা কাডাই। দুইবেলা উপাস থাকলেও কেউ রাহে না আমাগো খবর। সরকারি বরাদ্দের চাউল আমাগো লইগ্যা সোনার হরিণ। সরকারের চাউল পাওন্যা কপাল আমাগো নাই। হেলে অনেক জেলে চাউল পাইছে আমরা পাইলাম ক্যান? কই কোন চেয়ারম্যান তো আমাগো খবর লইলো না। চেয়ারম্যানগো ধারে গেলে হেরা যেন আমগোরে চিনেই না। বলে বরাদ্দ অ্যাউক হেরপরে তোগেরে খবর দিলে আইছ। সরকারি বরাদ্দের চাউল পাইনাই দেইখ্যা কি হইছে? আমরা কি মইরা গেছি? যেরা পাইছে অয়তো হেরা উট্টু ভালা আছিল। হেগো সময়ডা ভালা গেছে। আমরা নাইলে এট্টু কষ্টে কাডায়ছি। এইতো আর দই একটা দিন পরে নিষেধাজ্ঞ থাকবো না। আশা করি হে সুম আমরা মাছ ধইরা আমাগো কষ্ট দূর করমু। লাগবোনা আমাগো কোন সরকারি সাহায্য। আল্লায় যদি নদীতে মাছ দেয়, হেলে আমাগো এনজিওর টেহাও শোধ অইবো, আমরাও আগের মতো কইরা চলতো পারমু। এমনিভাবে বুকে চাপা কষ্ট,আর আর্তনাদের সাথে কথাগুলো বলছিলেন,ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা ইউনিয়নের জেলে বাছেত, কামাল, সুমন দে, হাজিরহাট ইউনিয়নের জেলে ফারুক, কালু, আজগর, জসিম, উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের জেলে, ভুট্রো মাঝি, খালেক মাঝি, রফিক মাঝি, দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের জেলে, ফারুক, কামাল, সাধন, জাহাঙ্গীর প্রমুখসহ শতাধিক জেলে। তারা অভিযোগ করে জানান, নিষেধাজ্ঞা থাকায় নদীতে মাছ ধরতে পারছেনা। আয় না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধহারে-অনাহারে দিন কাটছে। এদিকে সরকার নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের যেই চাউল দেয় তা স্থানীয় প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা না দিয়ে বিক্রি করছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ বরাদ্ধকৃত চাউল দেওয়ার ও দাবী জানিয়েছেন।

সরকারি নিষেধাজ্ঞায় নদীতে মাছ ধরতে যেতে পারছেনা, অপরদিকে মানবিক সহায়তার আওতায় জেলেদের ভাগ্যে জুটেনি সরকারি বরাদ্ধের চাউল। এতে অর্ধহারে-অনাহারে অমানবিক দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে ভোলার বিচ্ছিন্ন মনপুরা উপকূলের চার হাজার জেলে পরিবারের সদস্যরা।

এছাড়াও ধার-দেনা করে ইলিশ মৌসুমে নদীতে গিয়েও কাঙ্খিত মাছ না পাওয়ায় পূর্বে ধার-দেনা শোধ করতে পারেনি। তাই নতুন করে কেউ ধার দিচ্ছে না। তাই সংসার চালাতে সরকারি মানবিক সহায়তার আওতায় চাউল দাবী করছে জেলেরা। পাশাপাশি বরাদ্ধকৃত চাউল না পাওয়ায় অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে।

এদিকে জেলেরা চাউল না পাওয়ার অভিযোগের বিষয়টি সত্য নয় বলে জানান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন। তিনি জানান মনপুরা উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যার চেয়ে কম পাওয়ায় সকল জেলেকে চাউল দেওয়া সম্ভব হয়নি। একইভাবে বলেন গুরুত্বর অভিযোগ ওঠা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, মনপুরা উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্য ১৪ হাজার ৩ শত ৪৭ জন। সরকার বরাদ্ধ দিয়েছে ১০ হাজার ৫ শত জেলের জন্য ২৫ কেজি করে ২ শত ৬২ মেট্রিক টন। এতে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মধ্যে ১ নং মনপুরা ইউনিয়নের নিবন্ধিত ২ হাজার ৫ শত ৩৫ জন জেলের বিপরীতে ১ হাজার ৯ শত জেলেকে ২৫ কেজি করে ৪৭.৫ মেট্রিক টন চাউল, ২ নং হাজিরহাট ইউনিয়নের নিবন্ধিত ৪ হাজার ৭ শত ২২ জেলের বিপরীতে ৩ হাজার ৪ শত ৪০ জন জেলের ২৫ কেজি করে ৮৬ মেট্রিক টন চাউল, ৩ নং উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের নিবন্ধিত জেলে ৩ হাজার ৬৬ জন জেলের বিপরীতে ২ হাজার ২ শত ৪০ জন জেলের ২৫ কেজি করে ৫৬ টন চাউল ও ৪ নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নে ৪ হাজার ২৪ জন জেলের বিপরীতে ২ হাজার ৯ শত ২০ জন জেলের ২৫ কেজি করে ৭৩ টন চাউল বরাদ্ধ দেওয়া হয়।

এই ব্যাপারে উপজেলার সদর হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদার জানান, আমার ইউনিয়নে নিবন্ধিত চার হাজার সাতশত বাইশ জেলের বিপরীতে বরাদ্ধ পাওয়া তিন হাজার চারশত চল্লিশ জেলের প্রত্যেককে ২৫ কেজি করে মেফে বিতরন করেন ইউএনও, মৎস্য কর্মকর্তা ও ট্যাগ অফিসার। বরাদ্ধ না পাওয়া জেলেদের চাল না পাওয়ায় বিতরন করতে পারেনি। তাই তারা অভিযোগ করছে। বরাদ্ধ পেলে বিতরন করা হবে।

জেলেদের অভিযোগের ব্যাপারে উপজেলার অপর ৩টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জানান, জেলেদের অভিযোগ সত্য নয়। নিবন্ধিত জেলের চেয়ে কম বরাদ্ধ পাওয়া সবাইকে চাউল দেওয়া সম্ভব হয়নি। সরকারিভাবে ফের বরাদ্ধ আসলে যারা পায়নি তাদের দেওয়া হবে।

এই ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন জানান, জেলেদের অভিযোগ সত্য নয়। উপজেলার নিবন্ধিত জেলে ১৪ হাজার ৩ শত ৪৭ জন জেলের বিপরীতে সরকারীভাবে বরাদ্ধ এসেছে ১০ হাজার ৫শত জেলের। বরাদ্ধ আসা সব জেলের মধ্যে চাউল বিতরন করা হয়েছে। তবে নিবন্ধিত জেলের মধ্যে তিন হাজার আটশত সাঁতচল্লিশ জেলের সরকারি চাউল না আসায় দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই তারা অভিযোগ করছে।

এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহিরুল ইসলাম জানান, জেলেদের জন্য সরকারী বরাদ্ধের চাউল মৎস্য কর্মকর্তা, ট্যাগ অফিসারকে সাথে নিয়ে বিতরনের কাজ শেষ করেছি। তখন কোন জেলে অভিযোগ করেনি।

এদিকে নিবন্ধিত জেলের মধ্যে চার হাজার জেলে সরকারি চাউল না পাওয়ায় তাদের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে, ওই সমস্ত জেলে পরিবার সরকারিভাবে চাউল পেতে উপজেলা প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহন করবে কিনা এমন প্রশ্নে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

Facebook Comments Box

Posted ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৩

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১১ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬, ০২ ৪১০৫০৫৯৮

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins