বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

বিশেষ দিনে খাসির জায়গায় ব্রয়লারের মাংস পেল রোগীরা!

জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ:   |   শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩   |   প্রিন্ট

বিশেষ দিনে খাসির জায়গায় ব্রয়লারের মাংস পেল রোগীরা!

সরকারি নিয়মানুযায়ী বিশেষ দিনে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খাসির মাংসসহ ভালো মানের বিশেষ খাবার পাওয়ার কথা থাকলেও সেই ভালো খাবার জোটেনি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া (সদর) ৩০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের। এ ঘটনায় অন্যের ওপরে দোষ চাপিয়ে দ্বায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন ঠিকাদার ও হাসপাতাল কতৃপক্ষ উভয়েই।

ঈদে মিলাদুন নবী উপলক্ষে বিশেষ দিনে খাসির মাংসের জায়গায় রোগীদের জুটেছে ব্রয়লার মুরগির মাংস। এ ছাড়াও দেওয়ার কথা থাকলেও জোটেনি সবজি, সালাত, বুটের ডাল ও কোনও মিষ্টান্নও। কারন হিসেবে যথাযথ কতৃপক্ষের উদাসীনতাতেই দায়ী করছেন সবাই।

বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঈদে মিলাদুন নবীর দিন দুপুরে উল্লাপাড়া (সদর) ৩০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য। দুপুর দুইটা বেজে গেলেও বিশেষ এইদিনে তখনো দুপুরের খাবার দেওয়া হয়নি রোগীদের। দায়িত্বরত নার্সরা জানান তখনো দুপুরের খাবারের রান্না চলছে।

এসময় রোগীদের কাছে সকালের খাবার সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসপাতালে ভর্তি থাকা উপজেলার উল্লাপাড়া পশ্চিম পাড়ার ৯৪ বছয় বয়সী রজব আলী, পূর্ব দেলুয়া গ্রামের সলিম উল্লাহ ও সোনতলা নতুন পাড়া গ্রামের মো. নজরুল ইসলাম জানান, সকালে পাউরুটি, কলা ও ডিম দেওয়া হয়েছিল। যদিও নিয়মানুযায়ী ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বিশেষ এইদিনে খাবার দেওয়ার কথা রান্না রুটি, ডিম, সুজিসহ উন্নতমানের নাস্তা। তারা এ সব খাবার পাননি। এমনকি তখনো তারা দুপুরের খাবারও পাননি তারা।

দুপুর আড়াইটার দিকে বিশেষ এইদিনের খাবার নিয়ে ওয়ার্ডে আসেন ঠিকাদারের বাবুর্চি আমিনা খাতুন। তিনি তখন বিশেষ দিনের খাবার হিসেবে নিয়ে আসেন এক পিচ করে ব্রয়েলার মুরগির মাংস, পাতলা ডাল ও নিম্নমানের চালের পোলাও। যদিও তালিকায় বিশেষ দিনের খাবার হিসেবে উল্লেখ আছে খাসির মাংস, পোলাও, বুটের ডাল, সবজি ও সালাত।

খাবারের ঠিকাদারের বাবুর্চি আমিনা খাতুন খাবার দেরিতে দেওয়ার বিষয়ে বলেন, প্রথমে মাছ ও ভাত রান্না করা হয়েছিল। পরে ঠিকাদার এসে বলেছেন পোলাও ও মাংস রান্না করে দিতে হবে। পরে ব্রয়েলার মুরগির মাংস ও পোলাও রান্না করতে দেরি হয়ে গেল।

হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক বৃদ্ধার মেয়ে মোছা. ফিরোজা খাতুন বলেন, দুপুরের খাবারে দেওয়া হয়েছে এক পিচ ব্রয়েলারের মাংস, অল্প পরিমাণ পোলাও ও পাতলা ডাল। তিনি বলেন, হাসপাতালে মানুষ বাধ্য হয়ে আসে, তাই তারা যা দিবে তাইতো খেতে হবে।

এ ব্যাপারে খাবারের ঠিকাদার উল্লাপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বিদ্যুৎ ভূইয়া বলেন, আজকে যে বিশেষ দিন ও বিশেষ খাবার দিতে হবে এটা আমি জানতাম না। আমাকে দুপুর পৌনে একটার দিকে হাসপাতালের বড়বাবু (অফিস সহকারী) ফোন দিয়ে বললেন যে আজ বিশেষ খাবার দিতে হবে। কিন্তু সেই মুহুর্তে আমি খাসির মাংস কোথায় পাব? তাই অল্প সময়ে যেটুকু পেরেছি সেটুকুই দিয়েছি।

তিনি কাজ পাওয়া ঠিকাদারি লাইসেন্স এর ব্যাপারে বলেন, মেসার্স আল মাহমুদ এন্টারপ্রাইজ নামে যে লাইসেন্স এর মাধ্যমে কাজটি নেওয়া হয়েছে সেটি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মাহমুদ এর। তার লাইসেন্স দিয়ে কাজটি নিয়ে আমিই এটা পরিচালনা করি। তবে আমরা ছাত্রলীগ করি জন্য ক্ষমতা দেখিয়ে এমনটা করা হয়েছে এটা সত্য নয়।

এ ব্যাপারে আল মাহমুদ এন্টারপ্রাইজ নামে লাইসেন্স এর স্বত্বাধিকারী উল্লাপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মাহমুদ বলেন, আমাদের তারা আগে জানাননি যে আজ বিশেষ দিন এবং ভালো খাবার দিতে হবে। যার ফলে আমরা সেভাবে দিতে পারিনি। পরে যেটুকু সম্ভব হয়েছে সেটুকুই দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া (সদর) ৩০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের অফিস সহকারী মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমি গতকাল সিভিলসার্জন অফিসে মিটিংয়ে ছিলাম। সেখান থেকেও আমাকে কিছু জানানো হয়নি। এ ছাড়াও আমি গতকাল অফিস করলে এমনটা হতোনা।

উপর থেকে কোনও অফিস আদেশ পাননি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আজ বিশেষ দিন ও বিশেষ খাবার দিতে হবে এটা সত্য। কিন্তু আমাকে ওপর থেকে বা আরএমও (আবাসিক মেডিকেল অফিসার) এমন কোনও চিঠি দেননি। পরে জানার পরে ঠিকাদারকে ফোনে জানিয়েছি ও বিশেষ খাবার দিতে বলেছি।

এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া সদর ৩০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আল মামুন বলেন, আমার অফিস সহকারী আমাকে জানয়েছেন এমন কোনও মেইল তিনি পাননি। তবে আজকে বিশেষ খাবার দেওয়ার কথা এটাও সত্য। কিন্তু ভুলবোঝাবুঝির কারনে এটা হয়নি। আমি শনিবারে অফিসে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। তবে ঠিকাদার আমাকে বলেছেন তিনি অল্প সময়ে যেটুকু পেরেছেন সেটুকুই করেছেন।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. রাম পদ রায় এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Facebook Comments Box

Posted ৬:১৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১১ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬, ০২ ৪১০৫০৫৯৮

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins