বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঐতিহাসিক নিদর্শন নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার

সাহেব আলী,নওগাঁ   |   শনিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২৪   |   প্রিন্ট

নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঐতিহাসিক নিদর্শন নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ইউনেস্কো স্বীকৃত ঐতিহাসিক নিদর্শন নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার আধুনিকমানের সড়কের মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। শতবছরের ঐতিহাসিক এই নির্দশন দেশী- বিদেশী পর্যটকদের দর্শনে এতদিন মরণ বাঁকের ঝুঁকিপূর্ন সরু রাস্তা দিয়ে বৌদ্ধবিহারে আসতে হতো। পুরনো আমলের এই ব্যবহার অনুপযোগী রাস্তার পরিবর্তে দ্রুতই প্রস্তাবিত আধুনিকমানের মহাসড়কটির নির্মাণ চায় বৌদ্ধবিহারে আসা পর্যটকরা।

বৌদ্ধবিহারে ঘুরতে আসা পর্যটক রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান সড়ক থেকে পুরনো একটি সরু আড়াই কিলোমিটারের মত যে রাস্তা রয়েছে সেই রাস্তার ঝুঁকিপূর্ণ ৯/১০টি বাঁকের কারণে যানবাহন অনেক দূরে রেখে আমাদের পায়ে হেটে আসতে হলো। সোজা ১টি বড় রাস্তা হলে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আর কোন সমস্যা হবে না। সেই সাথে সরকারের রাজস্ব
বৃদ্ধি পাবে।

ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফজলুল করিম আরজু বলেন নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় বিহার এই পাহাড়পুর। এর আদি নাম সোমপুর বিহার। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এটি মূলত পাল রাজ্যত্বের রাজধানী ও সেই সময়ের বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো। এখানে সে সময় ভিক্ষুরা পড়ালেখা করতো।

এখানে সারা বছর দেশ ও বিদেশ থেকে আগত দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে। এই বিহারটিকে পর্যটকবান্ধব ও আধুনিকায়ন করতে সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা নানাবিধ পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রধান সড়ক থেকে বৌদ্ধবিহারে আসার একটি আধুনিকমানের সড়ক না থাকার প্রতিনিয়তই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পর্যটকদের।

প্রধান সড়ক থেকে পুরনো একটি সরু আড়াই কিলোমিটারের যে রাস্তা রয়েছে সেই রাস্তার ঝুঁকিপূর্ণ ১০টি বাঁকের কারণে বিভিন্ন উৎসবে যানজটের সৃষ্টি হলে যানবাহন অনেক দূরে রেখে পর্যটকদের পায়ে হেটে আসতে হয়। এছাড়া মোড় ঘুরতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে অনেকটাই নিয়মিত। প্রতিনিয়তই এই অনুপযোগি রাস্তার বিষয়ে পর্যটকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেতে হয়। একটি আধুনিক মানের প্রশস্ত সড়কের অভাবে বছরের পর বছর দেশী-বিদেশী পর্যটকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়তই। তাই পর্যটনখাতকে আরো এগিয়ে নিতে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করার বিকল্প নেই।

সেই প্রয়োজনের তাগিদ থেকেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ও নওগাঁ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল হক
স্যারের একান্ত প্রচেস্টায় নির্মাণ হতে যাচ্ছে একটি আধুনিকমানের সংযোগ সড়ক। এই সড়কটি নির্মিত হলে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারটি আরো বিকশিত হবে। দ্বিগুন সংখ্যক পর্যটকদের আগমন ঘটবে এই বৌদ্ধবিহারে আর সরকারের খাতায় যুক্ত হবে অধিক পরিমাণ রাজস্ব এবং নতুন করে চাঙ্গা হয়ে উঠবে স্থানীয় অর্থনীতির চাঁকা। তাই সড়ক নির্মাণের সেই পদক্ষেপের দ্রুত বাস্তবায়ন চায় বৌদ্ধবিহারে আসা শত শত পর্যটকরা।

নওগাঁ সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নূরে আলম সিদ্দিক বলেন ইতিমধ্যই নওগাঁ-জয়পুরহাট মহাসড়ক থেকে বৌদ্ধবিহারে আসার জন্য আধুনিক মানের একটি সড়ক নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। নতুন এই সড়কটি প্রধান সড়ক থেকে বৌদ্ধবিহারের পশ্চিম-উত্তর দিকে যুক্ত হবে। আর এই সড়কের মাধ্যমেই পর্যটকরা বৌদ্ধবিহারের শতাধিক
বছরের আগের প্রধান গেইট দিয়ে প্রবেশ করে দর্শন করবেন এই নিদর্শনটি। নতুন সড়কের সংযোগস্থলে থাকবে পর্যাপ্ত গাড়ি পাকিং এর সুব্যবস্থা, কাফেটোরিয়া, পর্যটকদের চলাচলের জন্য ফুটপাত, মার্কেট, চালকদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা, ভিআইপিদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থাসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সকল কিছুই। ইতিমধ্যই সড়ক নির্মাণের জন্য সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।

নওগাঁ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল হক বলেন এমন ঐতিহাসিক নিদর্শন স্থানে যেতে মরণফাঁদের মতো একটি রাস্তা পার হতে হয় সেটি আমার জানা ছিলো। জীবনের প্রথম বৌদ্ধবিহার দর্শন করতে গিয়ে বিষয়টি আমার নজরে আসে। তখনই আমি বৌদ্ধবিহারে আসার জন্য একটি আধুনিকমানের সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এরপর বিহারের সহকারি পরিচালকের সহযোগিতা নিয়ে ইতিমধ্যই প্রায় ৫শত মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি আধুনিকমানের সড়ক নির্মাণের সকল প্রক্রিয়া শেষ
করেছি। সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের আবেদন জেলা প্রশাসন বরাবর প্রদান করেছি। যত দ্রুত জমি অধিগ্রহণ করা হবে তত দ্রুতই সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করবো। আমি আশাবাদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের মধ্যেই আধুনিক যোগাযোগে ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করতে পারবো ঐতিহাসিক বৌদ্ধবিহারটিকে।

জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা বলেন পর্যটনখাতকে এগিয়ে নিতে হলে আধুনিক মানের টিকসই যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই। আমরা যদি দেশের প্রতিটি ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করতে পারি তাহলে সম্ভাবনাময় পর্যটনখাতটি দেশের জন্য সোনার খনির উৎসের মতো ভ’মিকা রাখতে সক্ষম হবে। আমি আশাবাদি দ্রুতই সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে সড়ক বিভাগকে হস্তান্তর করতে পারবো। এছাড়া এই কাজে সড়ক বিভাগকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

Facebook Comments Box

Posted ৮:১৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২৪

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১১ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬, ০২ ৪১০৫০৫৯৮

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins