বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

দুই সহযোগী সহ অটোরিক্সা ছিনতাই করার লক্ষ্যে বন্ধুকে খুন, আটক ০৩, ছিনতাইকৃত অটোরিক্সা এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার

খন্দকার আমির হোসেন। জেলা প্রতিনিধি:   |   শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   |   প্রিন্ট

দুই সহযোগী সহ অটোরিক্সা ছিনতাই করার লক্ষ্যে বন্ধুকে খুন, আটক ০৩, ছিনতাইকৃত অটোরিক্সা এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার

গত ২২/০২/২০২৩খ্রিঃ তারিখ সকাল ০৯.৪৫ ঘটিকায় নরসিংদী মডেল থানাধীন শীলমান্দি ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামে গনেরগাঁও মাদ্রাসা সংলগ্ন জনৈক জি এম তালেব এর পুকুরের পানিতে গলায় গামছা দিয়ে শক্ত ভাবে বাঁধা, হাত পা কাপড়ের নেকড়া দিয়ে বাঁধা অবস্থায় পানিতে উপুর হয়ে থাকা অজ্ঞাত অনুমান ৪০ বছর বয়স্ক ব্যক্তির লাশ প্রাপ্ত হয়ে নরসিংদী মডেল থানা পুলিশ পানি থেকে লাশ উত্তোলন করে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে। নিহত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন স্থানে পাঁচটি গভীর কাটা জখম পাওয়া যায় এবং গলায় গামছা দিয়ে শক্তভাবে বাঁধার কারনে কালো বাঁধনের চিহ্ন পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে ছুরিকাঘাত ও শ্বাসরোধ জনিত কারনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারনা করা হয়। পুলিশ মৃতের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।

লাশ উদ্ধারের ঘটনার সাথে সাথে মাননীয় পুলিশ সুপার নরসিংদী কাজী আশরাফুল আজীম, পিপিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে তিনি দ্রুততম সময়ে লাশের পরিচয় সনাক্ত সহ ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। তাঁর নির্দেশে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় দ্রুততম সময়ে মৃত ব্যাক্তির পরিচয় মোশারফ হোসেন টুটুল (৪০), পিতা-লাল মিয়া @ লালু, সাং-কির্ত্তুলিয়া, থানা-কাপাসিয়া, জেলা-গাজীপুর মর্মে উদঘাটিত হয়। তিনি খাইলকর ডিপটি মার্কেট (সবুজের বাড়ী), থানা-গাছা, জেলা-গাজীপুর সাকিনে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন এবং একটি ভিবাটেক (মিশুক) চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। লাশের পরিচয় সনাক্ত হলে নিহত টুটুলের ভাই মোঃ আবু হানিফা বাদী হয়ে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে নরসিংদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ, জনাব আবুল কাশেম ভূইয়া, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত)/জনাব মোহাঃ হারুন অর রশিদ, এসআই(নিঃ)/শামীম হোসেন, এসআই(নিঃ)/প্রান কৃষ্ণ অধিকারী সহ একটি চৌকশ টিম গাজীপুর জেলার গাছা, বাসাইল, নরসিংদী জেলার সদর ও মাধবদী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী ১। খোরশেদ আলম (৪৭), পিতা-মৃত নিল মিয়া, সাং-দুয়ানী, থানা-মাধবদী, জেলা-নরসিংদী, ২। মোঃ আব্দুল কাদির (৪৮), পিতা-মৃত আব্দুল মালেক, সাং-দুয়ানী (উত্তরপাড়া), থানা-মাধবদী, জেলা-নরসিংদী, ৩। মোঃ আব্দুল কাদির (৫১), পিতা-মৃত আঃ ছামাদ, সাং-দুয়ানী, থানা-মাধবদী, জেলা-নরসিংদীদের গ্রেফতার করেন এবং তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ছিনতাইকৃত মিশুক, নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করেন। ধৃত আসামীরা ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার কথা অকপটে স্বীকার করে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় উক্ত মিশুক চালক টুটুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু খোরশেদ আলমও একই এলাকায় অটো রিক্সা চালাত। গত ০৮/০৯ মাস পূর্বে খোরশেদ নিজের অটোরিক্সা বিক্রয় করে দেয়। সে প্রায় সময় মোশারফ হোসেন টুটুল এর সাথে ঘুরাফেরা করত। একই মিশুকে ঘুরতে ঘুরতে বন্ধুকে হত্যা করে তার মিশুক ছিনতাই করে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। খোরশেদ সাথে নেয় তার দুই সহযোগী ছোট কাদির ও বড় কাদিরকে।

পরিকল্পনা মতে খোরশেদ ২১/০২/২০২৩খ্রিঃ তারিখ রাত অনুমান ১০.০০ ঘটিকার দিকে গাজীপুর গাছা থানাধীন জীবন মার্কেট থেকে চা খেয়ে টুটুলের মিশুকে করে আরও দুই যাত্রী নিয়ে মীরা বাজার (পুবাইল গাজীপুর) যায়। যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর রাত অনুমান ১১.৩০ ঘটিকার সময় পূর্ব পরিকল্পনা মতে যাত্রীবেশে গাজীপুরের কালীগঞ্জ যাওয়ার জন্য ৮০০ টাকায় বড় কাদির ও ছোট কাদির টুটুলের মিশুক ভাড়া নেয়। টুটুল রাস্তা চিনেনা বললে খোরশেদ বলে “অসুবিধা নেই আমি সব চিনি। যেখানে যেতে বলে ভয় নেই, আমিও সাথে যাব”। এভাবে বন্ধুর প্ররোচনায় টুটুল কালীগঞ্জ এলাকায় আসার পর বলে “আর কতদূর”। তখন তিন হত্যাকারী বলে সামনে আর একটু পর ফায়ার সার্ভিস আছে। এভাবে অভয় প্ররোচনা ও বেশি ভাড়ার প্রলোভন দেখিয়ে – গাছা – পূবাইল – ঘোড়াশাল -পাঁচদোনা – তুলশীপুর – গনেরগাঁও – মদনগঞ্জ রোড হয়ে খৈনমোর্দির মোড় পুলিশ চেকপোষ্ট, মাধবদী পৌঁছে। চেকপোষ্টে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হত্যাকারীরা পুনরায় গনেরগাঁও ফিরে এসে ইং-২২/০২/২০২৩খ্রিঃ তারিখ রাত অনুমান ০১.৩০ ঘটিকার সময় গনেরগাঁও ঈদগাহ্ মাদ্রাসা সংলগ্ন জনৈক জিএম তালেব এর পুকুর পাড়ে আসলে আসামী ছোট কাদির প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিবে বলে মিশুক থামায়। পরে মিশুক থেকে নামার কয়েক মূহুর্ত পরেই পিছন থেকে অকস্মাৎ ফিরে এসে ছোট কাদির পূর্ব পরিকল্পনামতে তার কাছে থাকা ছুরি দিয়ে টুটুলের পিঠে ও কোমড়ে উপুর্যপরি আঘাত করলে টুটুল রাস্তায় পরে যায়। বন্ধু খোরশেদ আলম রাস্তার উপর চেপে ধরে কাপড়ের টুকরা দিয়ে টুটুলের হাত পা বেঁধে ফেলে এবং বড় কাদির গলায় গামছা পেঁচিয়ে টুটুলের শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে। সকল আসামী মিলে টুটুলের লাশ পুকুরে ফেলে মিশুক নিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে মাধবদী বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করে ভোরের আলো ফুটলে পুনরায় গনেরগাঁও ফুলতলা রাস্তা হয়ে মাধবদী বালাপুর হয়ে চর ভাষানিয়া গ্রামে তাইজুদ্দিনের গ্যারেজে মিশুক রেখে গাজীপুর চলে যায়।

সূত্র: নরসিংদী মডেল থানার মামলা নং-৩৯, তারিখ-২৩/০২/২০২৩খ্রিঃ, ধারা-৩৯৪/৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড, ১৮৬০;

Facebook Comments Box

Posted ৮:৩৬ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১১ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬, ০২ ৪১০৫০৫৯৮

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins