
রংপুর ব্যুরো: | শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট
ভোট আইলে হামাক কয় ব্রিজ হইবে। কিন্তুক কোনদিন হইবে তাক কয় না। ভোটের আগে পৌরসভার মেয়র, উপজেলার চেয়ারম্যান সাইব ও বাণিজ্যমন্ত্রীর লোকেরা পর্যন্ত ব্রিজ বানে দিবার ওয়াদা দিচে। কিন্তু আইজ পর্যন্ত হামরা ব্রিজ দেকনো না। হামার কষ্ট কায়ো বুঝিল না। ওই তকনে ভাঙা নড়বড়া বাঁশের সাঁকোয় হামার ভরসা। এভাবেই কথাগুলো বলেন কৃষক আয়নাল হক। ষাটোর্ধ্ব এ ব্যক্তির বাড়ী রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভার বাংলাবাজার গোল্ডেনের ঘাট এলাকায়। সেখানে মরা তিস্তা নদীর উপর রয়েছে একটি পুরোনো বাঁশের সাঁকো। ওই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হন আয়নাল হকের মতো নয় গ্রামের মানুষ। এলাকবাসী বলেন, সব জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার আগে মরা তিস্তা নদীর উপর একটি ব্রীজ নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু
নির্বাচিত হওয়ার পর আর কেউ কথা রাখেনি। কারো প্রতিশ্রুতি আলোর মুখ দেখেনি। ফলে শস্য ভান্ডারখ্যাত বাংলাবাজার গোল্ডেনের ঘাট এলাকায় কৃষি পণ্য পরিবহনে কৃষকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ফলে ফসলের ন্যায় মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। হারাগাছ পৌরসভাসহ ৪ ইউনিয়নের ভিতর দিয়ে তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে গিয়ে মিলিত হয়েছে মরা তিস্তার শাখা নদীটি। বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর বাঁশের সাকোই এলাকাবাসীর ভরসা। শুস্ক মৌসুমে নদীর বুক চিরে পায়ে হেঁটে চলাচল করে এলাকাবাসী। হারাগাছ পৌরসভার গোল্ডেনের ঘাটে একটি টেকসই স্থায়ী ব্রীজ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গোল্ডেন নামে এক ব্যক্তি নৌকা দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, তখন থেকে এর নাম হয় গোল্ডেনের ঘাট। পরবর্তীতে কমিশনার মানিক, ছাবেদ আলী ও তাজুল ইসলামসহ গ্রামবাসীর সহযোগিতায় ২০১৩ সালে নৌকার পরিবর্তে ৩১০ হাত লম্বা বাঁশের সাঁকো তৈরি করে নদী পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়। মোজাহার আলী বলেন, মরা তিস্তা নদীর ওপারে ৫টি বাজার, ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২টি মাদ্রাসা রয়েছে।
ব্রীজ না থাকায় সাধারণ মানুষের যাতায়াতে চরম বিপাকে পড়তে হয়। শিক্ষক আইয়ুব আলী বলেন, ব্রীজ না থাকায় তারা ভারি যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে পারেন না ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে এ বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। শিক্ষার্থী সাঈদা খাতুন বলেন, তাদের খুব কষ্ট হয়। শুকনো মৌসুমে ভয়ভীতি না থাকলেও বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়লে চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। খুব ভয়ে ভয়ে সাঁকো পার হয়। সবাই বলে ব্রীজ হবে কিন্তু হয় না। আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না। কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ব্রীজ না থাকায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রয় করতে বহু দূর ঘুরে বাজারে নিতে হয়। এতে পরিবহণ খরচ বেশি হয়। মজিবর রহমান বলেন, ব্রীজ না থাকায় রাজপুর ইউনিয়নের চিনাতুলি, প্রেমের বাজার, খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের তালপট্রি, হরিণ চড়া, মিলন বাজার, টাংরীর বাজার, হারাগাছ পৌরসভার চরচতুরা, ধুমগাড়া, হারাগাছ ইউনিয়নের পল্লীমারী গ্রামের শিক্ষার্থীসহ প্রায় অর্থ লক্ষাধিক মানুষ পৌরসভা ও
উপজেলা সদরে যাতায়াত করে। এ গ্রামগুলোতে আলু, ভুট্টা, ধান, পাট, গম, মরিচ, বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি উৎপাদন হয়। এসব কৃষি পণ্য হাট-বাজারে নিতে হলে অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়। গোল্ডেনের ঘাটে ব্রীজ নির্মাণ হলে অর্ধেক পথ কমে আসবে এবং এলাকার কৃষকরা পাবে তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ধুমগাড়ায় একটি সভায় গোল্ডেনের ঘাটে ব্রীজ নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু এখনো সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নাই। বর্তমানে সাঁকোটির নড়বড়ে অবস্থা। যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। হারাগাছ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল কাদের রানা সরকার বলেন, গোল্ডেনের ঘাটে একটি ব্রীজ নির্মাণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষের পারাপারের অন্যতম রাস্তা। ব্রীজ নির্মাণের প্রস্তাবনা করা হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ মিললে ব্রীজের কাজ শুরু হতে পারে। কাউন্সিলর মাহাবুবুর রহমান বলেন, জনগণের দুর্ভোগ হচ্ছে এটা তো অস্বীকার করার সুযোগ নেই। গোল্ডেনের ঘাটে ব্রীজ নির্মাণ হবে। এখন শুধু অর্থ বরাদ্দের অপেক্ষায়। হারাগাছ পৌরসভার মেয়র এরশাদুল হকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
Posted ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।