
এম হাবিবুর রহমান শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি | মঙ্গলবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের দরগারচালা গ্রাম।এ গ্রামের শতাধিক পরিবারে হাজারো মানুষের জীবন ও জীবিকা ভেষজ কে ঘিরে। বিভিন্ন ঔষধি গাছের ছাল, বাকল, ফল,মূল,লতা,পাতা শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাতের পর তা বিক্রি করেই চলছে তাদের জীবন। ইতিমধ্যেই এলাকার মানুষের কাছে “ভেষজ ওষুধের গ্রাম” হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে দরগারচালা।
গ্রামটিতে ঘুরে দেখা যায়, বাড়ী বাড়ী ভেষজ নিয়েই নারী পুরুষ সহ পরিববারের সবার ব্যস্ততা। প্রতিটি বাড়ীর আঙিনায় নিমপাতা,ঝাউপাতা,শাপলা, তুলশীপাতা,শজনেপাতা,আমলকী,হরতকী,বহেড়া,পেঁপে,বেলশুট,তাম্বুল,গামাছিলতা, বিন্নারমূল, নিশিন্দা, অর্জুনগাছের ছাল, বাকল ও পাতা রাস্তার পাশে খুলা মাঠে শুকাতে দেওয়া হয়েছে। কিছু ক্ষণ পরপর গৃহিণীরা এসে তা উল্টা-পাল্টা করে শুকাচ্ছেন। কেউ কেউ ডালপালা থেকে পাতা ছাড়ানোর কাজ করছেন, কেউ লতা ও ডাল গুলো ছোট ছোট করে কাটছেন।আবার কেউ কেউ শুকনো লতা পাতা বস্তায় ভরে বাড়িতে নিচ্ছেন। পক্রিয়াজাত করে পরে তুলে দিচ্ছেন পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে। পাইকররা তা সরবরাহ করছেন বিভিন্ন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে।
ভেষজ ব্যবসায়ি মোঃ মনির হোসেন বলেন,আমি বিগত ৩০ বছর ধরে এই ব্যবসায় জীবন ও জীবিকা খুঁজে নিয়েছি। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে এসব ওষধি গাছ,লতা,পাতা,মুল,ফুল, ফল,ছাল, বাকল কেনার পর তা,কেটে ছাঁটাই করে এনে তা রোদে শুকিয়ে বিক্রি করি। আর চাহিদাও অনেক। এ ব্যবসা করে পরিবার নিয়ে ভালো আছি। এ ভেষজের ব্যবসা করেই আমি আমার পাঁচ মেয়ে কে লেখা পড়া করিয়ে ভালো আছি, আমার সংসারের সচ্ছলতা এসেছি।
মনির হোসেনের মেয়ে লামিয়া বাবার কাছে সাহায্য করছিলেন। লামিয়া উপজেলার মিজানুর রহমান খান মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক ১ম বর্ষের মানবিক শাখার শিক্ষার্থী। লামিয়া বলেন, আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার কাছে সাহায্য করি। নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করি। আমরা ৫ বোন, বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। ভেষজ ব্যবসায়া করে আমারা ভালো আছি।
দরগারচালা গ্রামে ভেষজ ব্যবসায়ী মোঃ সুমন মিয়া বলেন, আমরা বাপ দাদা আমল থেকে এ ব্যবসা করে আসিতেছে। এখন আমি নিজেও করছি। বিভিন্ন অঞ্চলে,বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে ঘুরে ঔষধি ভেষজ কিনে আনা হয় । তারপর বাড়ির গৃহিণী, ছেলে মেয়েরা শুকানো ও পক্রিয়া জাতের কাজ করেন। এই গ্রামের অনেক পরিবার এই কাজের সঙ্গে জড়িত । এই ভেষজের কাজ করে জীবিকা উপার্জন করেন। আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হয়েছে।
সুমন আরও বলেন, আমরা যারা এই ভেষজ ব্যবসা করি তাদের সবারই মুলধন কম। যদি আমাদের দিকে সরকার সুদৃষ্টি থাকতো, বা কোন এনজিওর নজরদারি থাকতো। সুদ বিহীন বা সল্প সুদে ঋন পেতাম তাহলে ব্যবসা ও বৃদ্ধি করতে পারতাম।পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো ভাবে চলতে পারতাম।
ভেষজ শুকানো ও পক্রিয়ার কাজ করছেন মেহেরুন, তিনি বলেন আমার ভাগিনা জালাল মিয়া বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘুরে ঘুরে এসব ওষধি গাছ,ছাল,বাকল কিনে আনে। সংসারের কাজের ফাঁকে আমি কেটে উল্টা পাল্টা করে শুকিয়ে দেই। এতে যা মুজুরি পাই নিয়ে সংসার চালাই।
বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেন রফিকুল।তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে শুকনা বেল,তাম্বুল,শুকনা আমলকী কিনে এনে এই দরগারচারা গ্রামে বিক্রি করি তাতে যে পরিমান লাভ হয় তা দিয়েই আমি আমার সংসার চালাই।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বন্যা সময়ের আলোকের বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই ভেষজ উদ্ভিদে নানা উপকারী গুণাগুণ রয়েছে । ভেষজ উদ্ভিদ থেকে নানা ধরনের ওষুধ তৈরি হয়। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে পতিত জমিতে ও বাড়ির আঙ্গিনায় ভেষজ উদ্ভিদ লাগানোর জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন ওষধি গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। ভেষজ ব্যবসায়িদের পক্রিয়া করে কি ভাবে আরো বেশি লাভবান হতে পারবে সে ব্যপারে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
Posted ১০:১৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।