
মোঃ আব্দুস সালাম-চিরিরবন্দর - ( দিনাজপুর ) থেকে | শনিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
বৈচিত্রপূর্ণ ছয়টি ঋতুর দেশ আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। এক একটি ঋতুর রয়েছে এক একটি বৈশিষ্ট্য। ঋতু বৈচিত্রে এখন রাতের শেষে কুয়াশা ও হাল্কা ঠান্ডা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামের রাস্তায় ধারে বাড়ির পাশে গাছে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহের কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। অপরুপ সৌন্দর্যে সকলের মন-মাতিয়ে তুলছে মিষ্টি খেজুর রসের ঘ্রাণ। কাক ডাকা ভোরে রস সংগ্রহ এবং সন্ধ্যায় চলছে গাছ পরিচর্যার কার্যক্রম।
এবার কিছুটা আগেই বিভিন্ন উপজেলায় প্রান্তিক জনপদের গ্রামে গ্রামে সকালের শিশিরের সাথে অনুভুত হচ্ছে মৃদু শীত। ব্যাপকভাবে না হলেও আর মাত্র কয়েক দিন পর রস সংগ্রহ করে তা থেকে লালি ও গুড় তৈরির পর্ব শুরু হয়ে চলবে প্রায় মাঘ মাস পর্যন্ত। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। যারাও করছে তাদের হয় লোকসান।
খেজুর রস ও গুড়ের জন্য উত্তরাঞ্চলের জেলার গুলোর এক সময় খ্যাতি ছিল। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়। বছর দশেক আগেও বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে, ক্ষেতের আইলে, ঝোপঝাড়ের পাশে ও রাস্তার দুই ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। কোন পরিচর্যা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃৃতিক ভাবে বেড়ে উঠতো খেজুর গাছ। যাদের জমির উপরে খেজুর গাছ ছিলো তারা রস দিয়ে পরিবারের খাদ্যঘাটতি পূরণ করতো। সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবে পুকুরের পাড়ে কিংবা রাস্তার ধারে পরিবেশ বান্ধব খেজুর গাছ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার বেশি হওয়ার কারণে অল্প যে পরিমাণ গাছ চোখে পড়ে তাও নির্বিচারে নিধন করায় দিনদিন খেজুর গাছের পরিমাণ কমছেই। এখনও শীতকালে শহর থেকে মানুষ দলে দলে ছুটে আসে গ্রাম বাংলার খেজুর রস খেতে। রস আহরণকারীদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সে সময়ে। অনেকে আবার বাড়িতেই রস জ্বালিয়ে পাতলা লালী, দানা গুড় ও পাটালী তৈরি করতেন। যার সাধ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এখন অবশ্যই একথা নতুন প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্প মনে হলেও তা ছিলো বাস্তব। যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুর গাছ। এই গাছ ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত রস দেয়। এটাই তার বৈশিষ্ট্য। শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। খেজুরের পাতা দিয়ে আর্কষনীয় পাটি তৈরী হয়। শুকনো ডালপালা জ্বালানি কাজেও ব্যবহার করা হয় । কিন্তু জয়বায়ু পরিবর্তন, কালের বির্বতনসহ বন বিভাগের নজরদারী না থাকায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ এখন উপজেলা জুড়েই বিলুপ্তির পথে।
Posted ৭:৩৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২২
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।