বুধবার ১২ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

চুয়াডাঙ্গায় চাষীরা এসিআই ও লালতীর কোম্পানীর কুমড়ার বীজ কিনে প্রায় ৫১ লাখ টাকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ

রিফাত রহমান, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি :   |   বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৩   |   প্রিন্ট

চুয়াডাঙ্গায় চাষীরা এসিআই ও লালতীর কোম্পানীর কুমড়ার বীজ কিনে প্রায় ৫১ লাখ টাকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ

ভরা মৌসুমে কুমড়ার বীজ কিনে প্রায় ৫১ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মোখীন হয়েছেন চুয়াডাঙ্গার কুমড়া চাষীরা। সরকার অনুমোদিত এসিআই ও লালতীর কোম্পানীর কুমড়ার বীজ কিনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষীরা। ওই বীজ জমিতে বপণ করে গাছে কুমড়া না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন তারা। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ চাষীরা বীজ কোম্পানী প্রতিনিধিদের কাছে ধর্না দিয়ে কোন প্রতিকার না পেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে কালক্ষেপনের জন্য চাষীরা দায়ী করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর কৃষি কর্মকর্তাদের। তারা বিষয়টি প্রথমে আমলেই নেয়নি। যখন নিয়েছে তখন চাষীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়াটা আর সম্ভব হয়নি।

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানী চিনিকল খামারের আখ চাষ হয়না এমন পড়ে থাকা জমি বিঘা প্রতি ১০ হাজার ৫০০ টাকা দরে ৬ মাসের জন্য ইজারা নেন কয়েকজন চাষী। সেখানে তারা কুমড়ার চাষ করেন। কুমড়া চাষের কাজে চাষীরা নিজেদের রেখে দেয়া বীজ ও ভাল মানের কোম্পানী বীজ বপণ করে থাকেন। ভাল মানের এসিআই ও লালতীর কোম্পানীর কুমড়া বীজ এবার জমিতে বপণ করে বড় রকমের আর্থিক ক্ষতির সম্মোখীন হয়েছেন কয়েকজন চাষী। বপণের পর জমিতে বড় বড় গাছ হলেও তাতে কুমড়া ধরেনি। চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ী, কোটালী ও ছয়ঘরিয়া গ্রামের চাষীদের প্রায় ১৭০ বিঘা জমিতে এসিআই ও লালতীর কোম্পানীর কুমড়া বীজ বপন করে এ সমস্যায় পড়েছেন চাষীরা। জমি ইজারা ও জমি প্রস্তুতের জন্য চাষাবাদ, সার, কিটনাশক, সেচ ও বীজ বোপন ব্যয় কিভাবে পুষাবেন তা নিয়ে চাষীরা চিন্তিত।

কোটালী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ চাষী জুয়েল রানা জানান, আড়িয়া কৃষি খামারে ৩০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে লালতীর কোম্পানীর বীজ কিনে কুমড়ার চাষ করেছিলেন। এতে তার ব্যয় হয় ৬ লাখ টাকা। ৩০ বিঘা কুমড়া ১২ লাখ টাকায় বিক্রি হলে ব্যয় বাদে ৬ লাখ টাকা তার লাভ হতো। কিন্তু লাভ তো দুরে থাক, আর্থিক ক্ষতি কিভাবে সামলাবেন সেই চিন্তায় তিনি ব্যাস্ত। তিনি আরো জানান, কুমড়া বীজ কেনার জন্য কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও এখন ফোন কলই ধরেনা। তাছাড়া কৃষি বিভাগ এ ব্যাপারটি প্রথমে আমলে নেইনি। প্রায় তিন সপ্তাহ পর তারা ক্ষেত পরিদর্শনে আসে।
আরেক ক্ষতিগ্রস্থ চাষী হিজলগাড়ী গ্রামের সাইফুল আজম মিন্টু বলেন, চলতি মৌসুমে কেরু এ্যান্ড কোম্পানী চিনিকলের আড়িয়া ও ডিহি কৃষি খামারের ৫০ বিঘা জমি ১০ হাজার ৫০০ টাকা দরে ইজারা নিই। ওই জমিতে এসিআই কোম্পানীর কুমড়ার বীজ কিনে এনে বোপণ করি। দু:খজনক হলেও সত্য বীজ থেকে গাছ হলেও তাতে কুমড়া ধরেনি। বিষয়টি কোম্পানীর প্রতিনিধি ও এলাকার দায়িত্বরত কৃষি অফিসারদেকে দেখায়। এতে জমি ইজারা এবং চাষাবাদ বাবদ প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

ছয়ঘরিয়া গ্রামের চাষী শহিদুল ইসলাম শহিদ জানান, কেরুর জমি ইজারা নিয়ে লালতীর কোম্পানীর কুমড়া বীজ ৫০ বিঘা এবং এসিআই কোম্পানীর বীজ ১০ বিঘা জমিতে বপণ করি। গাছ হলেও কুমড়া না ধরায় প্রায় ১২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। বীজ বিক্রির সময় নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
কোটালী গ্রামের চাষী আনিস উদ্দিন বলেন, ৩০ বিঘা কেরুর জমি ইজারা নিয়ে এসিআই ও লালতীর কোম্পানীর কুমড়া বীজ বপণ করলেও গাছে কোন কুমড়া ধরেনি। কোম্পানীর প্রতিনিধিরা এখন আর দেখা করছে না।

চাষীরা অভিযোগ করেন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিন বিনতে আজিজের কাছে কৃষি সম্পর্কিত কিছু জানতে গেলে তিনি বিরক্ত প্রকাশ করেন। তাছাড়া বেশীভাগ দিনই তিনি নানান কারন দেখিয়ে অফিসে বসেন না। অফিসে গিয়ে ফিরে আসতে হয়। কুমড়া বীজ সম্পর্কে তাকে জানালে তিনি যথেষ্ট কালক্ষেপণ করেন এবং চাষীদের দোষ ত্রুটি ধরে তাদের বিরুদ্ধেই অবস্থান নেন। মাঠ পর্যায়ে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে, কোন কারনে সেটার ব্যাঘাত ঘটলে, সেই কারনটির একটি লিখিত ব্যাখ্যা স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বরাবর যাওয়ার কথা থাকলেও সেটা করা হয়নি। যেটা অত্যান্ত আপত্তিকর। চাষীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য এ কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান ভুক্তভোগী চাষীরা।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, কয়েকজন চাষী এসিআই ও লালতীর কুমড়া বীজ বপণ করে কুমড়ার ফলন পায়নি। কি কারনে ফল হয়নি তা দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। ওই কমিটির সদস্যরা প্রতিবেদন জমা দিলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, প্রথমে তাদের কাছ থেকে বিষয়টি জেনে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা চাষীদের জমিতে জৈব্য সার ব্যবহার করতে বলেন। সেটাও কোন কাজে আসেনি। কুমড়া গাছে কোন ফলই ধরেনি।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড.কিসিঞ্জার চাকমা কুমড়া বীজ প্রসঙ্গে বলেন, যিনি চাষী তিনি একজন ভোক্তা। আর যিনি বীজ বিক্রি করছেন তিনি বিক্রেতা। ভোক্তা হিসেবে যদি বীজ নিয়ে প্রতারিত হয়, তাহলে আইনগত সহায়তা নেয়ার বিধান আছে। তিনি আরো বলেন, এ জেলায় যে প্রতিষ্ঠানই বীজ বিক্রি করুকনা কেন তাদের ডেটা বেইজ জেলা এবং উপজেলা কৃষি অফিসে থাকা জরুরী। তাতে করে কোন কোন প্রতিষ্ঠান চাষীদের কাছে কি ধরনের এবং কিসের বীজ বিক্রি করছে তার তদারকি করা সহজ হয়। এতে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হবে। যেহেতু চাষীদের ভাল রকমের ক্ষতি হয়েছে সে কারনে এটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ভুক্তভোগী চাষীরা মনে করেন, নামিদামী বীজ ব্যবসায়ীরা বীজ বিক্রির ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় যদি প্রতারণার করে, তাদেরকে আর্থিকভাবে ক্ষতি করা অব্যাহত রাখে,তাহলে চাষাবাদে বিরুপ প্রভাব পড়বে। আর কৃষি বিভাগের লোক দেখানো কিছু কাজ তাদের ফেসবুকেই শোভা পাবে।

Facebook Comments Box

Posted ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৩

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১১ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬, ০২ ৪১০৫০৫৯৮

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins