শরীফ আহমেদ প্রতিবেদনঃ সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিপন হোসেন ফাহিমের বিরুদ্ধে একই থানার ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মান্নানকে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গত শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঢুকে এম এ মান্নানকে প্রকাশ্যে অস্ত্র বের করে হত্যার হুমকি দেন ফাহিম। ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন গনমাধ্যমের হাতে এসেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কক্ষের সামনে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা ফাহিম উত্তেজিত হয়ে কথা বলছেন। এসময় আশপাশে কয়েকজনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। কথা বলার একপর্যায়ে এই ছাত্রলীগ নেতা নিজের কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র বের করে কক্ষের ভেতরে থাকা ব্যক্তির দিকে তাক করেন। ঘটনায় হতভম্ব হয়ে যান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মান্নান।
সেদিনের ঘটনার বর্ননা করতে গিয়ে এম এ মান্নান বাংলার নবকন্ঠে বলেন, ‘আমি ২২ বছর ধরে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। আমার অনেক সুনাম আছে। এই এলাকায় সব মাদক কারবার ফাহিম নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি আমার ম্যানেজারকে পিস্তল দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। পরে আবার আমার অফিসে এসে পিস্তল দেখিয়ে আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। অফিসে তখন আমি একা ছিলাম। আমাকে বলেন, ‘তোর মতো সভাপতি আমি গুনি না। গুলি কইরা মাইরা ফেলমু’।
এই ছাত্রলীগ নেতা প্রায়ই মদ খেয়ে অফিসে এসে হুমকি দেন উল্লেখ করে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আমিসহ সাধারণ মানুষ তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। এসবের প্রতিবাদ করায় আমাকে হত্যার হুমকি দেন। তিনি যেহেতু ওপেনে পিস্তল বেরে করে হত্যার হুমকি দিয়েছেন, আমি থানায় অভিযোগ দেবো।
এসময় আক্ষেপ করে এই প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আরো বলেন, ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমার সঙ্গে এমনটা ঘটবে কল্পনাও করতে পারিনি।
এদিকে এই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় ফুটপাত দোকান বসিয়ে চাঁদা আদায়, মাদক ব্যবসাসহ এলাকায় ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা রিপন হোসেন ফাহিম বাংলা নবকন্ঠকে বলেন, ‘উনি আমার বাবার চেয়ে বয়সে বড়। ওনার সঙ্গে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক। এমন কিছু হয়নি। আপনি ভুল কাউকে ফোন দিয়েছেন।
আগ্নেয়াস্ত্র বের করে হুমকি দেওয়ার ভিডিও বিভিন্ন গনমাধ্যমে কাছে আছে জানালে ছাত্রলীগ নেতা ফাহিম বলেন, ‘উনি আমার বাবাকে ফোন দিয়ে গালাগালি করছিলেন। আর বাবাকে ফোন দিয়ে গালাগালি করলে কারও মাথা ঠিক থাকে না। আমি আইসা ওনাকে জিজ্ঞাসা করি কাকা কী হইছে? এরপর উনি আমার ওপরও চড়াও হন। তখন আমি বলি কাকা আপনাকে তো সম্মান করি আমি, তো এভাবে কথা বলতে পারেন না। তখন ওনার সঙ্গে একটু বাগবিতণ্ডা হয়। আর ওখানে আমরা বন্ধুরা মিলে আড্ডা দেই তো। বাচ্চারা খেলাধুলা করে, কারও কাছ থেকে নিয়ে (খেলনা পিস্তল) হয়তো বন্ধুরা দেখতেছিলাম। আমরা একই দলের লোক। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এমন কিছু ঘটানোর সাহস,স্পর্ধা আমার নেই। আমি চার বছর ধরে যাত্রাবাড়ী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারে। পলিটিক্যাল ক্যারিয়ার তো মাত্র শুরু। আর এগুলো (অস্ত্র) আমি পাবো কোথায়! এসব আমার কাছে থাকলে তো যাএাবাড়ী থানায় ইনফরমেশন থাকতো।
যাত্রাবাড়ী এলাকায় চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারের বিষয়ে জানতে চাইলে ফাহিম বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা ৷ আমার থানায় একটা রেপুটেশন আছে। যদি কেউ বলতে পারে কারও থেকে টাকা নিই, সসম্মানে রাজনীতি থেকে বিদায় নেবো। আর মাদক কারবারের তো প্রশ্নই আসে না।
এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুল আলম বাংলার নবকন্ঠে বলেন, ‘এরকম কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যাত্রাবাড়ী থানা ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের আওতাভুক্ত। এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেইনি আর ভবিষ্যতেও দেবো না। ভিডিও ফুটেজটি এখনো আমার কাছে আসেনি। আসার পর আমরা যাচাই-বাছাই করে কঠোর ব্যবস্থা নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ৮:১৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel