শেখ সাইফুল ইসলাম কবির: | বৃহস্পতিবার, ০১ এপ্রিল ২০২১ | প্রিন্ট
সিডর ও আইলা ক্ষতিগ্রস্থ বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র এখন খাবার পানির জন্য হাহাকার ও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই দেখা দেয় এ সংকট। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন সহ পৌর এলাকায় খাবার পানির এ সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পানিয় জলের জন্য সর্বত্র হাহাকার বিরাজ করছে। অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নলকূপে আর্সেনিক,অকেজো নলকূপ ,পিএসএফ এর কারনে এ সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ সরকারি নলকূপ ও পিএসএফ অকেজো। পাশাপশি বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে নির্মিত শত শত নলকূপও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। মোরেলগঞ্জ পৌর সদরে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় পৌরবাসী বিশুদ্ধ পানির অভাবে অভাবনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। উপজেলার ৩০৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশতে কোন টিউবওয়েল নেই। আর যেগুলোতে আছে তাও অকেজো অবস্থায় রয়েছে। খুচরা যন্ত্রাংশ ও তত্ত্বাবধায়নের অভাবে এসব নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ে আছে। শত শত নলকূপের যন্ত্রাংশ ইতোপূর্বে চুরি হয়ে গেছে। একটি চোরাকারবারী চক্র এসব নলকূপের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ রাতের আঁধারে চুরি করে বিক্রি করছে। উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়নে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,মোরেলগঞ্জ , জিউধরা, নিশানবাড়ীয়া, খাউলিয়া,বলইবুনিয়া সহ অধিকাংশ ইউনিয়নে এ মৌসুমে পানিতে অতিরিক্ত লবনাক্তার কারণে পুকুরের পানি পান করতে পারছে না এলাকাবাসী।
অপরদিকে পুকুরের পানি শুকিয়ে যাবার কারনে প্রতিটি গ্রামের বাসিন্দারা দূর দূরন্ত থেকে মাইলের পর মাইল পায়ে হেটে, নৌকায় চড়ে খাবার পানি সংগ্রহ করছে। অনেক খোলা পুকুর খাল ও নদী নালার পানি পান করছে। সদর ইউনিয়ন ও পৌরবাসীকে খাবার পানির জন্য একমাত্র পুরাতন থানার পুকুরের পানির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তাও বৃষ্টির অভাবে শুকিয়ে গেছে এ পুকুরের পানি এখন তলানিতে। সকাল থেকে রাতভর এ পুকুর থেকে সমান ভাবে পানি নেয়া হয়। এছাড়াও পৌর সদরের কুঠিবাড়ি,এসএম কলেজ পুকুর থেকে ময়লাযুক্ত পানি হোটেল ও রেষ্টুরেন্টে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ,পেটের পীড়া সহ নানান রোগে ভুগছে শিশু সহ বিভিন্ন বয়সের লোকজন।
বিশুদ্ধ পানির অভাবে মোরেলগঞ্জ সদর হাসপাতালের রোগীদের সংখ্যাও কমনয়। হাসপাতালের একমাত্র পুকুরটি শুকিয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এর পাশে থাকা পিএসএফ ব্যবহার না করার ফলে নষ্ট হয়ে গেছে। নিরুপায় রোগীদের ভরসা নদীর পানি। নদীর পানি পান করে তারা আরো রোগাগ্রস্থ হচ্ছে। মোরেলগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, উপজেলার ১৬ ইউনিয়নের সরকারিভাবে ৭০টি ও বেসরকারিভাবে ১৬ শ’ পানীয় জলের পুকুর রয়েছে। পিএসএফ রয়েছে প্রায় ১ হাজার। এর মধ্যে ১’শ টি চালু রয়েছে।অকেজো রয়েছে ৪ শতাধিক। ১০টি গভীর নলকূপের মধ্যে জিউধরা ইউনিয়নে একটি চালু রয়েছে। রেইন ওয়াটার হার্বেষ্টিং প¬ান্ট রয়েছে 1’শ টি । সদর ইউনিয়নের ভাইজোড়া গ্রামে চালু রয়েছে একটি রিংওয়েল (পাত কুয়া)। স্যালো টিউবয়েল রয়েছে ৩ হাজার ৬ শ’ ৭০ টি। জরিপ অনুযায়ী স্যালো টিউবয়েল অকেজো রয়েছে ২ হাজার। পঞ্চকরণ ইউনিয়নে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের কথা থাকলেও তার কোন হদিস নাই। উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আরো জানান, ১৬ ইউনিয়নে আর্সেনিক জরিপে ২০০৩ সালের আর্সিনিক জরিপ অনুযায়ী উপজেলা সব ইউনিয়নে কম বেশী আর্সেনিক চিহিৃত টিউবওয়েল রয়েছে। তবে বনগ্রাম ,হোগলাবুনিয়া, হোগলাপাশা ইউনিয়নের আর্সেনিক চিহিৃত টিউবওয়েল রয়েছে সবচেয়ে বেশি ও ভয়ানক আর্সেনিক ঝুঁকিতে রয়েছে এ ইউনিয়নটি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী দপ্তরের হিসাবের সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। প্রায়ই হিসাবই কাগুজে কলমে। উপজেলা ইউনিয়ন গুলোতে মাইলের পর মাইল হাটলেও দু’একটি ছাড়া কোন সচল টিউবওয়েল দেখা যাবেনা। পৌর সদরের চিত্র একই। যেসব টিউবওয়েল সচল রয়েছে থালা-বাসন ধোঁয়া ছাড়া পানের অযোগ্য।তবে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ কামাল হোসেন মুফতি জানান, বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডাইরিয়া, আমাশয়, টাইফেয়ডসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
Posted ৩:৩৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ এপ্রিল ২০২১
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।