বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক সুদৃঢ় করছে রাজধানী বাসাবো বৌদ্ধ মহাবিহার

মোঘল হোসেন সম্রাট, প্রতিবেদনঃ   |   শুক্রবার, ১৯ মে ২০২৩   |   প্রিন্ট

আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক সুদৃঢ় করছে রাজধানী বাসাবো বৌদ্ধ মহাবিহার

ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহার ভ্রমণের কাহিনী এই সময়ে বলার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সেটি পরে বলি। ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহার হচ্ছে- ঢাকার প্রথম বৌদ্ধবিহার, যা কিনা ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং তার পর থেকে বৌদ্ধ ধর্মচর্চা, বিকাশ ও উন্নয়নের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এটি কমলাপুরে অবস্থিত।

প্রথম একজন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল যখন তার স্ত্রীকে নিয়ে ১৯৬২ সালে এই বিহার ভ্রমণ করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন ‘অতীশ দীপংকর প্রার্থনা হল’ তখন থেকেই দেশে-বিদেশে এই বিহারের সুনাম ছডিয়ে পড়তে থাকে, আসতে থাকেন নানা ধর্মবর্ণের মানুষ।

নানা সামাজিক-সংস্কৃতিক কাজের পাশাপাশি এখানে ৫ শতাধিক অনাথ বৌদ্ধ ও অর্ধশতাধিক বৌদ্ধভিক্ষু আছে। আছে ধর্মরাজিক হাইস্কুল, ধর্মরাজিক কিন্ডারগার্টেন, ধর্মরাজিক ললিতকলা একাডেমি, ধর্মরাজিক সাহিত্য আসর এবং ধর্মরাজিক নিক্কিউনিয়ানো ক্লিনিক। এখানে রয়েছে মহামতি বুদ্ধের কয়েকটি অমূল্য, দুর্লভ মূর্তি যেগুলোর আধ্যাত্মিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব অনেক বিস্তৃত।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এখানে বর্তমান নির্মাণ হয়েছে বহুতল অডিটরিয়াম।

ঢাকায় থাকছি পাঁচ বছর ধরে অথচ ঢাকার অনেক বিখ্যাত জায়গায় পা ফেলতে পারিনি। এই মনোকষ্টকে ঘোচানোর জন্য আমরা তিন সাংবাদিক বন্ধু মিলে হঠাৎ করেই ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহারে যাওয়ার জন্য মনস্থির করে ফেলি।

বর্তমানে মিয়ানমারে বৌদ্ধদের সহিংসতার পর এই বিহার সবার প্রবেশ আগের মতো নেই। তাই বিহারে থাকে বন্ধু সাজুকে ফোন দিলাম এবং সেখানে আমরা পৌঁছানোর আগেই গেটে হাজির। আমাদের ঘুরে দেখানো শুরু করলো। গেটের পুলিশ পাহারায় চোখে পড়ল, আর ঢুকেই ডান পাশে রয়েছে একটি অসম্ভব সুন্দর কাঁচের বাক্সে বুদ্ধমূর্তি। একটু এগোতেই নির্মাণাধীন অডিটরিয়ামের কর্মযজ্ঞ। আর তার পরই উপাসনালয়। সামনে এগোতেই চোখে পড়বে একটি মাঠ আর ওপাশে একটি পুরনো হোস্টেল; যেটি নাকি ১৯৭১ সালের আগে তৈরি ও মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এর পর আমরা বুদ্ধের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মূর্তিটি দেখলাম, যেটি বিশাল পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা একে একে ধর্মরাজিক হাইস্কুল, ধর্মরাজিক কিন্ডারগার্টেন ঘুরে দেখলাম, কথা বললাম। অতঃপর একবুক তৃপ্তি নিয়ে হলের দিকে রওনা হই।

যে তথ্যটি আমি পরে জানতে পারি, সেটি হল এই বৌদ্ধবিহার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মানবতার ক্ষেত্রে। ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহার ২০১৩ রমজান মাসে প্রতিদিন বিকালে মুসলমান দরিদ্রদের মধ্যে ইফতার বিতরণ করেন বৌদ্ধভিক্ষুরা। সেটির পরিমাণও কম নয়; ৩০০-৫০০ জনের ইফতার করান প্রতিদিন।

আমরা দেখেছি মিয়ানমারে বৌদ্ধদের সহিংসতা, দেখেছি তাদের নির্মমতা ও অত্যাচার। কিন্তু এটি তার পুরোই উল্টা উদাহরণ। তা হলে কি বলা যায় না যে সংখ্যালঘুরা ভালো থাকার জন্যই এ ব্যবস্থা? নাকি মিয়ানমারের বৌদ্ধ আর বাংলাদেশের বৌদ্ধদের ভেতর পার্থক্য আছে?তারা কতই বন্ধু সুলভ অতিথিপরায়ণ আমরা ৩ সাংবাদিক এতটাই মুগ্ধ হয়ে গেলাম বলে শেষ করা যাবে না,নিষ্ঠুরতার কোনো ধর্ম থাকে না?

তাই রাজধানীর সবুজবাগ থানাধীন বাসাবো অতীশ দীপঙ্কর সড়কের পাশে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার। এখানে নেই কোনো জাতি, ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ। নেই কোনো ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের অপকৌশল। এ বৌদ্ধবিহার আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক সুদৃঢ়করণ ও বিশ্বজনীন মানবিক মূল্যবোধের জাগরণকে উজ্জীবিত করার তারা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে

Facebook Comments Box

Posted ২:২৭ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৯ মে ২০২৩

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১১ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬, ০২ ৪১০৫০৫৯৮

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins