শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

“হরিরামপুরের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেতশিল্প বিলুপ্তির পথে”

আলামিন হোসেন   |   মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট

“হরিরামপুরের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেতশিল্প বিলুপ্তির পথে”

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় একসময় বাঁশ ও বেত দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে বাঁশের তৈরি শিল্পকর্ম দীর্ঘস্থায়ী না হলেও, লোকজীবনে ব্যবহারের বহুমাত্রিকতা ও প্রয়োজনের কারণে এই শিল্প বংশপরম্পরায় এখনও কিছুটা টিকে আছে।

প্রথমে গৃহস্থালির বেশিরভাগ পণ্য বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি হত এবং অনেকেই এই শিল্পের ওপর জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিক ও ইটের ব্যবহারের কারণে বাঁশ আর বেতের পণ্য এখন সঙ্কটে। বর্তমান সময়ে প্লাস্টিকের আধিক্য ও আধুনিকতার প্রভাবে গ্রামীণ এই শিল্প বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঝিটকা বাজারে গিয়ে রাজার কলতা গ্রামের পলো ব্যবসায়ী বহর আলীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, ২৫ বছর ধরে বাঁশ দিয়ে পলো তৈরি করছেন। তিনি নিজেই বাঁশ কিনে পলো তৈরি করেন এবং প্রতি সপ্তাহে ৪-৫ টি পলো তৈরি করে ঝিটকা হাটে বিক্রি করেন। প্রতি পলো ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমেছে।

উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামের কারিগর লিটন মিয়া জানান, তিনি ১০ বছর ধরে বাঁশ দিয়ে টাপা তৈরি করছেন। নিজে বাঁশ কিনে টাপা তৈরি করে এবং প্রতিটি টাপা ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করেন।

অন্যদিকে, একই গ্রামের ব্যবসায়ী হারুন মল্লিক বলেন, তিনি ১২ বছর ধরে বাঁশের তৈরি মাছের চাঈ বিক্রি করছেন। বিভিন্ন কারিগরের কাছ থেকে সেগুলো কিনে ঝিটকা হাটে বিক্রি করেন। তবে প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের আধিক্যের কারণে বাঁশের আসবাবপত্রের বেচাকেনা কমে গেছে।

উপজেলার গালা ইউনিয়নের কালই গ্রামের কারিগর দিলিপ সরকার জানান, তিনি ৮ বছর বয়স থেকে বাঁশের বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি ও বিক্রি করে আসছেন। এখন নিজে তৈরি করেন এবং বিভিন্ন কারিগর থেকে কিনে আনেন। বর্ষাকালে বেচাকেনা কমে গেছে।

ঝিটকা হাটে বেত শিল্পের দাঁড়িপাল্লা ও ঝুড়ি বিক্রি করতে আসা সোরহাব বলেন, এই শিল্পের দুর্দিনে হাতে গোনা কিছু পরিবার এখনও এই পেশা ধরে রেখেছে। অনেকেই পেশা বদলেছে, তবে পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন তিনি।

বর্তমানে সপ্তাহিক হাটসহ গ্রামে গ্রামে ফেরি করে কিছু সৌখিন মানুষ তাদের পণ্য কেনেন। বিক্রির পর যা পান, তা দিয়ে খাবার কিনে বাড়ি ফেরেন। বেতের দাম বেশি হওয়ায় এ পেশায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাজার থেকে বাঁশে তৈরি কুলা ও চালুন কিনতে আসা মিজান মিয়া জানান, বাড়ির কাজে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনলেন। দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও প্রয়োজনীয়তা থাকায় কিনতে হয়েছে। প্লাস্টিকের জিনিসপত্র দাম কম এবং টেকসই হওয়ায় বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।

Facebook Comments Box

Posted ৮:৪১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১০ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins