শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

>>

রাজশাহীর দুর্গাপুরে তরুণীর ইজ্জতের মূল্য আড়াই লাখ টাকা

মোঃ সুজন আহাম্মেদ রাজশাহী   |   রবিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৩   |   প্রিন্ট

রাজশাহীর দুর্গাপুরে তরুণীর ইজ্জতের মূল্য আড়াই লাখ টাকা

রাজশাহীর দুর্গাপুরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে মিলন হোসেন (২২) নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে । বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ালে স্থানীয় ইউপি সদস্য তাঁর নিজ বাড়িতে সালিশি বৈঠক বসিয়ে তরুণীর ইজ্জতে মূল্য বাবদ আড়াই লাখ টাকায় মীমাংসা করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে একজন ইউপি সদস্য সালিশি বৈঠকে মীমাংসা করার এখতিয়ার রাখেন কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

অভিযুক্ত যুবক মিলন হোসেন উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের উত্তরপাড়ার মৃত ওসমান আলীর ছেলে। একই গ্রামের দক্ষিণপাড়ার ভিকটিম তরুণীর বসবাস।

গত ৬ অক্টোবর ভুক্তভোগী তরুণী (১৬) এ ঘটনায় বাদী হয়ে দুর্গাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করে। লিখিত অভিযোগে ওই তরুণী উল্লেখ করে, তাঁকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে অভিযুক্ত যুবক মিলন হোসেন। এমনকি শারীরিক সম্পর্কের সময় অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও গোপনে মোবাইল ফোনে ধারণ করে সেটি বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করার বিষয়টিও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। বাধ্য হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয় ভিকটিম তরুণী। অভিযোগের পর থেকে ভিকটিমের পরিবারের লোকজনকে অপোষ মীমাংসার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন ও অভিযুক্ত যুবকের পরিবারের লোকজন ভিকটিম তরুণীকে চাপ দিতে থাকে।

জানা গেছে, মিলনের বাড়ির পাশ দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের রাস্তা হবার সুবাদে মিলনের সাথে পরিচয় হয় ভিকটিমের। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভিকটিমের সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। এরপর শারীরিক সম্পর্কের অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ভিডিও গোপনে ধারণ করে বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে ভয় দেখিয়ে ভিকটিম তরুনীর কাছ থেকে নানা সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করে।

থানায় লিখিত অভিযোগ করার পর পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক ঘটনাস্থলে তদন্তে গেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার দায়িত্ব নেন। গত শনিবার (৭ অক্টোবর) রাতভর ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেনের বাড়িতে মীমাংসার জন্য দেনদরবার চলে। রাত তিনটার দিকে ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ভিকটিম তরুণী ও অভিযুক্ত যুবকের স্বাক্ষর নিয়ে আড়াই লাখ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া কোনো পক্ষই যাতে আইনী পদক্ষেপ নিতে না পারে সে জন্য অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়।

ভিকটিম তরুণী জানায়, আমি অসহায়। মিলনের কাছে থাকা ভিডিও দেখিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতো। এমনকি তাঁর সাথে শারীরিক সম্পর্ক তৈরী করতে বাধ্য করতো। এছাড়াও আমাকে অমানুষিক ভাবে অত্যাচার করতো। এ কারনে আমি গত ৬ অক্টোবর বিকাল ৫ টার দিকে মিলনের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবার ও মায়ের সাথে কথাও বলেছি। কিন্তু তারা আমাকে পাত্তা দেননি। আমার সাথে যে অন্যায় হয়েছে আমি এর বিচার চাই।

মিলন আমার সাথে মিথ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে প্রতারনা করে আমাকে ধর্ষন করেছে এবং আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। বর্তমানে মিলনের কাছে থাকা আমাদের শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকিও দিয়েছে।

ভিকটিম তরুনী আরও অভিযোগ করে, থানায় অভিযোগ দেয়ার পরেও আমি কোন বিচার পাচ্ছি না আমি কার কাছে গেলে বিচার পাব। উল্টো আমাকে ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন আমার পরিবারের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এই অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় ভাবে আপোষ মিমাংসার জন্য চাপ দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভিকটিমের মামা বলেন, গভীর রাতে কাউকে না জানিয়ে ইউপি সদস্যর বাড়িতে বসে বিষয়টি নিয়ে তারা গোপনে আপোষ করেছে। এলাকার গন্যমান্য বাক্তিদেরকেও সেখানে ডাকা হয়নি। আপোষে আমার অসহায় ভাগ্নি ন্যায় বিচার পায়নি। আমরা থানায় অভিযোগ করেছিলাম। থানা পুলিশ ব্যবস্থা না নিয়ে ইউপি সদস্যর কথা মতো চলছে।

ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন তাঁর বাড়িতে সালিশি বৈঠক বসানোর কথা স্বীকার করে বলেন, এগুলো ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝামেলার দরকার নেই। তাই স্থানীয়ভাবে বসে আপোষ মীমাংসা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সালিশি বৈঠকে তাদের দুজনকে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দেনমোহর বাবদ আড়াই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মেয়ের বয়স না হওয়ায় কাজী ডেকে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে ছেলে পক্ষের কাছ থেকে লিখিত মুচলেকা নেয়া হয়েছে। আদালতে গিয়ে তাদেরকে বিয়ে করে নিতে বলা হয়েছে।

নওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল আলম শফি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই।

দুর্গাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও নওপাড়া বিট ইনচার্জ বিজয় ব্যাপারি বলেন, এ ধরনের অভিযোগের বিষয়টি আমার এই মূহুর্তে মনে পড়ছেনা। যদি মিটিয়ে ফেলতে পারে তবে ভালো কথা।

এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করার পর একজন ইউপি সদস্য স্থানীয় ভাবে সালিশি বৈঠকে মীমাংসা করার এখতিয়ার রাখেন কিনা এ প্রশ্নের জবাব দেননি পুলিশের এই কর্মকর্তা।

Facebook Comments Box

Posted ১০:৩৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৩

dainikbanglarnabokantha.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক

রুমাজ্জল হোসেন রুবেল

বাণিজ্যিক কার্যালয় :

১৪, পুরানা পল্টন, দারুস সালাম আর্কেড, ১০ম তলা, রুম নং-১১-এ, ঢাকা-১০০০।

ফোন: ০১৭১২৮৪৫১৭৬, ০১৬১২-৮৪৫১৮৬

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

design and development by : webnewsdesign.com

nilüfer escort coin master free spins