• শিরোনাম

    নাব্যতা হারিয়ে বিলীনের পথে নেত্রকোনার মগড়া নদী

    রিপন কান্তি গুণ সোমবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৪

    নাব্যতা হারিয়ে বিলীনের পথে নেত্রকোনার মগড়া নদী

    apps

    নেত্রকোনা শহরকে দুই ভাগে ভাগ করেছে মগড়া নদী। যে নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে নেত্রকোনা শহর। দখল-দুষণে সেই নদীই আজ নাব্যতা হারিয়ে বিলীনের পথে।

    নেত্রকোনা শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে মগড়া নদী। একসময়ে প্রাণচঞ্চল মগড়া আজ নিজস্ব রূপ হারিয়ে হয়ে উঠছে নিষ্প্রাণ ও অপরিচ্ছন্ন। গত চার যুগে দখল আর দুষণে নাব্যতা হারিয়েছে নদীটি। শহরের আবর্জনা ফেলায় দূষিত হচ্ছে নদীর পানি ও জীববৈচিত্র্য। শহরবাসী দীর্ঘদিন ধরে এই নদী খননের দাবি জানিয়ে আসছেন। প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নদী রক্ষায় নানা উদ্যোগের কথা জানালেও বাস্তবে তার খোঁজ মেলে না। তবে কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ছাড়া প্রশাসন আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

    বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে, এক সময়ের কালিগঞ্জ বাজার থেকে আজকের নেত্রকোনা শহর। মগড়া নদীর তীরে গড়ে ওঠা ব্যবাসয়ীক বাজারে একসময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় বড় নৌকা, লঞ্চ, ষ্টিমার আসতো এ মগড়ার জলে ভেসে। সেই ব্যবসার প্রসারে আজকের গড়ে ওঠা শহরের নামকরণ হয় নেত্রকোনা। কিন্তু আজ সেই নদীই দখল হয়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে। দখলে আর দূষনে এখন একেবারে বিলীনের পথে। পুরো শহর জুরে প্যাঁচিয়ে থাকা খরস্রোতা নদীর পানি ব্যবহারেও রয়েছে রোগের ভয়।

    সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর উভয় অংশের যোগাযোগের জন্য শহরের ভিতরে অন্তত সাতটি সেতু আছে। এই সেতুগুলোর মধ্যে মোক্তারপাড়া সেতুটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেতুটি দিয়ে প্রধান সড়ক পার হতে হয়। নদীর বেশিরভাগ স্থানেই ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এমনকি পৌরসভার নালা-নর্দমার পানি ফেলা হচ্ছে নদীতে। পাশাপাশি মাছ ধরার জন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় কচুরিপানা ও জলজ উদ্ভিদ জন্মে মগড়ার চেহারা আজ ডোবার মতো হয়েছে।

    পৌর শহরের নাগড়া সেতুসংলগ্ন ব্যবসায়ী শ্যামল বিশ্বাস বলেন, নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়। পানি দুষিত হওয়ায় মাঝেমধ্যে মাছ মরে ভেসে ওঠে। তিন বছর আগে প্রশাসন কিছু এলাকা দখলমুক্ত করে। সেগুলো তদারকি না করায় আবার দখল হয়ে যাচ্ছে।

    শহরের সাতপাই এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী (৭৫) জানান, ৫৬ বছর আগেও মগড়া প্রমত্ত ছিল। নদীতে জোয়ার-ভাটা হতো। বরিশাল, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নদী দিয়ে বড় বড় মহাজনি নৌকা আসত। সব সময় নদীতে পালতোলা নৌকা, স্টিমার ও লঞ্চ চলত। কিন্তু ১৯৬৫ সালে মোক্তারপাড়া এলাকায় পাকা সেতু নির্মাণ করার পর বড় নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও ছোট ও মাঝারি নৌকা চলত। কিন্তু মুক্তারপাড়ায় নতুন সেতু নির্মাণ করার পর থেকেই নৌ চলাচলই বন্ধ হয়ে গেছে। নির্মাণের সময় স্থানীয় ব্যক্তিরা সেতু উঁচু করার জন্য বারবার দাবি জানালেও কর্মকর্তারা তা শোনেননি। আমার ভাষায়-পরিকল্পিতভাবে নদীটিকে হত্যা করা হয়েছে।

    তরুণ প্রজন্মের কায়েস আহমেদ, যুবক হীরা খান এলাকাবাসী উন্নয়ন কর্মী মৃণাল কান্তি চক্রবর্তী এবং নদী রক্ষা কমিটির সদস্য শ্যামলেন্দু পাল বলেন, সরকারের নির্দেশ না মেনে সিএস মূলের পরিবর্তে নদীকে বিআরএস মুলে একবার উচ্ছেদ অভিযান দেখালেও পরবর্তীতে আবারও সি এস মূলে দাগ কাটা হয়েছে। কিন্তু দাগ কাটা পর্যন্তই রয়ে গেছে। রহস্যজনক কারণে এগুলোর কোন কার্যক্রম পরিরক্ষিত হচ্ছে না। প্রভাবশীলীরা নদী দখল করে মামলা দিয়ে উচ্ছেদ আটকে রেখেছে।

    জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, মগড়া নদী পুনঃখনন নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে জরিপ কাজ চলছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করে বাকি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

    জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন থেকে মগড়া নদীর দখলদারদের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়, তাতে ৩১৬টি অবৈধ স্থাপনার উল্লেখ ছিল। এর মধ্যে বিআরএস অনুযায়ী মেপে অভিযান চালিয়ে ২৯৩টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাকি ২৩টি স্থাপনা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় তা আর করা সম্ভব হয়নি। অভিযানে উদ্ধার হওয়া ভূমির পরিমাণ ১৪ দশমিক ৮০ একর।

    জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, বর্তমানে নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনায় সিএস অনুযায়ী মাপার কাজ চলছে।

    পৌর মেয়র মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের জীবন, জীবিকা, সংস্কৃতি সবকিছুর সঙ্গে নদীর সম্পর্ক। নেত্রকোনা শহরটিই মগড়া নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। নদীটি রক্ষায় পৌরসভার পক্ষ থেকে আবর্জনা না ফেলতে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। নাগরা আনন্দবাজার সেতু এলাকা থেকে মোক্তারপাড়া সেতু পর্যন্ত সৌন্দর্যবর্ধন ও বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।’

    বাংলাদেশ সময়: ৯:৪৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৪

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ