• শিরোনাম

    নেত্রকোনায় জমে উঠেছে শীতবস্ত্র বেচাকেনা

    রিপন কান্তি গুণ, শনিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২৪

    নেত্রকোনায় জমে উঠেছে শীতবস্ত্র বেচাকেনা

    apps

    গত কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহের কারণে দেশব্যাপী কমেছে তাপমাত্রা। তারই ধারাবাহিকতায় নেত্রকোনা জেলাতেও বেড়েছে শীতের তীব্রতা। শীতের হিমেল হাওয়া আর তার সঙ্গে যোগ হওয়া ঘন কুয়াশার কারণে জেল জুড়ে জেঁকে বসেছে শীত। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে ছুটছেন নগরীর ফুটপাতসহ গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে। ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে গরম কাপড়ের বেচাকেনা।

    জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলা শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে বড় বড় বিপণি বিতান এবং উপজেলা সদরের হাট-বাজারসহ বিভিন্ন অলি-গলিতে গরম পোশাকে বিক্রির ধুম পড়েছে। বিশেষ করে জ্যাকেট, সোয়েটার, ক্যাপ, মোজাসহ শীতের হরেক রকমের পোশাকের বেচাকেনায় ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা।

    শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে কম দামে গরম পোশাক কিনতে ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় করছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। এসব দোকান থেকে সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১,০০০ হাজার টাকার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শীতের পোশাক কিনতে পারছেন বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষ।

    অন্যদিকে, জেলা পৌর শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা সদরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ভ্যানে পুরোনো গরম কাপড় বিক্রির ধুম পড়েছে। এখানে ক্রেতার ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। সন্ধ্যার পর থেকে দোকানগুলোতে পা ফেলার তিল পরিমান জায়গা থাকে না। খুব অল্প দামের মধ্যে পুরোনো সোয়েটার, জ্যাকেট, ফুলহাতা গেঞ্জি, মোজা, মাফলার পাওয়া যায়। এসব পোশাক থেকেই বাছাই করে নিজেদের চাহিদামতো পোশাক কিনছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।

    জেলা সদরের ফুটপাত থেকে শীতের কাপড় কিনতে আসা ভ্যান চালক ইদ্রিস আলী বলেন, আমাদের মত দিনমজুর থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন এসব পোশাকের ক্রেতা। এখানে স্বল্প আয়ের লোকজন নিজেদের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পোশাক কিনতে পারছেন। তাই কেনাকাটাও বেশি হচ্ছে। আমিও নিজেরসহ বৌ, ছেলে-মেয়ের জন্য কয়েকটা পোশাক কিনেছি।

    পৌর শহরের বড়বাজার এলাকার কাপড় বিক্রেতা মৃণাল কান্তি পন্ডিত বলেন, ধীরে ধীরে বাড়ছে শীত। তাই আমরা বিভিন্ন ধরনের ও বাহারি রঙের শীতের কাপড় সাজিয়ে রাখছি। আমাদের এখানে শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষের শীতের পোশাক রয়েছে। বেচাকেনাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। শীতের তীব্রতা যেমন অনেকের কষ্টের কারণ তেমনি আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ। কারণ ধার কর্জ করে ব্যবসা শুরু করেছি।

    শহরের কুরপাড় এলাকার ফুটপাতে পোশাক বিক্রেতা লতিফ সরকার বলেন, শীতের কাপড় কেনার জন্য নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তরাও ভিড় করছেন আমাদের ফুটপাতের দোকানে। শীত বাড়ছে তাই, ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বেচাকেনাও বেশি হচ্ছে। পৌষ মাসের শেষ দিকেও শীত না পড়ায় বেচাকেনা তেমন হয়নি। তখন দুঃশ্চিন্তায় পড়েছিলাম কিন্তু এখন শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় শেষ মুহূর্তে ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। এবার চালান উঠে লাভের আশায় আছি।

    জেলার বারহাট্টা উপজেলা সদরের গোপালপুর বাজারের পোশাক বিক্রেতা পলাশ মৌল্লা বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে শীতের পোশাক ভালোই বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দোকানে নানা ধরনের নতুন নতুন পোশাক এনেছি। ক্রেতারাও তাই ভিড় করছেন তাদের পছন্দের পোশাক কিনতে। পোশাকের দাম সর্বসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকায় বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে।

    নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলখ্যাত মোহনগঞ্জ বাজারের কাপড় পট্টিতে গরম কাপড় কিনতে আসা শহীদুল ইসলাম নামের এক রিকশাচালক বলেন, শীতের কারণে একদিকে কমেছে রোজগার, অন্যদিকে ছেলে-মেয়েদের শীতবস্ত্র কিনতে হিমসিম খাচ্ছি। তাও আবার গরীবের মার্কেটে ধনীদের ঠেলায় কাপড়াদি কেনা দায় হয়ে পড়েছে।

    নেত্রকোনা এলাকার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগ পেরিয়ে কোনমেতে বেঁচে থাকা তাদের। ছিন্নমূল পরিবারের এইসব মানুষরা শীত নিবারণে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষ নগরীর ফুটপাতের গরম কাপডের দোকানগুলোতে ভিড় জমালেও শীত নিবারণে মহাবিপদে রয়েছেন ছিন্নমূল মানুষেরা। রেলস্টেশনে, ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে তাদের শীত নিবারণ অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাদের প্রত্যাশা হৃদয়বানরা শীতবস্ত্র নিয়ে তাদের পাশে এসে দাঁড়াবেন।

    বাংলাদেশ সময়: ৭:৫৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২৪

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ