শরীফ আহমেদ প্রতিবেদনঃ সোমবার, ১৯ জুন ২০২৩
নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে, একই সঙ্গে কমেছে সেবা প্রার্থীদের হয়রানি ও দালালদের তৎপরতা, বৃদ্ধি পেয়েছে রাজস্ব আয়।
আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন অপেক্ষা করে নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যেত না পাসপোর্ট। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়েও সঠিক সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে গ্রাহকদের অসুবিধার অন্ত ছিল না। সুবিধাভোগী শ্রেণি ও অফিসের কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে গ্রাহকদের হয়রানি বেড়েই চলছিল।
তবে মোঃ রোকনুজ্জামান নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী-পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর পাল্টে গেছে চিত্র। জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম কঠোরভাবে দমন করেন তিনি। এতে করে বেড়েছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ। পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতি কমায় স্বস্তি ফিরেছে জনমনে।
নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সুত্রে জানা গেছে, বর্তমান সহকারী-পরিচালক রোকনুজ্জামান নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সহকারী-পরিচালক ও মোস্তফা কামাল প্রধান হিসাবরক্ষক হিসাবে যোগদান করার পর পরই এই অফিসের সুশৃঙ্খলা কথা বলবেনা কেমন আছো ফিরিয়ে এনেছেন।
সহকারী পরিচালক রোকনুজ্জামান আবেদনকারীদের সমস্যা লাঘবে গ্রাহকদের মাত্রাতিরিক্ত অসন্তোষের বিষয় জানতে পেরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ ও গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধির পরামর্শ দেন তিনি। জনদুর্ভোগ লাঘব এবং রাজস্ব আদায়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠানটিকে একটি সুশৃঙ্খল, স্বচ্ছতা জবাবদিহিতার আওতায় আনতে কঠোর নির্দেশ দেন। তার কঠোর নির্দেশে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নড়েচড়ে বসেন।
পাসপোর্ট করতে আসা একাধিক আবেদনকারী জানান, অনলাইনে ফরম পূরণ করে সঠিক সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন। তাদের মতে, পাসপোর্ট করতে অনেক সময় ও সরকার নির্ধারিত ফি এর চেয়ে অধিক অর্থ গুনতে হয়। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে আবেদন করে অল্প সময়ে তারা পাসপোর্ট পেয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই অবাক হয়ে জানান, এই অফিসের কর্মকর্তাদের আচরণ এবং সেবার মান অনেকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেও স্বচ্ছতা ফিরেছে।
তারা আরও জানান, বর্তমান সহকারী- পরিচালক রোকনুজ্জামান এর আমলে পাসপোর্টের সেবাগ্রহীতাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। পাসপোর্ট সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা বা কোনো কিছু জানতে চাইলে অফিসের সহকারী-পরিচালকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা যায়। সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষণিক সহকারী-পরিচালক নিজে উঠে টেবিলে টেবিলে ঘুরে সমাধান করে দিচ্ছেন।
ফতুল্লা এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুর রহিমের সিঙ্গাপুরে কাজ পাওয়া ছেলে সোলায়মান দৈনিক বাংলার নবকন্ঠে জানান, ১৫ দিন আগে পাসপোর্ট আবেদন করেছেন। অনলাইনে ফরম পূরণ করে সঠিক সময়ের মধ্যেই পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন তিনি।
পাসপোর্ট করতে নির্ধারিত ফি এর বেশি টাকা ও লোক ধরতে হয়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সেদিন এখন আর নেই। সমস্যা হলে সোজা বড় কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলা যায়। আর কি চান। আর কোনো দালাল লাগে না।
সরকারি এক কর্মকর্তা বলেন, নির্ধারিত ফি দিয়ে অনলাইনে আবেদন করে পাসপোর্ট অফিসে যাই। সেখানে গেলে অফিস প্রধান পরিচয় জানতে পেরে নিজে এসে আমাকে সঙ্গে নিয়ে আবেদন জমাদানের বিভিন্ন কক্ষে যান এবং মুহূর্তে কাজ শেষ করেন। এতে আমি আন্তরিকভাবে খুশি।
বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার তাগিদে আসা মিজমিজি এলাকার আবুল কালাম আজাদ বর্তমান পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে বলেন, লিভারের রোগে ভারতে উন্নত চিকিৎসায় যাওয়ার জন্য নির্ধারিত ফি দিয়ে আমি অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করি। এর আগেই জানতে পারি বর্তমান অফিস প্রধান জনগণের জন্য আন্তরিক। আমি তার কাছে গেলে মাত্র অল্প সময়ে তিনি নির্দিষ্ট লোক দিয়ে আমার কাজ সমাধান করে দেন। পরবর্তীতে আমি সঠিক সময়ে আমি পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি।
নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী-পরিচালক মোঃ রোকনুজ্জামান দৈনিক বাংলার নবকন্ঠে বলেন, আমি যোগদানের পর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি পাসপোর্ট সেবা গ্রহীতাদের সেবার মান উন্নত করতে। আগে যেখানে দীর্ঘ লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতো এখন তাদের সেই সমস্যা অনেকটা লাঘব করতে পেরেছি। নিচ তলায় সেবা গ্রহীতাদের বসার জন্য আসন বসিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন জনগণকে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিতে। সেই লক্ষেই আমারা কাজ করে যাচ্ছি।বর্তমান সরকার উন্নত প্রযুক্তির অত্যাধুনিক মেশিন নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্টঅফিসে দিয়েছেন। আবেদনকারীদের যে কোনো সমস্যা হলে তারা সরাসরি আমার সঙ্গে দেখা করলে আমি যথাসম্ভব দ্রুত সমাধান করে দেব।
নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সুত্রে জানা যায়, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর পাসপোর্ট অফিস হতে সরকারের আয় অনেক বেড়েছে। নিয়মিত আবেদনের বিপরীতে কোনো ধরনের সমস্যা ও হয়রানি ছাড়াই আবেদনকারীরা নিজ নিজ পাসপোর্ট পাচ্ছেন তা এখন লক্ষণীয়।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৭ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৯ জুন ২০২৩
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel