• শিরোনাম

    ভাষা সংগ্রামী জীবন্ত কিংবদন্তি কয়েস উদ্দিন আজ অবহেলীত

    আল মাসুদ লিটন জামালপুর জেলা প্রতিনিধি:- শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

    ভাষা সংগ্রামী জীবন্ত কিংবদন্তি কয়েস উদ্দিন আজ অবহেলীত

    apps

    জামালপুরের ভাষা সংগ্রামী জীবন্ত কিংবদন্তি কয়েস উদ্দিন আজ নানা ভাবে অবহেলীত। সু-চিকিৎসা, বাসস্থান, খাবার সঙ্কটে ও বয়সের ভারাক্রান্তে তিনি দিন দিন দুর্বিসহ জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন। জীবনের শেষ সময় যখন তার অর্থ ইনকামের কোন সুযোগনেই, পরিবারেরও তার দায়িত্ব নেওয়ার মতো তেমন কেউ না থাকায় তিনি আজ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। বয়সের ভারে আজ তিনি ভারাক্রান্ত। উপার্জনের সক্ষমতা বা নিজের বলতে তেমন কোন সম্পদও তার নেই। যার বিনিময়ে এই দুঃসময়ে তার জীবন জীবিকায় সহযোগীতা করবে। চিকিৎসা ও খাবার সঙ্কটে আধাহারে-অনাহারে তার জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। এ যেন দেখার কেউ নেই।
    এই মাস ভাষা মাস। ১৯৫২ সালের এই মাসের ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা আদায়ের দাবীতে ঢাকার রাজপথে জীবন দিয়েছেন ভাষা শহীদরা। তাদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। ভাষা আন্দোলনে শুধু ঢাকার মানুষই অংশ নেয়নি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন ভাবে এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। তেমনই ভাষা সংগ্রামী একজন বিপ্লবী মানুষ জামালপুরের কয়েস উদ্দিন।

    তিনি দেশের সম্পদ, রাষ্ট্রের সম্পদ। যাদের হাত ধরে আজ আমরা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে পেয়েছি, তাদের শেষ জীবনে এতো অবহেলা কেন এটাই সাধারণ মানুষের প্রশ্ন। সাধারণ মানুষ বলেন, এ অবহেলা আর মেনে নেয়া যায় না। সাধারণ মানুষ জানান, যেহেতু তিনি অর্থ উপার্জনে অক্ষম। তাই তার ভরনপোষণের ও চিকিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। বর্তমান সমাজে বৃত্তবান অনেকেই তাকে দেখার দায়িত্ব নেয়ার কখা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মঞ্চে বলেন। মূলত এটা হলো লোক দেখানো। ২১শে ফেব্রুয়ারি এলেই তাকে এই বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ অবস্থায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়ে গিয়ে সম্মাননা স্মারক ও সামান্য অর্থ তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠান শেষে তাকে এক প্যাকেট খাবারও হাতে দেয়া হয়না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবেই তাকে বিদায় জানানো হয়। পরে তার জীবন জীবিকা ও চিকিৎসা কিভাবে চলে কেউ আর খবর রাখেনা। তিনি কোথায় থাকেন, কি খাচ্ছেন, তার শারীরিক অবস্থা কেমন কেউ দেখে না। কেউ খোঁজ রাখেনা।

    বর্তমানে তাকে ব্যক্তিগত ভাবে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক জাহাঙ্গীর সেলিম ও কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক সাযযাদ আনসারী।
    শুধু ভাষার মাস আসলেই ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানকে ঘিরে তার কদর বাড়ে। অনুষ্ঠানে তাকে কিছু সম্মাননা স্মারক ক্রেস্ট তুলে দিয়ে তাকে সম্মানিত করে। অথচ অনুষ্ঠানে ভাষা শহীদদের ও ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার বিষয় ও ভাষা দিবসের বিভিন্ন তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তারা বক্তব্য রাখেন। তাদের সামনে যে ভাষা সংগ্রামী জীবন্ত মানুষটি কে একবারও জিজ্ঞেস করেন না তিনি আজ কি দিয়ে খেয়েছেন, রাতে কি খাবেন। কিভাবে তার এই জীবন চলছে। জীবন চলার পথে তার কি চাহিদা রয়েছে।

    কেউ খবর রাখেনা। সাধারণ মানুষ আরও বলেন, আমরা এমন নাটকীয়তা দেখতে চাইনা। আমরা চাই তার প্রকৃত মূল্যায়ন। তাই কোন ব্যক্তি নয় রাষ্ট্র কেই দায়িত্ব নিতে হবে। বাংলাদেশ হওয়ার আগে যেমন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে এ অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা, মাতৃভাষা আদায়ের দাবীতে রাজপথে ভাষা আন্দোলনকারীরা শ্লোগান তুলে ছিলেন, রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই, মানতে হবে মানতে হবে।

    ঠিক তেমনি বলিষ্ঠ কন্ঠে আমরা আজ এই ভাষা সংগ্রামীদের জীবনের চাহিদা পূরণে বলতে চাই। দাবী মোদের একটাই ভাষা সংগ্রামী কয়েস উদ্দিন ভাইয়ের দায়িত্ব রাষ্ট্র নিয়েছে, বাস্তবায়ন চাই, বাস্তবায়ন চাই। পরিশেষে বলতে চাই রাষ্ট্র ভাষার জন্য যারা জীবনে শ্রম দিয়েছেন তাদের মূলায়ন হবে। তাদের দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে। সর্বপুরি কয়েস উদ্দিনরা ভালো থাকবেন, সেটাই প্রত্যাশা।

    বাংলাদেশ সময়: ২:১৬ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ