• শিরোনাম

    রংপুরে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই সেতুর পিলারে ফাটল

    রংপুর ব্যুরো: বুধবার, ১০ মে ২০২৩

    রংপুরে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই সেতুর পিলারে ফাটল

    apps

    নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় করতোয়া নদীর উপর নুনদহ সেতুর পিলারের নিচে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতুটির স্থায়িত্ব ও কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেেেছ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজ স্থগিত রেখেছে। সেতুর মূল পিলারে ফাটল দেখা দেওয়ায় ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, এলজিইডির প্রকৌশলীদের দায়িত্বহীনতা ও লুটপাটের কারণে সেতুর পিলারে নিচে ফাটল ধরেছে। এ সেতুর নির্মাণকাজে গাফলতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান সচেতন মহল।

    জানা যায়, জাতীয় সংসদের ¯িপকার ও রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী পীরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমাঞ্চল এবং দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট, নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলার মানুষের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে করতোয়া নদীর উপর সেতু নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহণ করলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) আওতায় সিআইবি প্রজেক্টের মাধ্যমে করতোয়া নদীর উপর চতরা জিসি গিলাবাড়ী ঘাট ভায়া নিশ্চিন্তবাটি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়কে নুনদহ ঘাট পর্যন্ত করতোয়া নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য ২৬ কোটি ৮২ লক্ষ ৩৩ হাজার ৮৭৮ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। রংপুরের মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ এবং দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদী। এ নদীটির কারণে প্রতিবছর বন্যায় ভেঙে গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় অসংখ্য গ্রাম করতোয়ার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঘোড়াঘাটের সিংড়া ইউনিয়নের মারনুপাড়া এবং পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নের গিলাবাড়ী করতোয়া নদীর নুনদহ ঘাটে সেতু নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। সেতুটি নির্মিত হলে পীরগঞ্জের সঙ্গে ঘোড়াঘাট, নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলাসহ হিলি, জয়পুরহাট এবং গোবিন্দগঞ্জ-বিরামপুর-ফুলবাড়ী-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর হবে।

    এলজিইডি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে করতোয়া নদীর নুনদহ ঘাটে ৩০১ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯ দশমিক ৮ মিটার প্রস্থের এ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিপি এল জেভি ৫২ ছাত্তার ম্যানসন ও প্যান্স লাইন্স। শর্তানুযায়ী ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্রিজের নির্মাণকাজ স¤পন্ন হওয়ার কথা ছিল। অথচ এখন পর্যন্ত নুনদহ ব্রিজের মাত্র ৭০ শতাংশ স¤পন্ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে বছর দু’য়েক ধরে নির্মাণকাজ স্থগিত রেখেছে। নদীর পানি শুকিয়ে গেলে সেতুটির ৫নং পিলারটির বেজমেন্ট ফেটে মাটির নিচে ধসে পড়ে যায়। সেতুর পিলারে নিচে ফাটল দেখা দেওয়ার ঘটনাটি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। এলজিইডির পীরগঞ্জ উপজেলা কর্মকর্তাদের দৌড় শুরু হয়। ওই ঘটনায় সম্প্রতি ঢাকা থেকে তিন সদস্যদের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি সেতুটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এসময় স্থানীয় লোকজন সেতুর কাজের গুণগত মান, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ করেন।

    উপজেলা প্রকৌশলী মশিউর মজিবর রহমান বলেন, ২০১৯ সালে সেতুটির পিলার ক্যাপের কাজ হয়। ওই সময়ে করা ৫নং পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ঘটনা দেখতে ঢাকা থেকে এলজিইডির ৩ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত টিম ঘটনা তদন্ত করতে আসে। ওই টিমের সঙ্গে রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলীও ছিলেন। তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় কাজ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া সেতুটির জন্য ৫ একর ৩৩ শতাংশ জমি এখনো অধিগ্রহণ স¤পন্ন হয়নি। কাজ করতে গিয়ে বারবার জমির মালিকদের কাছ থেকে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

    এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী বলেন, সোমবার ঢাকা থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত দল সেতু পরিদর্শন করেছে। ঢাকা থেকে তদন্ত করতে আসা প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা প্রতিবেদন দেওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জমি অধিগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জেলা প্রকৌশল বিভাগের অনুমোদন ও ঢাকার প্রধান প্রকৌশল দপ্তরের অনুমোদনপত্র নিয়ে ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট পীরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে জমা দিয়েছি। জেলা ভূমি কার্যালয় থেকে অনুমোদন এলেই জমির মালিকরা জমি অধিগ্রহণের টাকা পাবে এবং সেতুর নির্মাণকাজেরও গতি বাড়বে।

    বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১০ মে ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ