• শিরোনাম

    গাইবান্ধায় লাল মরিচের হাট

    রংপুর ব্যুরো: রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩

    গাইবান্ধায় লাল মরিচের হাট

    apps

    গাইবান্ধার লাল মরিচ বা শুকনো মরিচের কদর ও চাহিদা দেশব্যাপী রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদীবেষ্টিত জেলার চার উপজেলার চর-দ্বীপচরের শত শত বিঘা জমিতে মরিচের ব্যাপক চাষ হয়। সাধারণত বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরই চরের পলিমাটিতে বীজ ছিটিয়ে এরপর ২-৩ বার নিড়ানি দিলেই বিনা সারে ভাল ফলন হয় মরিচের। পরে রোদে শুকানোর পর হাট-বাজার হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মরিচের চাহিদা পূরণ করে থাকে।

    ফুলছড়ি উপজেলায় মরিচ চাষ বেশি হওয়ার কারণে জেলার একমাত্র মরিচের হাট বসে ফুলছড়িতে। গজারিয়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র সংলগ্ন হাটে বিভিন্ন চর থেকে প্রচুর মরিচ আসে। ফুলছড়ি মরিচ হাট নামে পরিচিত এ হাট এখন লাল মরিচে রঙিন হয়ে উঠেছে। গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল এবং জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের কয়েকটি চর থেকে কৃষক ও পাইকাররা মরিচ বিক্রয় করতে আসেন বৃহৎ এই মরিচের হাটে।
    আর বগুড়া থেকে মরিচ ক্রয় করতে আসেন পাইকারগণ। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার ২ দিন সকাল ৭টা থেকে হাট বসে। প্রতি হাটে ২ হাজার মণের বেশি মরিচ ক্রয় ও বিক্রয় হয় বলে জানান হাট ইজারাদার। সূর্য উঠার পর থেকে হাটে আসতে শুরু করে মরিচ। নৌকা ও ঘোড়ার গাড়িতে করে ফুলছড়ি উপজেলার টেংরাকান্দি, ফজলুপুর, এরেন্ডবাড়ি, উড়িয়া, ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর মোল্লারচর, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল এবং জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ ,মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ ও বকসীগঞ্জ উজেলার কয়েকটি চর থেকে কৃষক ও পাইকাররা মরিচ বিক্রয় করতে আসে এ মরিচ হাটে। লাল টুকটুকে মরিচে সাজানো বস্তায় কানায় কানায় ভরে উঠেছে হাট। এরপর শুরু বেচাকেনার হাঁকডাক।
    গত মঙ্গলবার হাটে দুপুরের আগেই কমপক্ষে আড়াই হাজার মণ শুকনা মরিচ বিক্রয় হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার ৭ উপজেলায় ২ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে মোট উৎপাদন হয়েছে ৫ হাজার ৭৫ মেট্রিক টন শুকনা মরিচ। এরমধ্যে শুধু ফুলছড়িতে ৯৯২ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৮ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে জেলার ছয় উপজেলায়। গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও মরিচ হাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি জিহাদুর রহমান মওলা বলেন, ফুলছড়ি হাটে হাইব্রিড, বগুড়ার জাত ও স্থানীয় জাতের শুকনো মরিচ বেশি আমদানি হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা ও প্রাণ কো¤পানিসহ অন্য কো¤পানির প্রতিনিধিরাও এ হাট থেকে শুকনো মরিচ ক্রয় করে নিয়ে যান। বগুড়া থেকে ফুলছড়ি হাটে মরিচ ক্রয় করতে আসা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভোরবেলা ট্রাক নিয়ে এ হাটে মরিচ ক্রয় করতে এসেছিল।

    হাটে মরিচের দাম খুব চড়া। তবে ফুলছড়ির মরিচ ভালো মানের। সাড়ে ১৫ হাজার টাকা মণ দরে প্রায় ৩৫ মণ মরিচ ক্রয় করা হয়েছে। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে আসা খলিলুর রহমান বলেন, প্রতি বছরই এ হাট থেকে শুকনা মরিচ ক্রয় কওে দিনাজপুরের হাট-বাজারের বিক্রয় করেন। গত বছর মরিচ মণপ্রতি ১০ থেকে সাড়ে ১০ হাজার টাকায়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর মরিচের মান ভালো। তবে দাম খুবই চড়া। উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের গলনাচরের কৃষক আবদুল মজিদ বলেন, বিঘাপ্রতি কাঁচা মরিচ উৎপাদনে ব্যয় হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
    বিঘায় ৫০ মণের বেশি মরিচ উৎপন্ন হয়। ৫০ মণ কাঁচামরিচ জমিতে লাল রং হয়ে পাকার পর তা রোদে শুকিয়ে ১০ মণের মতো শুকনা মরিচ হয়। শুকাতে শ্রমিকসহ অন্যান্য আরও খরচ হয় হাজার দশেক টাকা। সে হিসেবে ১০ মণ মরিচ বিক্রয় হচ্ছে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায়। ব্যয় বাদে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার মতো আয় হয়। ফুলছড়ি হাট ইজারাদার বজলুর রহমান মুক্তা বলেন, সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার ২ দিন সকাল ৭টা থেকে হাট বসে। প্রতি হাটে আড়াই থেকে তিন হাজার মণ শুকনো মরিচ বিক্রয় হয়। প্রতিমণ
    মরিচ ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, গাইবান্ধার ৭টি উপজেলায় যে পরিমাণ মরিচের চাষ হয় তার অর্ধেকই উৎপন্ন হয় ফুলছড়ি উপজেলায়। আবহাওয়া ও চরের উর্বর মাটিতে দিন দিন মরিচ চাষের পরিমাণ বাড়ছে। চরের লোকজন মরিচ চাষে ঝুঁকে পড়েছে। কৃষকদের পরামর্শসহ সবধরনের কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

    বাংলাদেশ সময়: ১০:৩০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ