• শিরোনাম

    সাদুল্লাপুরে ভার্মী কম্পোস্ট সার উৎপাদনে সফল উদ্দোক্তা সুমন।

    সাদুল্লাপুর প্রতিনিধি শনিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২১

    সাদুল্লাপুরে ভার্মী কম্পোস্ট সার উৎপাদনে সফল উদ্দোক্তা সুমন।

    সাদুল্লাপুরে ভার্মী কম্পোস্ট সার উৎপাদনে সফল উদ্দোক্তা সুমন।

    apps

    গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের ধাপেরহাট ইউনিয়নের কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী সুমন ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনে সফল উদ্দোক্তা।কেঁচো সার উৎপাদন করে সে বেকারত্ব ঘোচাতে চায়। উদ্দোক্তা মাজাহারুল ইসলাম সুমন ধাপেরহাটের ইসলামপুর গ্রামের সাদেকুল ইসলামের পুত্র। উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ইতিমধ্যেই সে বানিজ্যক ভাবে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেছে। করোনা কালে পড়াশুনার পাশাপাশি এক বছরের বেশী সময় ধরে একটি সেড তৈরি করে আট রিং এ ২ কেজি কেঁচো,আটটি দেশী গরুর গোবর দিয়ে কেঁচো/ ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করে লাভের মূখ দেখতে শুরু করেছে।তাই তিনি রিং এর সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তার সেডে চল্লিশটি রিং রয়েছে। বাড়ির গোবর সংকুলান না হওয়ায় সে বাহির থেকে প্রতি মণ গোবর ৩০/৪০ টাকায় ক্রয় করে কেঁচো সার উৎপাদন করছে । উল্লেখ্য যে, এক মণ গোবরে ২০ কেজি কেঁচো সার উৎপাদন হয়। সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ইতিমধ্যই তার বাড়িতে ১২ ফুট লম্বা ৭ ফুট প্রস্হ ৩.৫ ফুট গভীরতা মাঝখানে ৩ ফুট পর পর চারটি ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির চৌবাচ্চা নির্মাণ করে দিয়েছে। যাতে পর্যাপ্ত কেঁচো ব্যবহারে ৮০/১০০ মণ কেঁচো সার উৎপাদন করা সম্ভব হবে। সুমন জানায় আমি নিজে জমিতে কেঁচো সার ব্যবহার করে ভালো ফলা ফল পাচ্ছি। আমি আশাবাদী এখান থেকে আমি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা উপার্জনের পাশাপাশি নিজে চাষাবাদ করতে পারবো ও এলাকার কৃষকদের ফসলের উৎপাদন ফলন বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতে পারবো। তিনি বলেন,এলাকার কৃষকরা যখন আমার নিকট সার কিনতে আসে তখন আমার খুব ভালো লাগে। কেঁচো /ভার্মি কম্পোস্ট একটি জৈব সার যা জমির উর্বর শক্তি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়। ১৫-২৫ দিনের বাসী গোবর খেয়ে কেঁচো যে মল ত্যাগ করে এবং তার শরীরে থাকা রাসায়নিক পদার্থ বের করে দেয়ার পর যে মল ত্যাগ করে তাই কেঁচো / ভার্মি কম্পোস্ট সার। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে ৫৫০০ প্রজাতির কেঁচো নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষনা করেছে। কেঁচো মাটির নীচে স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা বসবাস করে। কেঁচো শরীরে ১০০/১২০ খন্ডে বিভক্ত চোখ নাক কান, ফুসফুস না থাকায় ত্বক দিয়ে শ্বাস -প্রশ্বাস চালায়।কেঁচো দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে একটি প্রাপ্ত বয়স্ক কেঁচো একটি ডিম থেকে ১০/১৫ টি বাচ্চা দেয়। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক কেঁচো জীবনচক্রে ১৮০০/২০০০ ডিম দেয়।বাংলাদেশ কেঁচো সার তৈরিতে থাইল্যান্ড,চীন,অস্ট্রেলিয়া,ভিয়েতনাম ও ভারত থেকে আমদানিকৃত কেঁচো ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ এখন প্রচুর পরিমাণে কেঁচো পাওয়া যায়।যার বর্তমান বাজার দর প্রতি কেজি ৭০০/৮০০ শত টাকা। কেউ যদি নিজের জমিতে কেঁচো সার ব্যবহারের জন্য সার উৎপাদন করতে চায় তাহলে যে সকল উপকরণ লাগবে তাহলো,গোবর,কেঁচো, চালুনি বা ছাকনি, রিং বৃষ্টি রোদ রক্ষায় সেড। যেভাবে কেঁচো সার উৎপাদন করতে হবে তাহলো প্রতি রিং এ ১৫/২৫ দিনের এ্যামোনিয়াম গ্যাস মুক্ত বাসি পঁচা গোবর ২০/২৫ কেজি । আড়াই শো গ্রাম কেঁচো (তবে কেঁচো যত বেশী তত দ্রুত সার উৎপাদন হবে)। মাসে প্রতি কেজি গোবর থেকে ৫০০ গ্রাম কেঁচো সার উৎপাদন হবে। সাবধানতা, জৈবসার থেকে কেঁচো আলাদা করার সময় খুব সাবধানে চালুনি দিয়ে চালতে হবে যাতে কেঁচো আঘাত প্রাপ্ত না হয়।তাছাড়া ইদুর,পিপড়া,মুরগী তেলাপোকার প্রিয় খাবার কেঁচো। তাই এদের কবল থেকে কেঁচো রক্ষায় মশারী বা চটের বস্তা ব্যবহার করতে হবে। কেঁচো বংশ বৃদ্ধি জন্য চালুনি দিয়ে চালা কম্পোস্টর ভিতরে থাকা ডিম /কোকুন থেকে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ঠান্ডা জায়গায় রেখে বাসি পঁচা গোবরের দলা তৈরি করে ৭/৮ দিন কম্পোস্টে রেখে দিলে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে গন্ধে পঁচা গোবরের দলায় প্রবেশ করবে বাচ্চা। উক্ত দলা বাচ্চা সহ পূর্ব থেকে রিং এ রাখা এ্যামনিয়াম মুক্ত পঁচা গোবরের রিং এ রেখে দিলে ৭/৮ সপ্তাহে বাচ্চাগুলো প্রাপ্ত বয়স্ক কেঁচোতে পরিনত হবে।একটি প্রাপ্তবয়স্ক কেঁচো ৫০/৬০ দিন বেঁচে থাকে। প্রতি ৩৩ শতাংশ জমিতে ধান,ভুট্টা, মরিচ,হলুদ, চাষে শেষ চাষের সময় ৩০০ কেজি,বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো,ঢেড়স, পেঁয়াজ,রসুন ৩০০-৫০০ কেজি। লেবু,কুল,পেয়ারা,রোপনের সময় ও ফুল আসার পূর্বে বছরে প্রতি গাছে ০২ কেজি,আম,নারিকেল, রোপনের সময় গাছ প্রতি ২ কেজি এবং ৫ বছর অধিক প্রতি গাছে ৫-১০ কেজি কেঁচো সার ব্যবহার করা যেতে পারে। সাদুল্লাপুরের ইদিলপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের সবজী চাষী কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন,এ বছর শসার জমিতে কেঁচো সার ব্যবহার করে ভালো ফল পেয়েছি। আমি একই জমিতে শীম চাষে আবারও ব্যবহার করছি এতে করে জমিতে আমার রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমেছে।এ ফসলও ভালো হয়েছে আশা করি ফলন ভালো পাবো। আমার দেখাদেখি অনেকেই কেঁচো সার ব্যবহার শুরু করেছে। উপজেলা কৃষি উপসহকারী অফিসার মোস্তাফিজার রহমান বলেন, কেঁচো কে গরিবের লাঙ্গল বলা হয়।মাটিতে মাত্রা অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ওকীটনাশক ব্যবহারের ফলে জমিতে আর বেশী কেঁচো দেখা যায় না। কেঁচো সার ব্যবহারে মাটিতে পুষ্টি উপাদান যুক্ত হয়, বেলে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মাটির গঠন উন্নত হয় এবং উৎপাদিত ফসলের গুণগতমান পুষ্টি গুন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ জৈব সার মাটিতে অনুজীবের কার্যক্রম বৃদ্ধি করে, সবজি ফসলে মালচিং এর মত কাজ করে। অন্যান্য কম্পোস্টের চেয়ে কেঁচো কম্পোস্ট প্রায় ৭-১০ ভাগ পুষ্টিমান বেশি থাকায় মাটির স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এবং ফসল উৎপাদনে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। উপকারীতা পাওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা উপজেলায় বাড়ছে।

    বাংলাদেশ সময়: ৬:৩৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২১

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ