• শিরোনাম

    হিট স্ট্রোক থেকে সাবধান

    মোঃ ওমর ফারুক, প্রতিবেদনঃ মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৩

    হিট স্ট্রোক থেকে সাবধান

    apps

    গ্রীষ্মের প্রখর সৌরতাপে তেঁতিয়ে উঠছে পরিবেশ। তপ্ত হাওয়ায় দিনদুপুরে বাইরে বেরুলে এক অসহনীয় ঝঁলসানো উষ্ণতার মুখোমুখি হচ্ছে মানুষ। এমন তীব্র গরমে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে কাজ করলে অনেকগুলো অসুখ-বিসুখ হতে পারে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে মারাত্মক যে অবস্থা সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় হিট স্ট্রোক বা তাপাহত।

    অধিক তাপমাত্রায় দেহের কার্যক্ষমতা কমে যায়। তপ্ত আবহাওয়ায় মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়ে। দেহ নেতিয়ে পড়ে। তাপাহত হলে শরীরে অস্বিস্তকর অবস্থা তৈরি হয়। শরীরের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। অনেক সময় তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট অতিক্রম করে। গা পুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় ঘর্মগ্রন্থি। প্রথম দিকে অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে পানি এবং খনিজ পদার্থ দুটোই শরীর থেকে বের হয়ে শরীরে পানি এবং লবণের ঘাটতি তৈরি করে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে শরীরে এক অস্বিস্তকর পরিস্থিতির তৈরি হয়। ঘাম শরীরের সঙ্গে লেগে থাকে। শরীর ঠাণ্ডা হতে চায় না।

    বসা থেকে দাঁড়ালে যদি মাথা চক্কর দেওয়ার অনুভব তৈরি হয়, কিংবা চোখেমুখে অন্ধকার দেখতে শুরু করেন তাহলে বুঝতে হবে আপনি উষ্ণতাজনিত চরম পরিশ্রান্তির শিকার। এর সঙ্গে শুরু হতে পারে মাথাব্যথা, ক্ষুধামন্দা, শ্রান্তি ক্লান্তি শারীরিক দুর্বলতা, মাংসপেশিতে ব্যথা এবং পেশিতে খিল লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা। প্রথম দিকে ঘাম নিঃসরণ বেড়ে গেলে ও পরবর্তী সময়ে এক সময় এটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা তখন হু হু করে বাড়তে থাকে। শরীরের তাপ ক্ষয় বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় মানসিক বিপর্যস্ততা, এলোমেলো আচরণ, মতিভ্রম, কথাবার্তায় আড়ষ্টতা, খিঁচুনি। এক পর্যায়ে রোগী অজ্ঞান পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।

    ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরা
    ————–
    হিট স্ট্রোকে বয়স্ক এবং শিশুরা আক্রান্ত হতে পারেন সবচেয়ে বেশি। শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হলে তৃষ্ণার অনুভূতি জাগে। এই অনুভূতির কেন্দ্র মিস্তষ্ক। বয়স্কদের তৃষ্ণার অনুভূতি কমে যায়। ফলে পানিশূন্যতা তৈরি হলেও পানি গ্রহণের অনুভূতি না থাকায় সংকট তৈরি হয়। যারা পেশাগত কারণে দীর্ঘ সময় বাইরে অবস্থান করেন তারাও অত্যন্ত ঝুঁকিগ্রস্ত। বিশেষত ক্রীড়াবিদ, ট্রাফিক পুলিশ, সামরিক বাহিনীর সদস্য, ক্ষেতে খামারে কর্মরত শ্রমিক, দিনমজুর,রিকশাচালক। এছাড়া স্থূলকায় ব্যক্তিরাও ঝুঁকিতে অবস্থান করেন। তাদের ত্বকের নিচে রয়েছে চর্বির পুরু স্তর। এই স্তর ভেদ করে অনেক সময় তাপ ক্ষয় হতে পারে না। কিছু কিছু ওষুধ এবং অ্যালকোহল হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

    হিট স্টোক প্রতিকার
    ——————
    হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন পানিশূন্যতার লক্ষণাদি সম্পর্কে জানা এবং প্রতি ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর পর পানি পান করা জরুরি। অতিরিক্ত ঘাম হলে লবণ লেবুর শরবত গ্রহণ করতে হবে। বাইরে বেরোলে সঙ্গে পানির বোতল রাখা। গরমের সময় সুতি কাপড়ের পাতলা ঢিলেঢালা জামা পরিধান করা দরকার। জুতা-মোজা গরমের সময় বাদ দেওয়া।

    কম আর্দ্রতাযুক্ত ঠাণ্ডা পরিবেশে অবস্থান করে বিশ্রাম নিতে হবে মাঝে মধ্যেই। পারলে ফ্যানের নিচে অবস্থান করতে হবে। যে সব খাবার পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে সে সব খাবার পরিহার করা। অতিরিক্ত আমিষ, চিনি এবং লবণাক্ত জাতীয় খাবার পানিশূন্যতাকে আমন্ত্রণ জানায়।

    চিকিৎসা উপায়
    —————
    মনে রাখা দরকার হিট স্ট্রোক একটা মেডিকেল ইমারজেন্সি। তাপপ্রবাহের কারণে এমনটি সৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিকভাবে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এমনটি হলে রোগীর জামা-কাপড় খুলে ফেলুন। ঠাণ্ডা বরফ পানি শরীরের ওপর ছিটিয়ে দিন। ফ্যান ছেড়ে বাতাসের ব্যবস্থা করুন। বোগলে এবং কুচকির নিচে বরফের প্যাকেট রাখুন।

    শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বরফ পানির গোসল করাতে পারলে সবচেয়ে ভালো। রোগী পানি পান করতে সক্ষম হলে তাকে ঠাণ্ডা পানি পান করতে দিন। রোগীর তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কাছাকাছি না আসা পর্যন্ত এ ব্যবস্থা চলমান রাখুন।

    তাপমাত্রা না কমলে কিংবা জটিলতা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা দরকার। হিট স্ট্রোকে সৃষ্ট জটিলতার জন্য প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা।

    (সংগৃহীত) মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, ঢাকা

    বাংলাদেশ সময়: ৯:২৪ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    মৃত্যু ২৮, শনাক্ত ১৫৪০

    ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

    আর্কাইভ