আসাদুজ্জামান সুমন, সাঘাটা (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ বৃহস্পতিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশাকে উপক্ষো করে জমি তৈরি ও বোরো ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোরো চাষিরা। তবে এ বছরে অর্থ সংকট আর খরচের ঊর্ধ্বগতির কারণে কৃষকদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। কৃষকরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবার তারা বাম্পার ফলন পাবেন বলে আশা তাদের।
জানাগেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর বাজারে ধানের দাম কিছুটা বেশি থাকায় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধান চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। গ্রামাঞ্চলে আবাদি ও অনাবাদি জমিতে ব্যাপকহারে ধান চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে, শ্যালো মেশিন কিংবা বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে জমিতে পানি সেচ দিয়ে ধান রোপণের জন্য জমি উপযোগী করে তুলছেন বেশির ভাগ কৃষক। লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ পদ্ধতি এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। অধিকাংশ জমিতে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে জমি চাষ করা হচ্ছে। বীজতলা তৈরি ও জমিতে রোপণের জন্য ধানের চারা উত্তোলনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। তবে সারা দেশে ধানের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান আবাদ বাড়ছে বলে জানান স্থানীয় চাষিরা। সাঘাটা উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে ১৪ হাজার ৯ শত ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরেজমিন তথ্য সংগ্রহকালে সাঘাটা উপজেলা ঘুড়িদহ, মথরপাড়া, যাদুর তাইড়সহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে মাঠে দেখা যায় বোরো রোপণ করছেন চাষিরা। পুরোদমে বোরো ধান রোপণ শুরু হয়েছে। অন্যান্য বছরে এই চাষাবাদের সময় কৃষকের মুখে হাসি দেখা গেলেও এ বছর রয়েছে মলিন মুখে। হাল, সার—বীজ, বিদ্যুত, ডিজেল ও শ্রমিকসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর বোরো আবাদের অতিরিক্ত খরচে চরম হিমসিম খাচ্ছেন তারা। চাষাবাদের খরচ জোগাতে অনেকেই ঋণের ফাঁদে পড়ছেন। সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন দরিদ্র কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, চলতি মৌসুমে বীজতলা তৈরির পর কুয়াশায় কিছু চারা নষ্ট হয়েছে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে বিদ্যুতের দামও। বর্তমানে প্রতিবস্তা ইউরিয়া ও টিএসপি সার ১ হাজার ৩৫০ টাকা, এমওপি ১ হাজার টাকা, দস্তা প্রতিকেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এর আগে প্রিতিকেজি হাইব্রিড জাতের বীজ ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকায় কিনেছেন কৃষকরা। এছাড়া রোপণের সময় শ্রমিকের মজুরী ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে। তবে কাটা—মাড়াইয়ের সময় শ্রমিক সংকটে দেখা দিলে তাদের মজুরী গুণতে হবে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ বছর জমিতে তারা বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করছেন। অনেকে শ্রমিকের সাথে নিজেরাও বোরো ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত রয়েছেন। সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ গ্রামের কৃষক শাহজামাল সাবু, আবুল কালাম, হাবিজার রহমান সহ অনেক কৃষকই জানান, এবার বিঘা প্রতি ২০ কেজি ডেপ, ১২ কেজি পটাস, ৫ কেজি জিপসাম এবং ৫ থেকে ৭ ভ্যান গোবর সার মিশিয়ে জমিতে পানি দিয়ে কাঁদা তৈরি করছেন তারা। পরে বীজতলা থেকে চারা এনে সেই জমিতে রোপণ করছেন।
এরই মধ্যে প্রায় ১০—১৫ শতাংশ জমিতে চারা রোপণ শেষ হয়েছে। সাঘাটা উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ হারুনুর রশিদ বলেন, গেলো বোরো মৌসুমে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় এবারও দাম ভালো পাওয়ার আশায় বোরো ধান চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। সাঘাটা উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৪ হাজার ৯ শত ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ৮ হাজার ৯ শত ৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপন করা হয়েছে। এ বছর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রোপণ হতে পারে বলে জানান, কৃষিবিদ মোঃ হারুনুর রশিদ।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel