• শিরোনাম

    শেরপুরে নিকাহ্ রেজিস্ট্রার আমিনুলের বিরুদ্ধে অবৈধ বই ব্যাবহার-কাবিননামা লোপাটসহ নানা অভিযোগ

    শেরপুর প্রতিনিধি: মঙ্গলবার, ০৩ জানুয়ারি ২০২৩

    শেরপুরে নিকাহ্ রেজিস্ট্রার আমিনুলের বিরুদ্ধে অবৈধ বই ব্যাবহার-কাবিননামা লোপাটসহ নানা অভিযোগ

    apps

    শেরপুরে নিকাহ্ রেজিস্ট্রার আমিনুলের বিরুদ্ধে একাধিক অবৈধ বই ব্যাবহার করে বাল্য বিয়ে নিবন্ধন, কাবিননামা লোপাট, বাল্য বিয়ে নিবন্ধনের সময় উভয় পক্ষের কাছে ৩ থেকে ৪ গুন টাকা গ্রহন, নকল প্রদানের সময় বাড়তি টাকা দাবিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জেলা রেজিস্টারকে লিখিত অভিযোগ প্রদান সহ আদালতে মামলা হয়েছে। জেলা রেজিস্ট্রার থেকে লিখিতভাবে কাজিকে তলব করে শুনানীগ্রহনকালে নকল বই সাথে না আনায় তদন্তে আসছেনা কোন অগ্রগতি। তবে জেলা রেজিস্ট্রার গোপন ক্যামারায় ধারনকৃত কাজীর স্বীকারোক্তির ভিডিও সহ প্রয়োজনীয় তথ্য মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন।

    তার অনিয়মের অংশ হিসেবে শেরপুর জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন চরশ্রীপুর গ্রামের মো. সামছের আলী নামের এক ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, আমার অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেকে জোরপূর্বক আটকিয়ে এই কাজি বিয়ে নিবন্ধন করিয়েছে। আমরা তার কাছে গেলে তিনি বিয়ের কথা স্বীকার করেন এবং পূর্বের নিবন্ধন বাতিল করে ২ লক্ষ টাকা দেনমোহর কমিয়ে নগত ২লক্ষ টাকা আদায়ের প্রস্তাব দেন। এবং আদালতে মামলা করলে তিনি তাকে আটকাতে পারবেনা বলে হুমকি দেন। তিনি আরও বলেন, কোর্ট তলব করলে আমি আমার চলতি বই কোর্টে প্রদর্শন করবো। আমার নকল বইতো আর দেখাবো না। এই আলোচনা গুলো আমরা গোপন ক্যামারায় ধারন করেছি যেন কাজি অস্বীকার করতে না পারে।

    এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সাইদুর রহমান (২০) জানান, আমার স্ত্রীর সাথে দীর্ঘদিন যাবত প্রেমের সম্পর্ক চলছিলো। তবে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম আমার পূর্ন বয়স হলে আমরা আইনগত ভাবে বিয়ে করবো । কিন্তু ২৫ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে আমাকে ফোন দিয়ে দেখা করার জন্য বলে। দেখা করার এক পর্যায়ে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে আমাকে আটকিয়ে কোন ধরনের কাগজপত্র না নিয়ে আমিনুল কাজিকে দিয়ে অবৈধ ভাবে বিয়ে নিবন্ধন করায়। সেই দিন থেকে আন্তসম্মানের ভয়ে টানা ১৮দিন আমরা শশুর আত্বিয়ের বাড়িতে স্ত্রী সহ অবস্থান করি। এই অবস্থায় আমার শশুর সহ বিয়ের স্বাক্ষী খুরশেদ আলম (মিছকিন) কাজির কাছে বিয়ের নকল উত্তোলনের জন্য গেলে সে উভয়পক্ষকে আপোষ ফয়সালা করে আসতে বলেন। পরবর্তীতে আমার বাবা এই বিয়ে মেনে না নেওয়াই আমার শশুর তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং কাজীর পরামর্শে আমার নামে আদালতে ধর্ষন মামলা করে। এব্যাপারে দুই জনের অন্তরঙ্গ মহুর্তের কিছু ছবি দেখিয়ে সাইদুরের স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এই ছবি গুলো আমাদের বিয়ের আগের তোলা। এবং তাদের মধ্যে ৫ বছরের প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন। নকল লোপাটের ঘটনায় কাজির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন তিনি।যার মামলা নং ১৪১৪/২২।

    অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকার কর্তৃক যে পরিমান বই কাজিকে সরবরাহ করা হয় তার চেয়ে তিনগুন নকল বই সে ব্যাবহার করে। সেই নকল বই দিয়েই অবৈধ বাল্য বিবাহ নিবন্ধন করে। আইনগত কোন ঝামেলা তৈরি হলে আদালতের চাহিদা মোতাবেক নকল বই প্রেরন না করে মূল বই আদালতে প্রেরন করে বিধায় তাদেরকে অপরাধী হিসেবে সনাক্ত করা যায়না। কারন আসল বই এ কোন ধরনের ঝামেলাপুর্ণ বিয়ে নিবন্ধন করা হয়না। এই নকল বইয়ের কারসাজিতেই চলছে তাদের রমরমা ব্যাবসা ও বাল্য বিবাহ নিবন্ধন। এছাড়াও এসমস্ত অবৈধ নিবন্ধনে তারা উভয় পক্ষের কাছ থেকে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি এর কয়েকগুন টাকা নিয়ে থাকে।

    এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বলাইরচর ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিস্ট্রার আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক দুআ-কালেমা পড়িয়ে বিবাহ পড়িয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমি আপোষ ফয়সালার চেষ্টা করেছি। যেহেতু সংসার হয়েছে সেহেতু বউ না মেনে নিলে ধর্ষন মামলা হবে।

    এব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রার মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, গত ২৫ অক্টোবর সামছের আলীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুনানিতে সাক্ষীগণ অভিযোগের স্বপক্ষে বক্তব্য প্রদান করছেন। কিন্তু কাজীর চলতি রেজিস্ট্রার বই এ সেই তারিখে বিবাহ রেজিস্ট্রি করার কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। কাজীর ভিডিও স্বীকারোক্তি দিয়ে আমি তো কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবোনা। এ ব্যাপারে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য ভিডিও সহ অভিযোগটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

    বাংলাদেশ সময়: ৩:৩১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৩ জানুয়ারি ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ