• শিরোনাম

    নেই ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা পর্যটকশূন্য ঈসা খাঁর সমাধিস্থল

    কালীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধিঃ রবিবার, ০৭ মে ২০২৩

    নেই ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা  পর্যটকশূন্য ঈসা খাঁর সমাধিস্থল

    apps

    ভাওয়াল সম্রাজ্যের গাজী বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত ফজল গাজী ও বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম সমর নায়ক সোনারগাঁওয়ের বীর ঈসা খাঁর মধ্যে বন্ধুত্ব ও বিশ্বস্ততার সেতুবন্ধ রচিত হয়েছিল। বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ বীর ঈসা খাঁর মৃত্যুর পর তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুরে সমাধিস্থ করা হয়। দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল এই সমাধি। কয়েক দশক অনুসন্ধানের পর অবশেষে বক্তারপুরে ঈসা খাঁর সমাধি আবিষ্কৃত হয়। এরপর সেই সমাধি ঘিরে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। কিন্তু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সেখানে পর্যটকদের আনাগোনা নেই। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আসসাদিকজামান জানান, ঈসা খাঁর সমাধিটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতাভুক্ত করা হলে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব।

    অনুসন্ধানে জানা যায়, মোগল সাম্রাজ্যের সেনাপতি মানসিংহের সঙ্গে যুদ্ধ বাধার আশঙ্কায় বন্ধুবর ফজল গাজী তৎকালীন ভাওয়াল পরগনার বর্জাপুর, বর্তমান বক্তারপুর নামক স্থানে এসে একটি নৌপোতাশ্রয় ও নগর দুর্গ গড়েন। ঈসা খাঁ এই বক্তারপুরে প্রায়ই অবসর কাটাতে ও মোগল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নীতি নির্ধারণের জন্য আসতেন। ১৫৮৩ সাল পর্যন্ত বর্জাপুরে ঈসা খাঁর অস্থায়ী বসতবাড়ি ছিল। বাংলায় পাঠান সেনাধ্যক্ষ মাসুম খাঁর অবস্থানকালে ১৫৮৩ সালে শাহবাজ খাঁ বক্তারপুর আক্রমণ করে ঈসা খাঁর নৌপোতাশ্রয় বা নগর দুর্গটি ধ্বংস করে দেয়। যুদ্ধ শেষে ক্লান্ত বীর ঈসা খাঁ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং দুই-তিন মাস অসুস্থ থাকার পর ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৬ সেপ্টেম্বর বক্তারপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সোনারগাঁওয়ের পরিবর্তে বক্তারপুরেই তাকে সমাহিত করা হয়।

    ইতিহাসের কোথাও ঈসা খাঁর সমাধিস্থলের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। গত শতাব্দীতে দীর্ঘ ৪৫ বছর অনুসন্ধান করার পর একাধিক প্রমাণ সাপেক্ষে বক্তারপুরে ঈসা খাঁর সমাধি আবিষ্কার করা সম্ভব হয়। এই সমাধির পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তর পাশে ঘাটের আলামতসহ তিনটি বড় দীঘির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। কালের বিবর্তনে নৌপোতাশ্রয় ও নগর দুর্গ বর্জাপুরের অস্তিত্ব বিলীন হলেও এখনো বর্তমান সেনাকুঠির, দীঘি ও সে সময়ে ব্যবহৃত পুরনো ইট ভাওয়াল বীর ফজল গাজী ও সোনারগাঁওয়ের বীর ঈসা খাঁর নগর দুর্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করে। ইতোপূর্বে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক সমাধিস্থল সংস্কার এবং পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সমাধিস্থলে যাওয়ার রাস্তাটি অত্যন্ত সরু ও চলাচলের অনুপযোগী। ফলে দেশের বিভিন্ন পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ঈসা খাঁর সমাধি নিয়ে আগ্রহ থাকলেও যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় সেখানে পর্যটকদের আনাগোনা নেই।

    এ বিষয়ে পৌরসভার বালীগাঁও গ্রামের বাসিন্দা বাবু পরিতোষচন্দ্র ঘোষ বলেন, ঈসা খাঁর সমাধিটি আমাদের ঐতিহাসিক নিদর্শন। যাতায়াত সমস্যার কারণে সমাধি এখন প্রায় পর্যটকশূন্য। সমাধিটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে নিয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসবে বলে আশা করছি।

    এ বিষয়ে বক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতিকুর রহমান আখন্দ ফারুক জানান, আমি ব্যক্তি-উদ্যোগে ঈসা খাঁর সমাধিতে একটি সাবমারসিবল টিউবওয়েল ও একটি টয়লেট নির্মাণ করে দিয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে পাকা রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এ ছাড়াও যাতায়াতের রাস্তার জন্য পর্যাপ্ত জমি নেই। জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণসহ বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গ্রহণের সুপারিশ করেছি।

    এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসসাদিকজামান জানান, ঈসা খাঁর সমাধিটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতাভুক্ত করার জন্য উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে। এটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে ন্যস্ত হলে তারা তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগসহ সরকারি বিভিন্ন ফান্ডের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন। ব্যক্তি-উদ্যোগে মাজারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব নয়। আমরা সকলের সহযোগিতায় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা করছি।

    বাংলাদেশ সময়: ৬:৫৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৭ মে ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ