• শিরোনাম

    ডিএসসিসি ৬৫ নং ওয়ার্ডে সড়ক জুড়ে মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে

    শরীফ আহমেদ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন: শনিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৩

    ডিএসসিসি ৬৫ নং ওয়ার্ডে সড়ক জুড়ে মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে

    apps

    রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার অন্তর্গত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৬৫ নং ওয়ার্ডের সড়ক গুলোতে মৃত্যুকূঁপে পরিণত হয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে রাজধানী ঢাকায় শাহজাহানপুরে শিশু জিহাদ আর রাজধানীর শ্যামপুরের নীরবের করুণ মৃত্যুতেও টনক নড়েনি ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক পক্ষে। এই উন্মুক্ত ম্যানহোলে একের পর এক দুর্ঘটনা ম্লান সংশ্লিষ্ট সংস্থা গুলোর অর্জন।

    দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ করে দেখা যায় মাতুয়াইল মেডিকেল রোডে অর্ধেকের বেশি ঢাকনা বিহীন ম্যানহোল অরক্ষিত। প্রতিদিন রাতে ঘটছে মারাত্মক দুর্ঘটনা। কারণ মাতুয়াইল মেডিকেল রোডে ম্যানহোল ও স্যুয়ারেজ লাইনগুলোর নেই কোন ঢাকনা। উন্মুক্ত থাকা এসব ম্যানহোল ও স্যুয়ারেজ লাইনে পড়ে দুর্ঘটনার ফাঁদে পড়ছে এলাকাবাসী। শিশু জিহাদ আর নীরবের মৃত্যুর পর কিছুটা উদ্যোগী হয় স্হানীয় সরকার।

    এরপর রাজধানীর ঢাকা ভিতরে ঢাকনা বিহীন ম্যানহোলের তথ্য জানতে চান হাইকোর্ট।এমন তালিকা চূড়ান্ত করতে কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে একটি কমিটিও করে এতে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।কিন্তু কমিটি কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়।সে তালিকা আর চূড়ান্ত হয়নি।এলাকাবাসী ম্যানহোলের তথ্য জানাতে চালু করা হয় হটলাইন ১৬১৬২।

    এই নাম্বারে ফোন করে ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলের তথ্য দিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই তা পুনঃস্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ফোন করে দেখা গেছে নম্বরটি অকেজো।গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, রাজধানীর অধিকাংশ ম্যানহোল ঢাকা ওয়াসার নিয়ন্ত্রণাধীন। ঢাকা ওয়াসার নিয়ন্ত্রণে থাকা ম্যানহোলের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। এর মধ্যে ড্রেনেজ লাইনের ওপর প্রায় ১১ হাজার এবং স্যুয়ারেজ লাইনের ওপর প্রায় ২৯ হাজার ম্যানহোল রয়েছে।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু ঢাকা ওয়াসা ও দুই সিটি ছাড়াও নগরীতে ডেসা, টিঅ্যান্ডটি, বাংলাদেশ রেলওয়ে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), বিটিসিএ ও বেসরকারি মোবাইল অপারেটর কোম্পানিসহ বিভিন্ন সংস্থার ম্যানহোল রয়েছে। নগরীর স্যুয়ারেজ ও পানি নিষ্কাশনের লাইনে এই ম্যানহোলগুলো স্থাপিত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের গভীর ও অগভীর ড্রেন রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার।

    এর মধ্যে ডিএসসিসির ১৪ হাজার ২৪০টি ম্যানহোল রয়েছে। ঢাকা ওয়াসার গভীর ড্রেন রয়েছে ৩৪৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে ম্যানহোল রয়েছে ১৮ হাজার ৩৫৮। ঢাকা উত্তর সিটির গভীর-অগভীর ড্রেনের পরিমাণ ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার। এসব ড্রেনের ওপর স্ল্যাব সিস্টেমের ম্যানহোল তৈরি করা হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা অন্তর্ভুক্ত ডিএসসিসি ৬৫ নং ওয়ার্ড মেডিকেল রোড হতে বড় মুরগীর ফার্মের মোড় পর্যন্ত বেশকিছু ঢাকনা বিহীন ম্যানহোলের চোখে পড়ার মতো।সড়কে ৭/৮ টি ম্যানহোল ঢাকনা বিহীন উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে।

    ব্যস্ততম এ সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করে। বনশ্রী এলাকার বিভিন্ন ব্লকেএ সড়কটির মাঝপথেই রয়েছে কয়েকটি ঢাকনা বিহীন ম্যানহোল।এছাড়া টুকরা বাঁশ ভিতর লাল কাপড় বেঁধে দাঁড় করে সতর্ক চিহ্ন দিয়ে রেখেছেন স্থানীয়রা এলাকাবাসী। এসব বিষয়ে একেবারেই উদাসীন ডিএসসিসি/ঢাকা ওয়াসা। নগরীর প্রতিটি প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি পর্যন্ত এমন চিত্র দেখা গেছে।

    একটু বেখেঁয়ালে চললেই ঘটবে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এসব ম্যানহোল মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। রাজধানীর ম্যানহোল ও স্যুয়ারেজ লাইনের রক্ষণা বেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা ওয়াসাসহ কয়েকটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর উদাসীনতায় দিন দিন বেড়ে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার পর দুর্ঘটনাকবলিত ম্যানহোল ও স্যুয়ারেজ লাইনটি কার তা স্বীকার করতে কেউ রাজি হয়নি। শাহজাহানপুরের ঘটনায় ঢাকা ওয়াসা প্রথমে তার দায় এড়িয়ে রেলওয়ের ওপর চাপাতে চেয়েছিল। যদিও পরে তা স্বীকার করতে বাধ্য হয়।

    তবে এসব মৃত্যুর জন্য নগরবাসীর পক্ষ থেকে বারবারই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, একাধিক এলাকায় গভীর ড্রেন, নর্দমা, ম্যানহোল খোলা অবস্থায় রয়েছে। ওয়াসার বক্স কালভার্টগুলোরও অবস্থা একই। অনেক বাসাবাড়ী, স্কুল, কিন্ডারগার্টেন, গার্মেন্টস ঘেঁষেই রয়েছে খোলা নর্দমা ও ম্যানহোল। আবার ব্যস্ততম রাস্তার পাশেও দেখা যাচ্ছে গভীর নর্দমা। বর্ষায় রাস্তায় নর্দমা আর খোলা ড্রেন আলাদা করে দেখারও উপায় থাকে না। স্কুলগামী শিশুরা ও এলাকাবাসী প্রায়ই এসব খানাখন্দে পড়ে গুরুতর আহত হচ্ছে।

    অনেকে এসব স্যুয়ারেজ লাইনের গভীর পাইপে পড়ে হারিয়ে গেছেন বলেও মনে করা হচ্ছে।এসব দেখার যেন কেউ নেই,অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর অলিগলি সর্বত্রই এমন ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলের ছড়াছড়ি। এসব ম্যানহোলের মধ্যে পা পিছলে পড়ে প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ আহত হচ্ছেন। এদিকে যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর,শাহাজানপুর, পুরান ঢাকা,ডেমরা রামপুরাসহ প্রায় এলাকায় এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ড্রেন, নর্দমা, খোলা স্যুয়ারেজ ও ম্যানহোল রয়েছে, যা এখনও মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটে চলছে। সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,নগরীর পানি ও পয়ঁনিষ্কাশন করতে ম্যানহোল ও স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপন করা হয়।

    কিন্তু ঢাকনাগুলো অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় খুব অল্প সময়েই ভেঙে যায়। তাছাড়া ভাসমান হকার ও ভাঙাড়ী ব্যবসায়ীরা মাদক সেবনকারীরা সহ এসব ঢাকনা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। আবার অপরদিকে কিছু কিছু ম্যানহোলের ঢাকা কংক্রিটের তৈরি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকনা গুলো দাঁয়সারা ভাবেই নির্মাণ করে চলে যায়। কিন্তু নির্মাণের পরপরই এসব ম্যানহোল ভেঙে পড়ে। এরপর পুনরায় সহজে তা স্থাপন করা হয় না।

    যে কারণে এসব ম্যানহোল এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লোহার তৈরি ম্যানহোলগুলোর অধিকাংশের ঢাকনা চুরি হয়ে যায়। এর সঙ্গে স্থানীয় ফেরিওয়ালা, মাদকাসক্ত এবং ডিএসসিসির কিছু অসাধু পরিচ্ছন্ন কর্মী জড়ি থাকে।বারবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। ডিএসসিসি ও ঢাকা ওয়াসা এসব ম্যানহোল সংস্কারে উদ্যোগী নয়।

    তারা একে অপরের কাছে দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। ফলে দিনের পর দিন স্যুয়ারেজ লাইন অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এসব বিষয়ে সম্প্রতি এক সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেছেন, আমরা সেবাদানকারী প্রতিটি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের উদ্যোগ নিয়েছি। ম্যানহোলগুলোর বেশকিছু ঢাকা ওয়াসার। তাছাড়া চলতি অর্থবছর নগরীর রাস্তাঘাট ও ড্রেন মেরামতে দুই হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।

    বাংলাদেশ সময়: ১১:০৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ