• শিরোনাম

    শিবচরে ইমাদ পরিবহনের দুর্ঘটনায় খুলনার নিহত ৪ বের হলেন এক সঙ্গে, ফিরলেন ভাইয়ের লাশ নিয়ে

    খুলনা ব্যুরো সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩

    শিবচরে ইমাদ পরিবহনের দুর্ঘটনায় খুলনার নিহত ৪ বের হলেন এক সঙ্গে, ফিরলেন ভাইয়ের লাশ নিয়ে

    apps

    দু’ভাই খুলনার বাসা থেকে এক সঙ্গে বের হন। এরমধ্যে ছোট ভাই ইশরাকুজ্জামান বিংসাম গোপালগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে নেমে ট্রেনে করে রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিছুক্ষণ পরে জানতে পারেন ইমাদ পরিবহনের ২০৩ নং নম্বর কোচটি মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। সেখানে দুর্ঘটনায় নিহতেদের তালিকায় তার ভাই আশফাকুজ্জামান লিংকনের নামও রয়েছে। ভাইয়ের লাশ নিয়ে তিনি খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন।
    নিহত আশফাকুজ্জামান লিংকন পেশায় প্রথম শ্রেণির একজন ঠিকাদার। ঢাকা ও খুলনায় তার কাজ চলছে। বিংসাম কর্মস্থল রাজবাড়ি ও লিংকন ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য খুব ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়।
    বিংসাম রাজবাড়িতে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত । সপ্তাহের শেষ দিনে খুলনা মহানগরীর টুটপাড়া আমতলা বাড়িতে চলে আসেন।
    এদিকে, মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় দুর্ঘটনায় লিংকনসহ খুলনার মোট ৪জন নিহত হয়েছেন। নিহত খুলনার যাত্রীরা হলেন, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার পরিমল সাধু খাঁর ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা মহাদেব কুমার সাধু খাঁ এবং খুলনা মহানগরী এলাকার শেখ মোহম্মদ আলীর ছেলে শেখ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, চিত্তরঞ্জন ঘোষের ছেলে চিন্ময় প্রসন্ন ঘোষ ও শাহাজাহান মোল্লার ছেলে আশরাফুল আলম লিঙ্কন। নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
    ঠিকাদার লিংকনের ভাই ব্যাংক কর্মকর্তা বিংসাম বলেন, ইমাদ পরিবহনের ২০৩ নম্বর কোচের একটা সিটের পর তিনি ও পরের আসনে লিংকন বসেছিল। শুরুর থেকে গাড়িটির গতিবেগ বেশীই ছিল। প্রথমদিকে চালককে দ্রুত চালানোর জন্য নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা চালক কর্ণপাত করেননি। ভোর ৬ টার দিকে গাড়িটি গোপালগঞ্জে পৌছায়। সেখান নামার পূর্বে ‘আমার ভাই ভাল থাকিস’ বলেন। এরপর থেকে তার সাথে আর কোন যোগাযোগ হয়নি।
    বিংসাম আরও বলেন, দু’ভাই একসাথে যাত্রা করলাম। এখন ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে বাড়িতে ফিরছি। বাবা মাকে সান্তনা দেওয়ার ভাষা নেই তার। দুপুরে ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে মাদারীপুর থেকে যাত্রা করেছেন। রাতে এশার নামাজের পর পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ি স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। লিংকন টুটপাড়া আমতলা মসজিদ এলাকার শাহাজাহান মোল্লার ছেলে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
    এদিকে, ইমাদ পরিবহনের খুলনার রয়্যাল মোড়ের কাউন্টার মাস্টার মো. শাফায়েত হোসেন মামুন জানান, রোববার ভোর ৫টার দিকে ৪ জন যাত্রী নিয়ে ইমাদ পরিবহনের ২০৩ কোচ সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে যায়। সেখান থেকে আরো কয়েকজন যাত্রী নিয়ে বাসটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
    ইমাদ পরিবহনের খুলনা জোনের ম্যানেজার জাকির হোসেন জানান, ভোরে খুলনার ফুলতলা থেকে একজন যাত্রী নিয়ে বাস রয়্যাল মোড়ের কাউন্টারের সামনে আসে। রয়্যাল মোড় থেকে কয়েকজন যাত্রী নিয়ে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে যায়। এখান থেকে মোট ১৭জন যাত্রী নিয়ে বাসটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। পথিমধ্যে বাগেরহাটের ফকিরহাট ও গোপালগঞ্জ থেকে আরো যাত্রী ওঠে বাসটিতে।
    মাদারীপুরের শিবপুর উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ইমাদ পরিবহন দুর্ঘটনায় ১৯জন যাত্রী নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে চারজন রয়েছেন খুলনার।
    দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম (৪০)। সাইফুল ইসলামের বড় ভাই মঞ্জুর হাসান জানান, তার ভাই মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। দুর্ঘটনার পর সাইফুল ইসলামকে প্রথমে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। বিকালে তাকে চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে খুলনায় নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানান হাসান।
    এদিকে, নিহত আশরাফুল আলম লিংকনের একজন স্বজন বলেন, আমাদের মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের কথা বলার অবস্থা নেই।
    সোনাডাঙ্গা থেকে ওঠা ইমাদ পরিবহনে ওঠা যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে গেছেন। তিনি পরিবহনের পেছনের সিটে বসা ছিলেন। কীভাবে কী ঘটে গেল তা তিনি বলতে পারছেন না। তবে তিনি সুস্থ আছেন বলে মোবাইল ফোনের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।

    বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ