• শিরোনাম

    মাধবপুরে মানবপাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে ৫০ লাখ খুইয়ে ভুক্তভোগীর থানায় মামলা

    লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩

    মাধবপুরে মানবপাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে ৫০ লাখ খুইয়ে ভুক্তভোগীর থানায় মামলা

    apps

    হবিগঞ্জের মাধবপুরে উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপেরহবিগঞ্জের মাধবপুরে উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপের পর্তুগালে যাওয়ার প্রলোভনে মানবপাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে ৫০ লাখ টাকা খুইয়ে অবশেষে কৌশলে ভারত থেকে জীবন নিয়ে দেশে ফিরে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন সুরাইয়া নামের এক নারী। চক্রের হোতা মাহমুদা আক্তার,আফসা বেগম ও নিজাম উদ্দিনের নামে মানব পাচার আইনে থানায় মামলা করেছেন। এই ঘটনায় সুরাইয়ার সাথে পর্তুগাল নেওয়ার নাম করে আরও ৪ জনকে ভারতের কোলকাতায় নিয়ে গিয়েছিল ওই চক্রের লোকজন এদের প্রত্যেকের সাথে ১৮ লাখ টাকার চুক্তি হয় মামলার আর্জি ও বাদী সুরাইয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়।

    পূর্বপরিচয়ের সূত্রে তারা জানতে পারেন মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের বানেশ্বরপুর (বড়ুরা বড় বাড়ীর) আব্দুল বারিকের মেয়ে আইসিবি ব্যাংকের সিলেট শাখার কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার ও তার বোন একই ব্যাংকের ঢাকার একটি শাখার কর্মকর্তা আফসা বেগম এবং আফসা বেগমের স্বামী নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার একাব্বরপুর গ্রামের নুর উদ্দিনের পুত্র নিজাম উদ্দিন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লোক পাঠিয়ে থাকেন। উন্নত জীবনের আশায় মাধবপুর পৌর সদরের একটি ক্লিনিকে কর্মরত সুরাইয়া মাহমুদা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করলে মাহমুদা আক্তার ১৮ লাখ টাকার বিনিময়ে সুরাইয়া আক্তারকে ভারত হয়ে পর্তুগালে নেওয়ার আশ্বাস দেন।

    সুরাইয়াকে ১ লাখ টাকা বেতনের প্রলোভন দেখান মাহমুদা। মাহমুদা আক্তারের কথাবার্তা শুনে সুরাইয়া আক্তার পর্তুগাল যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার সাথে পর্তুগাল যাওয়ার জন্য বিরসিংহপাড়া গ্রামের রুস্তম আলীর পুত্র ফারুকুল ইসলাম, সন্তোষপুর গ্রামের ইউনুস আলীর পুত্র আলমগীর মিয়া, চটিপাড়া গ্রামের হীরা মিয়ার পুত্র অবিদ হোসেন ও নাসিরনগর সদরের আবু হানিফের পুত্র শেখ মোঃ সোহাগও যেতে আগ্রহী হন মাহমুদা আক্তার, আফসা বেগম ও নিজাম উদ্দিন জানায় যাওয়ার আগে জনপ্রতি ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। বাকি ৬ লাখ

    পর্তুগাল পৌঁছে দিতে হবে কথামতো সুরাইয়াসহ অন্যরা কয়েক দফায় নগদ, ব্যাংক একাউন্ট ও বিকাশের মাধ্যমে ৪৯ লাখ ৫২ হাজার টাকা পরিশোধ করে। গতবছরের (২০২২) ১৮ নভেম্বর নয়াদিল্লীতে অবস্থানরত আফসা বেগম ও নিজাম উদ্দিনের সাথে কথা বলে বিমানযোগে সুরাইয়া ও অন্যদের ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে পাঠান। সেখানে আফসা বেগম ও তার স্বামী নিজাম উদ্দিন বিমানবন্দরে তাদেরকে রিসিভ করে দিল্লী রেলস্টেশনের কাছে ‘ডিম্পল লজ’ নামের একটি হোটেলে নিয়ে যান।

    ভারতে পৌঁছার ১ মাসের মধ্যে পর্তুগাল পাঠানোর কথা থাকলেও সেইমতো ব্যবস্থা না করায় সুরাইয়া এবং তার সাথের অন্যদের মনে সন্দেহ তৈরি হয়। নানান অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকে আফসা ও নিজাম উদ্দিন। এভাবে ২ মাস অতিক্রান্ত হলে সুরাইয়াদের সন্দেহ আরও বাড়ে। আফসা আক্তার এবং তার চক্রের লোকজনের আচরণ এবং কথাবার্তায় সন্দেহ দৃঢ় হয় আরও।

    তারা বুঝতে পারেন আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের খপ্পরে পড়েছেন। যেকোনো মুহূর্তে নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্য যেকোনো দেশে পাচার করা হতে পারে তাদের। তারপর সুরাইয়া হোটেলের ম্যানেজার মুকেশ কুমারকে বিষয়টি জানালে তিনি তাদের পুলিশের মাধ্যমে সহায়তা করার আশ্বাস প্রদান করেন। আফসা আক্তার এবং তার স্বামী নিজাম উদ্দিন বিষয়টি টের পেয়ে হোটেল থেকে পালিয়ে যান। পরে ২৮ জানুয়ারি সড়কপথে বেনাপোল হয়ে দেশে ফিরে আসেন সুরাইয়া বেগম ও তার সাথের লোকজন।

    দেশে এসে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে ঘটনা জানালে সালিশ বৈঠকে সব স্বীকার করেন মাহমুদা আক্তার। সমুদয় টাকা ফেরতের আশ্বাস দেন। পরে টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা শুরু করে একপর্যায়ে সবকিছু অস্বীকার করে সুরাইয়া আক্তার ও অন্যদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এ ব্যাপারে সুরাইয়া আক্তার বাদী হয়ে মাধবপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রতনলাল দেব জানান‌ যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে।

    বাংলাদেশ সময়: ৪:৪৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ