• শিরোনাম

    ভিক্ষুক ন‌ই ভিক্ষা চাইনা

    অনলাইন ডেস্ক রবিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২০

    ভিক্ষুক ন‌ই ভিক্ষা চাইনা

    apps

    নূরুদ্দীন দরজী: নিত্যদিন আমরা পত্রিকায় কতনা খবর পড়ি। কিছু খবরে মনে বিরক্তির উদ্রেক করে কষ্ট পাই। আবার অনেক খবরে আনন্দ পাই,মন খুশিতে ভরে যায়- স্বপ্নের রঙিন পাখায় ডানা মেলে উড়ে বেড়াই। মনে প্রশান্তি আনে এমন একটি চমকপ্রদ খবর একটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। এ খুশির খবরটি হলো আমাদের প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভিক্ষুক মুক্ত ঘোষণা  করা হয়েছে’। ব্রাহ্মণবাড়িয়াস্থ সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভিক্ষুক মুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অভিনন্দন ব্রাহ্মণবাড়িয়া মানুষকে, অভিনন্দন সকল শ্রদ্ধেয় নেতৃবৃন্দ ও জেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা মহোদয়গণকে। শুধুই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নয় এটি সমগ্ৰ জাতির জন্য একটি অন্যতম সুখবর। এমন সুন্দর উদ্যোগের প্রশংসা করে শেষ করা যায় না। আর আমরা যদি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোন ভিক্ষুক না দেখি তবে নিঃসন্দেহে এক মহৎ কাজ করা হয়েছে। পাশাপাশি  যারা  এমন কাঙ্খিত উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের সফলতা কামনা কি আন্তরিক ভাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শুভ জন্মদিনে এ ঘোষণা আরও অর্থবহ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দরিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বাঙালি এখন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো জাতি। এ দেশে ভিক্ষাবৃত্তি কাম্য নয়।

    দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, অনেকাংশেই ভিক্ষাবৃত্তি এখন খাসালতে পরিণত হয়েছে, অর্থ উপার্জনের পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য অতীতেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সফলতা তেমন পাওয়া যায়নি। বিকল্প কাজ, এককালীন অর্থ প্রদান করে, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করাসহ নানাবিধ কাজের সুযোগ করে দিলেও সহজ পেশা মনে করে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে ভিক্ষা করতে  চলে যায়। কয়েক বছর আগে আমাদের গ্ৰামের ঈদের নামাজে দাঁড়িয়ে সামান্য প্রয়োজনীয় কথা বলার সময় এক পর্যায়ে বলেছিলেন, আমাদের গ্ৰাম এখন ভিক্ষুক মুক্ত, কোন ভিক্ষুক নেই। প্রবাসে ও শহর  বন্দরে যারা থাকেন , ঈদে যারা বাড়ি এসেছেন তারাসহ সবার মুখে এক ঝলক হাসি দেখেছিলাম। খুশির আমেজ পরিলক্ষিত হয়। মনে হলো নিজের গ্ৰামের এমন খবরে তারা স্বস্তি পেয়েছে। কিন্তু কিছু দিন না যেতেই আমাকে এক ব্যক্রি গ্ৰামের একজনের নাম ধরে- সে  ভিক্ষা করে জানায়। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। খবর নিয়ে সত্যতা পাই। যে লোকের কথা জানায় তার সামর্থ্যবান ছেলের সাথে যোগাযোগ করেও সত্যতা পাই। সে সামর্থ্য ছেলে চাকরি করে ,তাদের সংসার ভাল চলে -তাকে জিঞ্জেস করি এমন কেন হলো। ছেলে কথা দিয়েছিল তার বাবাকে আর কোনদিন ভিক্ষা করতে দেওয়া হবে না। তাদের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল। ছেলে লজ্জিত হয়ে বলে, বাবাকে অনেক যত্নে রাখা হয়, প্রয়োজনীয় সবকিছু দেওয়া  হয়, চোখে চোখে রাখা হয়। তারপর‌ও বাবা তাদের ফাঁকি দিয়ে অনেক টাকা পাওয়া যায় লোভে  পুরোনো পেশায় চলে যায়। ভিক্ষা করে প্রতিদিন কম করে হলেও সাত/আটশত টাকা পাওয়ার লোভ সে থামাতে পারেনা। অনেক আলোচনার পর পুণরায় ছেলে কথা দেয় বাবাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখবে। অবশ্য তার কিছুদিন পর সে বাবা মারা গেলে যতটুকু জানি আমাদের গ্ৰাম এখন ভিক্ষুক মুক্ত।

    ভিক্ষাবৃত্তি করা কবে কখন থেকে শুরু হয়েছে তার সঠিক কোন তথ্য না পাওয়া গেলেও অতি প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন আঙ্গিকে, বিভিন্ন পথে তা চলে আসছে। ইসলাম ধর্মে ভিক্ষার কোন স্থান নেই। অন্যান্য ধর্মে আধ্যাধ্মিক অর্থে কিছু কিছু প্রচলন থাকলেও ইসলামে একেবারেই কোথাও এর সমর্থন পাওয়া যায় না। বৌদ্ধ ধর্মের ভিক্ষুকরা আছে। অন্যের সাহায্য সহযোগিতায় তাদের খাদ্য সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু ইসলামে নয়। আমাদের নবী করিম (সঃ) এর শিক্ষা করোনা ভিক্ষা। স্ত্রী তালাক দেওয়া আর ভিক্ষা করা সমান ঘৃণিত কাজ। সৎ কাজে করে কোন ব্যক্তি ঋণগ্ৰস্থ হলে , কোনো প্রকার মহামারিতে পরলে, দুর্যোগে পতিত হলে এবং নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্ৰস্থ হলে মানুষকে সাময়িক সাহায্য সহযোগিতা দেওয়া যেতে পারে। আবার সাহায্য প্রাপ্তদের  অবস্থার উন্নতি হলে তা বন্ধ করে দেওয়া যাবে। আমাদের আশেপাশের অনেক বিকলাঙ্গ, অন্ধ, অসহায় বয়োবৃদ্ধ মানুষ রয়েছে যাদের অন্যের সাহায্য সহযোগিতা ব্যতিরেকে চলা মোটেও সম্ভব নয়। এমন যাদের আপনজন বা ছেলেমেয়ে নেই তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে। কোন দিন কোনক্রমে তাদের সামর্থ্যতা ফিরে এলে অবশ্যই আবার বন্ধ ও করে দিতে হবে।

    বর্তমান সময়ে ভিক্ষা করা হয়ে গেছে একটি পেশা-আর যারা দেয় তাদের অনেকের‌ই নেশা তার বিনিময়ে নেকী লাভ করা। সামর্থ্যতা থাকা সত্ত্বেও লাভবান পেশা হিসেবে অনেকে এটা বেছে নেয়। আমরা জানি  অধিকাংশ মানুষই স্বার্থ ছাড়া কোন কাজ করেনা তেমন একটা। যারা ভিক্ষা দেয় তাদের পরকালীন মঙ্গলের জন্য দেয়। নিজেদের বাবা, মা, দাদা দাদী সহ আত্মীয় ও পরিবারের স‌ওয়াব কামনা করে মনে মনে। আবার এমন কথাও শুনা যায় ভিক্ষুকদের কলকাঠি নাড়ার লোক রয়েছে। তাদের ব্যবহার করে এ সমস্ত হারামজাদা লোকেরা প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। এ ঘৃনিত কাজটিকে তারা উপরে উঠার সিঁড়ি মনে করে। ভিক্ষুকরা বুঝতে পারে না একদিন ঐ হারামজাদারা তাদের ফকিন্নীর ছেলে বলে গালি দিবে। তারা হবে তাদের গোটা পরিবার ও প্রজন্মের জন্য অসম্মানের।

    ভিক্ষাবৃত্তি, এ বৃত্তিকে বিভিন্ন সময়ে বন্ধ করার জন্য দেশের অভ্যন্তরে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অনেক পদক্ষেপ‌ই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। চাঁদপুরে চাকরি করার সময় জেলার ভিক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগের সমর্থনে জেলার সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী একদিনের বেতন দিয়েছিলাম। চলে আসার পর খোঁজ নিয়ে জেনেছি ভিক্ষা আর বন্ধ হয়নি। হাটবাজার, শহর বন্দরে একটু কম হলেও বাড়িঘরে ভিক্ষুকদের আনাগোনা বহুলাংশে বেড়ে গেছে। এ অভিঞ্জতা থেকে বোধ করছি এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিলে তা শক্ত হাতে নেওয়ার চিন্তা করতে হবে।

    ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ে লেখার শেষ হবেনা। বিভিন্ন ঘটনা ও উদাহরণের অভাব নেই। লিখার আগ্ৰহ‌ও বোধ হয় কমে গেছে। কবি নজরুলের একটি কবিতার লইন দিয়ে শুরু করেছিলাম।

    তাঁর কথায -ভিক্ষুক ন‌ই ভিক্ষা চাইনা, ভাগ চাই আমি ভাগ। ভাগ চাই আমি সারা দুনিয়ার সীমানা কাটিয়া দাগ। কবি এখানে সারা দুনিয়ার কথা বলেছেন। এর মানে এই নয় যে ভিক্ষকরা  সমগ্ৰ দুনিয়ার পর দুনিয়া ঘুরে বেড়াবে ভিক্ষার জন্য। তাকে কাজ করতে হবে। চেষ্টা করতে হবে উন্নতি করার । পরিশ্রম করে  সবার চেষ্টায় অর্জিত অর্থে তার শ্রমের প্রাপ্য পাওয়ার। কথা সাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য বলেছেন, ভালবাসা দীন ভিখারিকে ও রাজা করে। তবে  অর্থের ভালবাসা দিয়ে ভিক্ষুককে রাজা বানানো  নয়। ভালবাসা পেতে হলে দেশকে ভালবেসে আগে ভিক্ষা করার অবসান ঘটাতে হবে। সুখি সমৃদ্ধ শালী দেশে সবাই সুখে সুখে স্বাচ্ছন্দে থাকবে। থাকবে পারস্পরিক ভালবাসা।

    লেখক: কলামিস্ট ও সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও)

    বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২০

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    কচু শাক চুরি

    ১৫ জুলাই ২০২১

    শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিন

    ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

    শূন্যতা

    ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

    আর্কাইভ