• শিরোনাম

    বিআরডিবি’র ক্ষুদ্র ঋণে বদলেছে তাদের জীবন; হয়েছে আত্মনির্ভরশীল, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত

    ইউসুফ চৌধুরী-রাজশাহী প্রতিনিধি: বুধবার, ০২ আগস্ট ২০২৩

    বিআরডিবি’র ক্ষুদ্র ঋণে বদলেছে তাদের জীবন; হয়েছে আত্মনির্ভরশীল, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত

    apps

    বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়িত সাতটি প্রকল্প নিয়ে সততা ও দক্ষতার সাথে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ বাস্ববায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার বিআরডিবি’র দাযিত্বরত কর্মকর্তা ও কর্মচারিীগন। তাদের দক্ষ নেতৃত্বে প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক ঋণ সহযোগিতা ও পরামর্শে পল্লীর নিম্নআয়ের মানুয়েরা দেখছে আলোর মুখ। সোনার বাংলা বিনির্মাণে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে তাঁরা সবাই সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের সঙ্গে নিবিড় ভাবে জড়িত। উদ্যোক্তাদের গৃহীত প্রকল্পে সৃষ্ট্রি হয়েছে কর্মসংস্থান। বিআরডিবি’র ক্ষুদ্র ঋণে বদলেছে তাদের জীবন; দারিদ্র বিমোচনের পাশাপাশি পরিবর্তন হয়েছে আর্থ-সামাজিক অবস্থার। হয়েছে আত্মনির্ভরশীল, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। বিষয়টি পাখির চোখে না দেখলে ঠিক বোঝা যাবেনা। তবে অনেক উদ্যোক্তা দাবী করেছেন প্রকল্প অনুযায়ী আর্থিক ঋণ সহযোগিতার পরিমান খুব কম। স্বল্পসুদে আর্থিক ঋণ সহযোগিতার পরিমান বৃদ্ধি হলে ব্যবসা বড়সহ স্বাছন্দে কাজ করতে পারবে বলে তাঁরা আশাবাদী।
    প্রতিবেদন নং-০১
    দর্জির কাজে সফল নারী উদ্যৌক্তা শম্পা; কর্মসংস্থানের পাশাপশি হয়েছে আর্থিক ভাবে সাবলম্বী
    রাজশাহীর পবা উপজেলার হড়গ্রাম ইউনিয়নের ঝুজকাই (বাথানপাড়া) গ্রামের বাসিন্দা মোসা: শম্পা বেগম। পেশায় একজন দর্জি-কাটিং মাষ্টার ও সেলাই কারিগর। ১২ বছর ধরে তার সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হয় এক একটি খেলোয়ার্ড পোশাক। সফলতার সাথে দর্জি কাজের মাধ্যমে আয় করে সংসার চালানো থেকে শুরু করে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করে। দর্জি কাজ করে দিনে ৫০০-৬০০ টাকা আয় করেন, মাসে প্রায় ১৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা আয় হয়। দর্জি কাজের পাশাপাশি সংসারের সমস্ত কাজ করেন একা হাতে। তবুও থেমে নেই তাঁর কাজ, থেমে নেই তাঁর পথচলা। কাজের পাশাপাশি তিনি দর্জি প্রশিক্ষণও দিয়েছেন ৭ জন নারীকে। প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনজন নারী তাঁর কারখানাতে দর্জির কাজ করে। এছাড়া অনেক নারীই হয়েছেন পোশাক তৈরির কারিগর আবার কেউ নিজে কারখানা দিয়েছে, কেউবা নিজের পরিবারের পোশাক তৈরী করে। তাদের কর্মসংস্থানের পাশাপশি হয়েছে আর্থিক ভাবে সাবলম্বী।

    প্রশিক্ষণ নিয়ে সাবলম্বী একই গ্রামের বাসিন্দা রেবেকা সুলতানা বলেন, “শম্পা আপার কাছে থেকে অল্পদিনেই দর্জির কাজ ভালোভাবে শিখতে পেরেছি। তিনি খুব যত্নসহকারে কাজ দেখিয়ে দিতেন এবং কোন কাজ বুঝতে না পারলে বারবার দেখিয়ে দিতেন। বর্তমানে তাঁর কারখানাতে বিভিন্ন পোশাক তৈরির কাজ করি। এখন আমি সংসারের খরচ চালাতে পারি।”

    নারী উদ্যৌক্তা শম্পা বেগম বলেন, ১২ বছর থেকে আমি দর্জির কাজ করি। বিয়ের পর স্বামীর সংসারে বেকার বসে না থেকে কিছু করতে চাই। তাই স্বামী, শশুর ও শাশুড়ীর সাথে আলাপ করে দর্জির কাজ শিখতে চাইলে তারা আমাকে সহযোগিতা করে। আমার চাচা শশুর এর গার্মেন্টস কারখানা ছিল। সেখানে চাচা শশুর ও শাশুড়ীর কাছ থেকে দর্জি সেলাই কাজের শিক্ষা পেয়েছি। আমি সেখানে ১০ বছর কাজ করেছি এবং বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরীর কাজ শিখেছি। শিশু, নারী ও পুরুষসহ বাচ্চাদের যে কোন ধরণের পোশাক তৈরি করতে পারি। ২০২০ সালে চাচা শশুরকে বলি আমি এখন নিজে কাজ করতে চাই। তখন চাচা শশুর আমাকে একটা সেলাই মেশিন উপহার দেন। সেই সেলাই মেশিন দিয়ে আমি কাজ শুরু করি। এলাকার নারীদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরী করতে শুরু করি। পরে স্বামীর সাথে আলাপ করে নিজে কিছু স্পোর্টস আইটেমের কাপড় কিনে খেলোয়ারদের ছোট বড় হাফপ্যান্ট, ফুল প্যান্ট, জার্সি ও টাউজার, শীতের পোশাক জ্যাকেট তৈরী করি। এতে ব্যাপক সাড়া পায় এবং রাজশাহীসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে জার্সি ও টাউজার এর অর্ডার আসে। তখন বিআরডিবি পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প (পজীপ)-৩য় পর্যায়এর আওতাধীন সমিতিতে ভর্তি হয়ে হাঁস-মুরগী ও পশুপালন ও উন্নত দর্জি প্রশিক্ষণ গ্রহন করি। ব্যবসা বড় করতে বিআরডিবির আর্থিক ঋণ সহযোগিতা নিয়ে জার্সি ও টাউজার তৈরীর কাপড় এবং তিনটি পাওয়ার সেলাই মেশিন ক্রয় করি। এখন আমার কারখানাতে তিনজন নারী কাজ করে। পরে স্বামীকে জান্নাতন স্পোর্টস নামে একটি দোকান করে দেয়। সেখানে আমার তৈরী বিভিন্ন স্পোর্টস আইটেমের জার্সি ও টাউজার বিক্রয় করা হয়। ব্যবসা ভাল হয় লাভও হয়, আজ আমি সুখী ও সফল। আমার এখানে তিনজন নারী কাজ করে তাদের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং আরোও নারীদের কর্মসংস্থান করতে চাই। বিআরডিবি কর্মকর্তার পরামর্শ ও সহযোগিতায় ব্যবসা বড় হয়েছে এবং তৈরী পোশাক বিপননে সহযোগিতা করছেন।

    প্রতিবেদন নং-০২
    পবার ফুল চাষী উদ্যোক্তা সাজ্জাদ এর সফলতার গল্প
    পবা উপজেলার হুজুরীপাড়া ইউনিয়নের রাধানগর (মঠবাড়ী) গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা দাউদ হোসেন এর ছেলে সাজ্জাদ হোসেন। ২০১৮ সালে ৩০ হাজার দিয়ে দুই বিঘা জমির উপর গাঁদা ফুল চাষ করেন। শুরুতে অল্প জমি নিয়ে ফুল চাষ করে লাভের মুখ দেখায় জমির পরিমান বৃদ্ধি করতে বিআরডিবি পল্লী প্রগতি প্রকল্প (পপ্রপ্র) এর আওতাধীন সমিতিতে ভর্তি হয়ে আর্থিক সহযোগিতা গ্রহন করেন। ফুল বিক্রি করে লাভবান হওয়ায় অল্পদিনেই হাসি ফুটেছে সাজ্জাদ হোসেনের মুখে। শীত মৌসুমে ফুল চাষ ভালো হয় তখন চাহিদা বেশি থাকে। এবার ১০/১২ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করবেন। তাঁর বাগানে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির ফুলের চারা ও গাছের লম্বা ডাঁটায় ভর করে বাতাসে দোল খাচ্ছে নানা রংয়ের ফুল। সামনে মৌসুম তাই বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চারা রোপণ করে পরিচর্চা করেছেন।
    তিনি বাগানে লাল, গোলাপি, সাদা আর হলুদ রংয়ের গোলাপ, গ্ল্যাডিওলাস, জারবেরা, জিপসি, রজনীগন্ধা, ডালিয়া, গাঁদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল চাষ করেন। এক বিঘা জমিতে বছরে ২ লক্ষ টাকার ফুল বিক্রয় করেন। বর্তমান সার শ্রমিক সহ সব কিছুর বাজার মূল্য বৃদ্ধি হওয়ার কারণে লাভের পরিমাণ কিছুটা কম। সার্বিক খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়। তাঁর বাগানে ১২/১৩ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাতে এলাকার কয়েকজনের কর্মসংস্থান হয়েছে। রাজশাহীর স্থানীয় বাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, নাটোর সহ বিভিন্ন জায়গায় ফুল বিক্রয় করেন। ফুল চাষ করে তিনি এখন এলাকার একজন স্বাবলম্বী ও সচ্ছল মানুষ।

    সাজ্জাদ হোসেন বলেন, উপজেলা বিআরডিবি কর্মকর্তা শামসুন্নাহার এর দিকনির্দেশনা ও সার্বিক সহযোগিতায় এত বড় বাগান করতে পেরেছি। বিআরডিবির মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন ও উন্নত ফুলচাষের বাগান করতে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা এবং ফুল বাজারজাত করণে সহযোগিতা করছে বলেই আজ আমি সফল উদ্যোক্তা। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পলিনেট হাউসে ফুল চাষ করছি। এভাবে ফুল চাষে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিরাপদ থাকা যায়। আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ, খরা, শৈত্যপ্রবাহ, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি হলেও সমস্যা হয় না। সেজন্য এখন বিভিন্ন ধরনের ফুল ও সবজি আবাদ হয় জমি আর পতিত থাকে না। তবে জানুয়ারি থেকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে কিছুটা লোকসানের মুখে আছি। বিআরডিবির সহযোগিতায় বাগান আরো বড় করতে পারবো এই প্রত্যাশা করছি।

    প্রতিবেদন নং-০৩
    মুরগির খামারি সাজেদার মাসে আয় ৭০ হাজার টাকা!
    পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের রনহাট এলাকার বাসিন্দা মোসা: সাজেদা বেগম। গৃহীনি সাজেদা বেগম একজন সফলউদ্যৌক্তা। স্বামী, ছেলে ও মেয়ে সহ ৪ জনের সংসার তাঁর। বিয়ের পর স্বামীর একার আয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাছাড়া নিজের চাষযোগ্য কোন জমি ছিল না। তখন স্বামীর পরামর্শে তিনি ২০০৬ সালে বিআরডিবি সমন্বিত দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি (সদাবিক) এর আওতাধীন সমিতির সদস্য হন। সদস্যদের সম্মতিতে সমিতির ম্যানেজার হিসেবে সফলভাবে দাযিত্ব পালন করছে। তিনি বিআরডিবি’র মাধ্যমে হাঁস-মুরগী ও পশুপালনসহ বিভিন্ন আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়নের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। সমিতি থেকে প্রথম পাঁচ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ এবং ছাগল বিক্রয় করা ৩৫ হাজার সহ মোট ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ৩০০টি লেয়ার মুরগীর বাচ্চা ক্রয় করে পালন শুরু করেন। এভাবে তিনি বিআরডিবির আর্থিক ঋণ সহযোগীতায় মুরগী পালনের পরিমান বৃদ্ধি এবং খামার বড় করে পাঁচ হাজার মুরগী পালনের জায়গা করেন।বর্র্তমানে তিনি খামারে দুই হাজার লেয়ার মুরগী পালন করছেন। সেখানে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার নয়শত ডিম পান। তাঁর প্রায় নয় লক্ষ টাকার সম্পদ আছে। খামার দেখাশুনার জন্য দুইজনকে দায়িত্ব দিয়ে তাদের কর্মসংস্থান করেছেন। তিনি মুরগীর খামার থেকে যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে মাসে প্রায় ৭০ হাজার টাকা আয় করেন।

    সাজেদা বেগম বলেন, বিআরডিবি’র সার্বিক সহযোগীতায় খামার এর লাভ থেকে পাকা ফ্লাট বাড়ী নির্মান, ২০টি দেশি মুরগী, ১৫টি হাঁস, ৩টি ছাগল পালনসহ বাড়ীর আসবাবপত্র তৈরী করেছি। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করছে। আজ আমি একজন উদ্যোক্তা, হয়েছি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। বিআরডিবির সহযোগিতায় খামার বড় করে অনেক লোকের কর্মসংস্থান করতে চাই এই প্রত্যাশা করি।

    প্রতিবেদন নং-০৪
    পবার মাসকুরা’র তৈরী ক্রিকেট ব্যাট এখন সারাদেশে
    নিজস্ব প্রতিবেদক:
    পবা উপজেলার হড়গ্রাম ইউনিয়নের ঝুজকাই (বাথানপাড়া) গ্রামে নিজের ব্যাট তৈরির কারখানায় ব্যস্ত মোসা: মাসকুরা বেগম। পঞ্চম শ্রেণী পাশ মাসকুরা বেগমের ৭ জনের সংসার। দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্বামীর সংসারে একসময় অভাব অনটনে অতিকষ্টে দিন পার করেছে। ২০১০ সাল থেকে মাসকুরা বেগমের স্বামীর কাঠমিল অর্থাৎ কাঠ কেটে বিভিন্ন সাইজ করা স্বমিল আছে। ছেলেরা বড় হয়েছে তাদের কর্মসংস্থান করতে হবে। মাসকুরা বেগম এর স্বপ্ন যেখানে নিজের কাঠমিল আছে সেখানে নিজেই একটা কারখানা দিবে। ছেলেরা অন্যের কারখানায় কাজ না করে নিজের কারখানাতে কাজ করবে। নিজের কর্মসংস্থান হবে পাশাপাশি গ্রামের মানুষ কাজ করার সুযোগ পাবে। স্বামী ও ছেলেদের সাথে আলাপ করে বিআরডিবি’রপল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প (পজীপ)-৩য় পর্যায় এর আওতাধীন সমিতিতে ভর্তি হন। কর্মসংস্থানের জন্য ২০২০ সালে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কারখানা করেন। ব্যাট তৈরী করে বাজারে বিক্রয় শুরু করলে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাসকুরা বেগম কারিগরদের কাজের তদারকিসহ ও নিজে ব্যাট ফিনিশিং এর কাজ করেন। তাঁর কারখানায় প্রতি মাসে গড়ে এক হাজার ব্যাট তৈরী হয়। কাজের মান ভাল হওয়ায় বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্ডার আসে। কারখানায় পাঁচ ধরনের ব্যাট তৈরী করা হয়। একটি ব্যাট তৈরী করতে খরচ হয় ৮০ থেকে ১৩০ টাকা যা পাইকারী বিক্রয় করে টাকা ১৩০ থেকে ২৩০ টাকা।আমড়া, কদম, ছাইতন, গেওয়া, নিম, মেহগনিসহ বিভিন্ন ধরনের কাঠ দিয়ে এসব ব্যাট তৈরি হয়। এখানকার তৈরি ব্যাট টেনিস, টেপ টেনিস ও রাবার ডিউজ বলই এ শিশু-কিশোরদের ক্রিকেট খেলার জন্য উপযোগী। তৈরি ব্যাট রাজশাহীর বিভিন্ন বাজার, ঢাকা, সিলেট, খুলনা, বগুড়া, পাবনা, চট্রগ্রামসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পাঠানো হয়।

    মাসকুরা বেগম বলেন, কারখানায় কারিগর চারজন এবং ব্যাট ফিনিশিং এর জন্য ১০/১২ জন নারী কাজ করে। আমি কারিগরদের তদারকিসহ ব্যাট ফিনিসিং এর কাজ করি। মৌসুমে ব্যাটের চাহিদা যেমন বাড়ে, তখন কারিগরের সংকট হয়। বিআরডিবি’র আর্থিক ঋণ সহযোগিতায় আমার পথচলা, ব্যবসা ভাল হয়, ছেলেদের নিয়ে সুখে আছি। বিআরডিবি’রসহযোগিতায় কারখানাবড়সহ অনেক লোকের কর্মসংস্থান করতে চাই।

    মাসকুরা বেগমের ছেলে হাবিবুর রহমান এ কারখানার একজন কারিগর। তিনি বলেন, ব্যাট তৈরী করতে প্রথমত কাঠ, হাতিয়ার হিসেবে হাতুর, বাটাল, আরি, রেন্দা প্রয়োজন। এসব দিয়ে ছোট-বড় সব ধরনের ব্যাট তৈরি করি। একটি ব্যাটের মজুরি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজগার হয়। যে যত পিস ব্যাট তৈরী করবে সে তত টাকা পাবে। নারী শ্রমিক শম্পা বলেন, বাড়িতে কারখানা হওয়ায় উঠানে বসে আরামে কাজ করা যায়। এ জন্য এখানে কারখানায় কাজ করতে ভালো লাগে। গ্রামের নারীরা এখন আর বসে থাকে না সংসারের কাজের পাশাপাশি ব্যাট ফিনিশিং এর কাজ করে।
    প্রতিবেদন নং-০৫
    কেঁচো সার উৎপাদনে রেনুকা’র মাসিক আয় ২০ হাজার টাকা!
    পবা উপজেলার বড়গাছী ইউনিয়নের কারিগর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোসা: রেনুকা বিবি। স্বামীসহ তিন জনের সংসার, মেয়ে নওহাটা সরকারী ডিগ্রী কলেজে রাস্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স শেষ বর্ষে লেখাপড়া করছে। ২০১৬ সালে বিআরডিবি’র দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে পুষ্টি সমৃদ্ধ উচ্চমূল্যের অপ্রধান শস্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে কেঁচো কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন এবং হাঁস-মুরগী ও পশুপালনের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। শুরু করেন ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন এবং ব্যাপক সাড়া পান। বর্তমানে তাঁর সার তৈরীর জন্য সিমেন্টের তৈরি দুইটি হাউজ ও মাটির তৈরী ৩২টি চাড়ি (রিং) আছে। কেঁচো কম্পোস্ট সারের মূল উপাদান হলো গোবর। ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে কেঁচো সার সংগ্রহ করা যায়। প্রতি মন সার উৎপাদন করতে তাঁর খরচ পড়ে তিনশত টাকা। প্রতি মন সার বিক্রয় হয় ছয়শত থেকে ছয়শত পঞ্চাশ টাকা। মাসে ৩০ থেকে ৩৫ মন কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন করেন। বিআরডিবি তাঁর উৎপাদিত সার বিপননে সহযোগিতা করেন। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় করেন। আয় থেকে তিনি দুই কাঠা জমি ক্রয় সহ পাকা বাড়ী নির্মান, ৩০টি দেশি মুরগী, ১৫টি হাঁস, একটি গরু, চারটি ছাগল পালনসহ বাড়ীর আসবাবপত্র তৈরী করেছেন। এছাড়াও স্বামীর সহযোগিতায় জমিতে লাউ, ডাঁটা, লতিকচু, পুঁইশাক, ঢেঁরস চাষ করেন। তিনি নারী উদ্যোক্তা হয়ে নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল এবং স্বাবলম্বী হয়েছেন।

    রেনুকা বিবি বলেন, ২০১৬ একটি বেসরকারী সংস্থা এই গ্রামের ২৫জন নারীকে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরীর প্রশিক্ষণ দেয়। সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে চাইলে তাদের কোটা পুরুন হওয়ায় তাদের লিস্টে আমার নাম ছিল না কিন্তু তাদের সাথে থেকে প্রাথমিক ধারণা পেয়েছিলাম। তখন আমার মনে হয় ওরা পারলে আমি পারবো না কেন। এরপর আমি নিজে উদ্যোগ গ্রহন করি, যোগাযোগ করে এক হাজার পাঁচশত টাকায় এক হাজার পাঁচশতটি কেঁচো ও চারটি মাটির তৈরী চাড়ি (রিং) ক্রয় করে কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করি। বিআরডিবি কর্মকর্তার পরামর্শে কেঁচো সার উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে শুরু করি। বিআরডিবি’র সহজ শর্তে আর্থিক ঋণ সহযোগিতায় আজ আমি সফল এবং স্বাবলম্বী।
    প্রতিবেদন নং-০৬
    প্লাস্টিক পন্য রয়েল প্লাগ তৈরী করে সফল উদ্যোক্তা রাবেয়া
    পবা উপজেলার হড়গ্রাম ইউনিয়নের খিরসিন টিকর এলাকার বাসিন্দা মোসা: রাবেয়া বেগম। দুই ছেলেসহ রাবেয়া বেগমের চার জনের সংসার। স্বামীর একার রোজগারে সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করেছেন। এক সময় তাঁর চলার মত কোন রাস্তা ছিল না। সহযোগিতার জন্য কাউকে পাশে পায়নি। তখন স্বামীর পাশাপাশি সংসারের জন্য নিজেও আয় করতে চান। জানতে পারেন বিআরডিবি’র মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং সল্পসুদে ঋণ দেওয়া হয়। যোগাযোগ করে বিআরডিবির পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প-৩য় পর্যায় এর আওতাধীন সমিতিতে ভর্তি হন। প্রকল্পের মাধ্যমে হাঁস-মুরগী ও পশুপালন ও প্লাষ্টিক পন্য রয়েল প্লাগ তৈরি করার প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। এরপর ধার দেনা করে ২০২০ সালে রয়েল ফ্লাগ তৈরির মেশিন কিনে কার্যক্রম শুরু করেন। বিআরডিবির আর্থিক ঋণ সহযোগিতা নিয়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করে ব্যবসা বড় করেন। এরপর আর তাকে পিছে ফিরতে হয়নি। এখন তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুই লক্ষ্য টাকার সম্পদ আছে। তাঁর এখানে রয়েল প্লাগ, ফ্যানের রাবার, কাপ ওয়াসার, বুশ, পর্দার বালা সহ বিভিন্ন রকম প্লাষ্টিক ইলেকট্রিক পন্য সামগ্রি তৈরি হয়। এসব পণ্য তৈরি করে নিজেই মার্কেটিং শুরু করেন। বর্তমানে ৮০ থেকে ১০০ রাজশাহীর স্থানীয় ইলেকট্রিক দোকান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সহ বিভিন্ন বাজারে তাঁর তৈরি পন্য খুচরা ও পাইকারি বিক্রয় করা হয়। তাঁর এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পন্য তৈরি ও বিক্রয় এর কাজে পরিবারের চারজন সদস্য জড়িত। এই ব্যবসা থেকে লাভ করে এক কাঠা জমি ক্রয়, বাড়ীতে দুইশত মুরগী ও একশত হাঁসের খামার এবং প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ক্রয় করেছেন। বড় ছেলের কর্মসংস্থানের জন্য দোকান করে দিয়েছেন। একজন প্রতিবেশিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁর কর্মসংস্থান করেছেন। আজ তিনি একজন সফল নারী উদ্যেক্তা।

    রাবেয়া বেগম বলেন, বিআরডিবির আর্থিক ঋণ সহযোগিতা নিয়ে আমার ব্যবসা বড় হয়েছে, আমার কর্মসংস্থান হয়েছে, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি। আমার তৈরী পন্য বিপননে তাঁরা আমাকে সহযোগিতা করছেন। নিজের প্রতিষ্ঠানে স্বামী সন্তান নিয়ে নিজেরাই কাজ করি তাতে আমার ভাল লাগে। আমার যাবতীয় খরচ বাদে মাসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হয়।

    উপজেলা নির্বাহী অফিসার লসমী চাকমা বলেন, সুখি- সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে জনগনের সেবক হিসেবে দ্রুত সময়ে সরকারি সেবাসমুহু জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতেই কাজ করছি। উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যৌক্তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে উপজেলা প্রশাসনের প্রতিটি দপ্তর কাজ করছে। চাকরির পিছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হয়ে উঠুন। উদ্যোক্তাদের সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ নিয়ে নতুন প্রকল্প করে নিজের এবং অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে সহযোগিতা করুন। দেশকে এগিয়ে নিতে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হবে উন্নয়নশীল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ।
    উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা শামসুন্নাহার বলেন, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড বিআরডিবি পবা উপজেলায় সাতটি প্র্রকল্পের মাধ্যমে পল্লী জনগণের দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উন্নত প্রশিক্ষণ, আর্থিক ঋণ সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মূলধন সৃষ্টি সহ নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি অন্যদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
    উপজেলা পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড বিআরডিবি কর্তৃক বাস্তবায়িত পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প ৩য় পর্যায় এর মাধ্যমে পবা উপজেলায় দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের গার্মেন্টস পণ্য উৎপাদন, হাঁস-মুরগি পালন, গরু মোটাতাজাকরণ, গাভী পালন, মৎস্য খামার, ইলেকট্রিক পণ্য তৈরি, কাগজের ঠোঙা তৈরি, বুটিক হাউজ, বিউটি পার্লার সহ প্রায় ৪৬টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক ঋণ সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

    বাংলাদেশ সময়: ৫:৪৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০২ আগস্ট ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ