• শিরোনাম

    নদীগর্ভে স্কুল, টিনের ছাপরায় চলছে পাঠদান

    জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ: সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৩

    নদীগর্ভে স্কুল, টিনের ছাপরায় চলছে পাঠদান

    apps

    সিরাজগঞ্জের যমুনার চর অধ্যুষিত বেলকুচি উপজেলার মেহেরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি যমুনার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাই খোলা মাঠে মাথার ওপরে কোনোরকমে একটি টিনের ছাপরা তুলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। বৃষ্টি হলে সেই ঘরেও পাঠদান করতে ব্যাপক সমস্যা হয়। বাধ্য হয়েই সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়ের ভবনটি সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর ২০০ মিটার অদূরে একটি খোলা মাঠে টিন দিয়ে একটি ছাপরা তুলে নামমাত্র পাঠদান চলছে। বিদ্যালয় যমুনাগর্ভে বিলীন হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটছে। এখানে পড়াশোনার কোনো পরিবেশ নেই।

    শিক্ষার্থীরা বলছেন, এভাবে ক্লাস করতে ভালো লাগে না। একদিকে মাথার ওপরে ছাউনি থাকলেও চারদিকে খোলা হওয়ায় এমনিতে যেমন ক্লাস করতে কষ্ট হয় তেমনই বৃষ্টি আসলে আর ক্লাস করার কোনো অবস্থাই থাকে না। বাতাসের সঙ্গে আসা পানিতে বইখাতা ভিজে যায়। এবং স্কুলের এই অবস্থার কারণে শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয়ে আসতে চায় না।

    শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা বলেন, প্রধান শিক্ষক টিনের ছাউনি তুলে দুই-চারজন ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসে থাকেন। এখানে পাঠদানের কোনো পরিবেশ নেই। ভবন না থাকায় স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টি হলে তো ছেলে-মেয়ারা স্কুলেই আসতে চায় না। এভাবে চললে এলাকার শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।

    মেহেরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ভাঙনের পর থেকে খোলা মাঠে ছাউনি তুলে আমরা শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছি। তবে শিক্ষার জন্য যে পরিবেশ থাকা দরকার, তা এখানে নেই। ভবন পাব কি-না, বা কবে পাব এমন কোনো তথ্য নেই। দিনদিন শিক্ষার্থীও কমে যাচ্ছে।

    বড়ধুল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি জিন্নাহ মোল্লা বলেন, বিদ্যালয় ভবনটি ভেঙে যাওয়ার পর বিষয়টি এমপি ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তারা যদি কোমলমতি শিশুদের কথা চিন্তা করে দ্রুত ব্যবস্থা না নেন, তাহলে এ অঞ্চলের শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে।

    বেলকুচি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে বেলকুচি উপজেলার বড়ধূল ইউনিয়নের দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভেঙে নদীগর্ভে চলে গেছে। শিক্ষার্থীরা যেন ঝরে না পড়ে, সেজন্য আমরা অস্থায়ীভাবে ছাউনি তুলে শিক্ষকদের শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে বলেছি। পাশাপাশি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে স্কুল দুটি সম্পর্কে জানিয়েছি।

    তিনি আরও বলেন, নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় মেহেরনগর বিদ্যালয়টির এখন আর কোনো নিজস্ব জায়গা নাই। তবে সেখানে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষক আছেন। বিদ্যালয়টির জন্য একটি ফান্ডের আশা করছি। আশা করছি খুব দ্রুতই ৩ লাখ টাকার একটা ফান্ড পাব। ফান্ডটি পেলে খুব দ্রুত আমরা ওই স্কুলটিতে আপাতত টিনশেড ক্লাসরুম করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারব।

    এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের জরুরিভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য ‘এডুকেশন ইন ইমারজেন্সি’ নামে একটা প্রোগ্রাম আছে। যেখান থেকে জরুরি প্রয়োজনের জন্য ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। আমরা বিদ্যালয়টির জন্য আপাতত সেই সেই প্রোগ্রামের টাকাটার জন্য আবেদন করেছি। আশা করছি খুব দ্রুতই সেটা পেয়ে যাব।

    তিনি আরও বলেন, সেই টাকা পেলে আমরা আপাতত সেখানে অস্থায়ীভাবে শিক্ষাদানের মতো একটা ব্যবস্থা করতে পারব। এ ছাড়াও যেহেতু বিদ্যালয়ের ভবনের পাশাপাশি জমিও নদীগর্ভে চলে গেছে তাই জমি সংগ্রহ এবং ভবনের কাজ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এলাকার কেউ জমি দান করলে আবার সেখানে স্থায়ীভাবে বিদ্যালয়টি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

    বাংলাদেশ সময়: ১:২০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ