• শিরোনাম

    নড়াইলে অসময়ে মাছের ঘেরে তরমুজ চাষ, কৃষকের মুখে হাসি

    খাইরুল ইসলাম চৌধুরী, স্টাফ রিপোর্টার, নড়াইল : রবিবার, ২৩ জুলাই ২০২৩

    নড়াইলে অসময়ে মাছের ঘেরে তরমুজ চাষ,  কৃষকের মুখে হাসি

    apps

    নড়াইলের কালিয়ায় বর্ষাকালীন হাইব্রিড জাতের অফ সিজন তরমুজ চাষে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কম খরচে বেশি ফলন এবং দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান চাষিরা। তাদের সফলতা দেখে অসময়ের তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেকেই। কৃষি বিভাগও হাইব্রিড জাতের তরমুজ আবাদে কৃষকদের পরামর্শ, বিনামূল্যে সার, বীজ, নগদ অর্থ সহায়তাসহ সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। কৃষি অফিস ও চাষিদের সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর কালিয়া উপজেলায় আট হেক্টর জমিতে বর্ষাকালীন তরমুজের চাষ হয়েছে। যা গত বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষক ফলন আশা করছে হেক্টর প্রতি ১৫ টন। কালিয়া পৌরসভার ছোট কালিয়ার গোবিন্দ নগর এলাকার বিলে, সালামাবাদ ইউনিয়নের ভাউরীর চরে আর উপজেলার অন্যতম বৃহৎ ‘ভক্তডাঙ্গা’ বিলের অসংখ্য মৎস্য ঘেরের পাড়ে মাচায় মাচায় বিশেষ জাতের বারোমাসি তরমুজ আবাদ হয়েছে।

    এসব জাতের মধ্যে রয়েছে এশিয়ান-২, তৃপ্তি ও ব্ল্যাক বেবি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এসবের মধ্যে এশিয়ান-২ বাংলাদেশি জাত। এসব জাতের তরমুজ দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। বিশেষ করে তৃপ্তি জাতের তরমুজ বেশি সুস্বাদু। এই তরমুজ চাষে খরচ কম, একর প্রতি মাত্র ১৫-২০ হাজার টাকা, কিন্তু বিক্রি হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। বাজার দরও বেশ চড়া থাকায় কৃষকও খুশি।
    অসময়ের তরমুজ চাষে কৃষকদের পরামর্শ এবং সহযোগিতা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তরমুজ চাষে সফল জেলার নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কালিয়া উপজেলার ভাউরীর চরের বাসিন্দা শেখ কামাল হোসেন। বর্ষাকালে এই তরমুজ চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় খুলনার ডুমুরিয়া থেকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর সে অনুযায়ী গত বছর গাছবাড়িয়া বিলের ৭ একর মৎস্য ঘেরের পাড়ে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ১০০০টি চারা রোপণ করে ২ লক্ষ টাকা লাভ করেন।
    এবার তিনি ৭ একর মৎস্য ঘেরের পাড়ে এক বিঘার মতো জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। বৈরি আবওয়ার কারণে ঝুঁকি নিয়ে গত মে মাসের ১৮ তারিখে তিনি ২ হাজারটি চারা রোপণ করেছেন। এরপর সঠিক সময়ে সার ব্যবস্থাপনা, মাচা তৈরি, ডগা কর্তন, ডগা মাচায় উঠিয়ে দেওয়া ও তরমুজের গায়ে জাল পরিয়ে টানিয়ে দেওয়াসহ যাবতীয় কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে শেষ করেন তিনি। এরপর ৩৫ দিনের মাথায় ফুল ও ফল আসে এবং ৬৫ দিনের মাথায় প্রথম বার ফল সংগ্রহ শুরু করেন । তার মোট খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। আর এবার আশা করছেন ৪ লাখ টাকা বিক্রয় হবে।
    উপজেলায় অসময়ে তরমুজ চাষে সবচেয়ে সফল কালিয়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রদীপ কুমার বর্মণ। তিনি জানান, বর্ষাকালে সঠিক পরিমাণ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এ বছর কিছুটা দেরিতে ১৫০বিঘা মৎস্য ঘেরের পাড়ে তিনি ১২ হাজার চারা রোপণ করেছেন। জমি প্রস্তুত, চারা লাগানো, মাচা তৈরি করা ও পরিচর্যাসহ খরচ হচ্ছে আনুমানিক ১০ লাখ টাকা। ৩৫ দিনের মাথায় ফল আসে ৬০-৬৫ দিনে সংগ্রহ করা যায় । প্রতিটি তরমুজের ওজন গড়ে প্রায় ৪ কেজির মতো হবে প্রায় ২ লাখ কেজি তরমুজের ফলন হওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি। বাজারমূল্য ঠিক থাকলে স্থানীয় বাজারে ৪০-৫০ টাকা পাইকারি কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করে তিনি প্রায় ৪০ লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন।

    খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলাবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, শেখ ফজলুল হক মনি বলেন, কালিয়ায় স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অফ সিজন তরমুজ চাষে সফল কৃষকরা। প্রতন্ত অঞ্চল দূর্গম জায়গা যেখানে সরকারি সেবা সহজে পৌঁছায় না সেখানে সেবা পৌঁছে দেওয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমরা সেই কাজটি করছি।

    কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি নড়াইল এর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ দীপক কুমার রায় বলেন, কালিয়ায় অফ সিজন তরমুজ চাষে কৃষকরা সফল। তাঁরা মাত্র ৬০-৬৫ দিনে খরচের ৬ গুন লাভবান হচ্ছেন। আমরা স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকের পাশে থেকে সাথে থেকে সর্বদা সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

    কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইভা মল্লিক বলেন,
    ‘তরমুজ এখন আর মৌসুমি ফল নয়, সারা বছরই তা চাষ করা যায়। বীজ বপনের ৪০ -৫০ দিনের মাথায় ফুল আসে, আর ফুল থেকে পরিপুষ্ট তরমুজ হতে সময় লাগে ৭০-৮০ দিন। মোট ৮০-৯০ দিনের জীবনকাল। বাইরে অংশ কালো রং ও ভেতরের অংশ টকটকে লাল ব্লাক বেরি জাতের এ তরমুজ ওজনে প্রায় ৩-৪ কেজি হয়ে থাকে। এ উপজেলায় প্রথম উচ্চফলনশীল ফসল হিসেবে এই তরমুজের চাষে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। ফলে এলাকার অনেকে চাষিই আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এই তরমুজ উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে বেশি লাভবান হচ্ছে।

    বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৩ জুলাই ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ