• শিরোনাম

    নওগাঁয় মেধা ছাড়া মিলছে না সরকারি চাকরি

    অনলাইন ডেস্ক শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪

    নওগাঁয় মেধা ছাড়া মিলছে না সরকারি চাকরি

    apps

    নওগাঁয় মেধা ছাড়া মিলছে না সরকারি চাকরি।তাই শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে বিভিন্ন পদে সরকারি চাকরি পেয়েছেন ১১৬জন ।

    সরকারি চাকরি পেতে হলে তদবিরের জোর মামা-খালু কিংবা প্রভাবশালী আত্মীয়-স্বজনের সুপারিশ থাকতে হয় এমন চিন্তাধারাকে পাল্টে দিয়েছে নওগাঁর ডিসি। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি প্রদান করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা।
    সম্প্রতি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ২০১৮সালের পর জেলার রাজস্ব প্রশাসনের আওতাভুক্ত বিভিন্ন শূন্য পদে ১১৬জনকে নিয়োগ প্রদান করে দৃষ্টান্তর স্থাপন করা হয়েছে।

    জেলার অনেক দরিদ্র, গরীব, অসহায় ও খেটে খাওয়া দিনমজুর পরিবারের ছেলে-মেয়েদের মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি নামক হীরার হরিণ উপহার দেওয়ায় ওই সব পরিবারের মানুষদের রঙ্গিন স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পেয়েছে। তদবিরের যুগে এসে সরকারি চাকরির এমন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় বর্তমান জেলা প্রশাসককে সাধুবাদ জানিয়েছে নওগাঁর সচেতন মহল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রেখে যাওয়া স্বপ্নের লাল-সবুজের বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে মেধা নির্ভর লোকের বড় প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষ।

    নওগাঁ জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার রাজস্ব প্রশাসনে ১৫ ও ১৬তম গ্রেডে নয়টি ক্যাটাগরিতে ড্রাফটসম্যান, নাজির কাম-ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, সার্টিফিকেট পেশকার, সার্টিফিকেট সহকারী, ক্রেডিট চেকিং কাম-সায়রাত সহকারী, মিউটেশন কাম-সার্টিফিকেট সহকারী, ট্রেসার ও কার্যসহকারী পদে মোট ৩৭টি শূণ্য পদে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ১৭তারিখে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে ৬ হাজার ৭৭২ জন চাকরিপ্রার্থী আবেদন করে। এরমধ্যে লিখিত পরীক্ষায় ৩ হাজার ৪২ জন অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে উত্তীর্ণ হন ১০৬ জন। এরপর ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষে গত ১২ ও ১৩ মার্চ রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে মৌখিক পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে মোট ৩৩ জনকে সাতটি ক্যাটাগরিতে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। সরকারি নিয়ম-নীতি মেনে দ্রুত সুপারিশপ্রাপ্তদের পদায়ন করা হয়। এতে ট্রেসার ও কার্যসহকারী পদে যোগ্যপ্রার্থী না থাকায় ৩টি পদে কাউকে সুপারিশ করা হয়নি।

    এছাড়াও ২০ তম গ্রেডে তিনটি ক্যাটাগরিতে অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মোট ৮৩টি পদে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে নিয়োগের জন্য ৮৩ জনকে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হয়। সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা, উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে পদায়ন করা হয়েছে।

    এছাড়াও ২০১৯সালের পর স্থানীয় সরকার শাখার অধিনে ইউনিয়ন পরিষদ হিসাব সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটরের ৫টি শুন্য পদে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের ৩০তারিখে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সকল কাজ প্রায় শেষের দিকে। দ্রুতই প্রক্রিয়া শেষে আবেদনকৃত প্রার্থীদের মধ্যে থেকে নিয়োগ প্রদান করা হবে।

    জেলার রাজস্ব প্রশাসনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিষয়ে একটি লেখা পোস্ট করেন জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা। মুহূর্তের মধ্যেই পোস্টটি সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। সেখানে মন্তব্যের ঘরে জেলা প্রশাসনের প্রশংসায় মেতে ওঠেন অনেকেই। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগের এই ধারা অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন দেশবাসী।

    এছাড়া গত ১৩মার্চ জেলা প্রশাসনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলার দেওয়া একটি পোস্ট থেকে জানা যায় যে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভ’মি প্রশাসনের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় যারা চ’ড়ান্ত ফলাফলে নিয়োগ পেয়েছিলো, তাদের মধ্যে তিনজন পোগদান না করায় অপেক্ষামান তালিকা থেকে প্রথম তিনজনকে সন্তোষজনক পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং সেই পোস্টে প্রার্থীদের রোল, নাম ও ঠিকানাও প্রকাশ করা হয়।

    অপেক্ষমান তালিকার মেধাক্রমের প্রথমে থাকা অফিস সহায়ক পদে সুপারিশ পাওয়া প্রার্থী নওগাঁ সদর উপজেলার মাদরাসা পাড়া এলাকার আমান উল্লাহের ছেলে মো. ছুফি উল্লাহ তানভীর মোবাইল ফোনে অনুভ’তি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন যেখানে সবচেয়ে ছোট পদের কোন সরকারী চাকরী পেতে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয় সেই সময়ে এসে আমার মতো একজন দরিদ্র ঘরের ছেলে বিনা টাকায় মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি পাবো তা কখনোও স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। প্রথমেই শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি মহান আল্লাহর দরবারে আর তারপরেই জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা স্যারের প্রতি দোয়া ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমি যতদিন এই চাকরিতে থাকবো ততদিন সততার সাথে দেশের সেবা ও মানুষের উপকার করার মধ্যদিয়ে এমন দুর্লভ উপহারের সঠিক ব্যবহার করার চেস্টা করবো ইনশাল্লাহ।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পরীক্ষার্থীর বাবা বলেন,আমি শুনেছি টাকা ছাড়া চাকরি হয়না তাই টাকা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি কেউ চাকরি দেয়ার সাহস পায়নি।তখন বুঝলাম এবারে টাকা ছাড়া চাকরি হয়েছে এজন্য ডিসি স্যারকে ধন্যবাদ জানাই।

    নওগাঁর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. গোলাম মওলা বলেন, আমি আমার নীতিতে অটল থেকে সম্পন্ন স্বচ্ছতার ভিত্তিতে চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পেরেছি বলে মহান আল্লাহ কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করছি। এছাড়া শত তদবির ও বাধা-বিপত্তির মধ্যেও সঠিক পন্থায় যোগ্য প্রার্থীদের মূল্যায়ন করতে পেরেছি বলে নিজেকে ধন্য মনে করছি।

    আমি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর থেকেই প্রচার করেছি যে শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। কেউ যেনো মিথ্যে প্রলোভনের প্রতারণার শিকার না হয়। অযথা তদবিরের পেছনে না ছুটে।শেষ পর্যন্ত আমি আমার কথা রাখতে পেরেছি। আমি যতদিন এই জেলায় রয়েছি ততদিন শতভাগ মেধার ভিত্তিতে চাকরী দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

    তিনি আরো জানান বর্তমানে সরকারি চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে। অধিকাংশ চাকরীর ক্ষেত্রেই মেধার মূল্যায়ন করা হচ্ছে। একসময় দেশের সর্বোচ্চ চাকরি পেতেও ঘুষের প্রচলন ছিলো কিন্তু এখন তা আর নেই। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে অনেক দিনমজুর, খেটে খাওয়া গোছের পরিবারের সন্তানরাও মেধার ভিত্তিতে বড় বড় সরকারি চাকরি পাচ্ছে। দিন যতই যাবে ততই স্বচ্ছতার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে চাকরি প্রদানের রেওয়াজ প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই আগামীতে যারা চাকরী প্রত্যাশী তারা অবশ্যই তদবিরের পিছনে না ছুটে এখন থেকেই মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে বলেন মেধা আছে যার চাকরি হবে তার।আমি থাকাকালীন কোন তদবির বা ঘুষ দিয়ে কোন চাকুরি হবেনা যা হবে মেধার ভিত্তিতে হবে।

    বাংলাদেশ সময়: ৮:৪৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ