• শিরোনাম

    নওগাঁয় মাদক ও খুনের পৃথক ২টি মামলায় ২ জনের মৃত্যুদন্ড

    সাহেব আলী, নওগাঁ প্রতিনিধি : সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪

    নওগাঁয় মাদক ও খুনের পৃথক ২টি মামলায় ২ জনের মৃত্যুদন্ড

    apps

    আজ সোমবার ( ২২এপ্রিল) দুপুরে নওগাঁয় মাদক ও খুনের পৃথক দুটি মামলায় ২ জনের মৃত্যুদন্ডের রায় প্রদান করেন নওগাঁর ভিন্ন দুটি আদালতের বিচারক মো: আবু শামীম আজাদ জেলা ও দায়রা জজ আদালত,স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল নং-১ ও বিচারক ফেরদৌস ওয়াহিদ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত ।

    একই সঙ্গে তাঁকে ৫০ হাজার টাকার অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আমেনার বাড়ি রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের মৃত মোজাহার আলীর স্ত্রী। ও সালাউদ্দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে। রায় ঘোষণার সময় তারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

    জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আব্দুল খালেক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে।

    আদালত ও মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে নিয়ামতপুর উপজেলার ধানসা গ্রামের আবু কালামের মেয়ে তুকাজ্জেবার (২৪) সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের সালাউদ্দিনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই সালাউদ্দিন তুকাজ্জেবার ওপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করতো। ২০২০ সালের ২৯ জুন তুকাজ্জেবা স্বামী সালাউদ্দিনকে নিয়ে বাবার বাড়ি নিয়ামতপুরের ধানসা গ্রামে বেড়াতে আসেন। পারিবারিক কলহের জেরে শ^শুড়বাড়িতে থাকা অবস্থায় ১ জুলাই সালাউদ্দিন তাঁর স্ত্রী তুকাজ্জেবার গলায় কাঁচি দিয়ে খুঁচিয়ে গুরুত্বরভাবে জখম করে। ওই দিন সকাল সাড়ে ৫টার দিকে তুকাজ্জেবা ও সালাউদ্দিনের ঘর থেকে চিৎকারের শব্দ পেয়ে তুকাজ্জেবার বাবা ও মা বাইরে থেকে ঘরের দরজা খোলার চেষ্টা করেন।

    এক পর্যায়ে প্রতিবেশি রবিউল ইসলাম লাথি মেরে দরজা ভেঙ্গে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে তুকাজ্জেবাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। এ সময় সালাউদ্দিনের হাতে কাপড় কাটার কাঁচি দেখতে পায় তাঁরা। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তুকাজ্জেবাকে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। স্ত্রীকে আহত করে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন সালাউদ্দিনকে আটক করে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।

    এ ঘটনায় নিহত তুকাজ্জেবার বাবা আবু কালাম বাদীয় হয়ে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে নিয়ামতপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা ২০২২ সালের ২২ জুন আদালতে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে বিধির ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। রাষ্ট্রপক্ষের মোট ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালতে ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের দীর্ঘ সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দোষী নওগাঁর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু শামীম আজাদ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদÐ কার্যকর করার আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়েছে।

    অপর আসামী আমেনার ইহা একটি দায়রা মামলা। প্রসিকিউশন পক্ষের মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরন এই যে, এজাহারকারী মোঃ আব্দুল্লা হিল বাকী, উপ-পরিদর্শক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, নওগা গত ১৬/০৮/২০২০ইং তারিখের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিভাগীয় সহকারী পরিচালক জনাব মোঃ লোকমান হোসেন এর নেতৃত্বে বিভাগীয় স্টাফ সিপাহী মো মিলন এর সমন্বয়ে একটি রেইডিং পার্টি গঠন করিয়া নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর থানাধীন ধানসুরা হইতে নিয়ামতপুরগামী পাকা রাস্তার উপর বনগাঁপাড়া গ্রামস্থ বনগাঁপাড়া চৌরাপাড়া ব্রীজ সংলগ্ন জনৈক আইনুল হক এর চায়ের দোকানের সামনে নওগাঁগামী যাত্রীবাহী বাস (নামবিহীন) যাহার রেজিঃ নং-ঢাকা-১-৩৩৬৭ তাহাদের সামনে আসিলে সকাল ০৮.১৪ ঘটিকায় সিগন্যাল দিয়া থামান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাক্ষী (১) শ্রী প্রতাব রায় (২) মোঃ নজরুল ইসলাম ও (৩) সুলতানা রাবিয়াকে সঙ্গে লইয়া বিধি মোতাবেক উক্ত যাত্রীবাহী বাসটির ভিতরে প্রবেশ করিয়া তল্লাশী করেন। তল্লাশীকালে উক্ত বাসের ভিতর ডান পাশের জানালার দিকে চালকের পিছনের সীটে বসা আরোহী যাত্রী আসামী মোছাঃ আমেনাকে সাক্ষী সুলতানা রাবিয়া এর মাধ্যমে আসামীর দেহ তল্লাশী করিয়া আসামীর ডান হাতে ধরা একটি লাল রঙের টিস্যু কাগজের ব্যাগের ভিতর রক্ষিত একটি পলিখিন প্যাকেটের মধ্যে কালো রঙের প্লাষ্টিকের টেপ দ্বারা মোড়ানো অবস্থায় অবৈধ মাদকদ্রব্য হেরোইন ১৫০ গ্রাম এবং উক্ত ব্যাগের মধ্যে ০৮টি নীল রঙের ছোট জিপার যুক্ত প্লাষ্টিকের প্যাকেটের ভিতর অবৈধ মাদকদ্রব্য এ্যামফিটামিন যুক্ত ইয়াবা ট্যাবলেট, যাহার প্রতিটি প্যাকেটে ২০০ পিচ করিয়া মোট ১৬০০ পিচ মোট ওজন ১৬০ গ্রাম উদ্ধার ও জব্দ করেন। ঘটনাস্থলে জব্দকৃত আলামতগুলি ইলেকট্রনিক কিচেন স্কেল দ্বারা পরিমাপ করিয়া সকাল ৮.২৪ ঘটিকায় জব্দ তালিকা প্রস্তুত করেন। জব্দ তালিকায় সাক্ষীদের স্বাক্ষর গ্রহন করেন এবং নিজেও স্বাক্ষর করেন। জব্দকৃত আলামত সাক্ষীদের স্বাক্ষরযুক্ত লেবেল দ্বারা সীলগালা করেন। আসামীকে গ্রেফতার করেন। অতঃপর জব্দকৃত আলামত, আটককৃত আসামী ও গঠিত রেইডিং পার্টিসহ থানায় হাজির হইয়া লিখিত এজাহার দায়ের করেন।

    আসামীদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্র আইনের ৩৬(১) এর ৭(গ) ধারার অভিযোগ গঠন করেন। গঠিত অভিযোগ আসামীকে পাঠ ও ব্যাখ্যা করিয়া শুনানো হইলে নিজেকে নির্দোষ দাবী করিয়া বিচার প্রার্থনা করেন।। রাষ্ট্রপক্ষের মোট ৮ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালতে ৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের দীর্ঘ সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে আমেনার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় নওগাঁর বিচারক ফেরদৌস ওয়াহিদ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদÐ কার্যকর করার আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়েছে।

    আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে টনির মামলাটি শুনানি করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আব্দুল খালেক এবং আসামিপক্ষে মামলাটি শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আতিকুর রহমান।

    আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আমেনার মামলাটি শুনানি করেন দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি সঞ্জিব সরকার এবং আসামিপক্ষে মামলাটি শুনানি করেন আইনজীবী শুভ্র সাহা।

    সরকারি কৌঁসুলি আব্দুল খালেক বলেন, সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করেছেন। রায়ে হাইকোর্ট বিভাগে মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা সাপেক্ষে আসামি সালাউদ্দিনকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। এ রায় হত্যা মামলার ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন এই আইনজীবী।

    বাংলাদেশ সময়: ৫:২৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ