• শিরোনাম

    নওগাঁয় আড়াই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা

    সাহেব আলী, নওগাঁ প্রতিনিধি : রবিবার, ২৮ মে ২০২৩

    নওগাঁয় আড়াই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা

    apps

    উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ আম চাষে আয়তনের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম হলেও আম উৎপাদনে নওগাঁ জেলা প্রথম স্থান দখল করেছে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে আয়তনে ১ম চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে নওগাঁয়। লাভজনক হওয়ায় জেলায় প্রতি বছরই আম চাষ বাড়ছে।

    জেলার সাপাহারের বাগান মালিক জাহাঙ্গীর আলম মানিক বলেন, ‘আমকে ঘিরে আমাদের এলাকার অর্থনীতি চাঙা হয়ে উঠেছে। জেলার সাপাহার ও পোরশা উপজেলায় বেশিরভাগ বেশি জমিতে আমের বাগান গড়ে উঠেছে। বেচা কেনা এখনো তেমন একটা জমে ওঠেনি। পুরোপুরি বাজার শুরু হতে আরোও ১০/১৫দিন সময় লাগবে। বাজারে এখন আমের মন বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ৪০০০ টাকা।
    জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে নওগাঁ জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হওয়ায় দেশের সর্বোচ্চ আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৫২৫ হেক্টর বেশি। এবার প্রতি হেক্টর জমিতে ১২ দশমিক ৫০ টন হিসেবে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৫ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার সম্ভাব্য মূল্য ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫শ কোটি টাকা।
    আমের নতুন রাজধানী হিসাবে পরিচিতি পাওয়া নওগাঁয় আম সংগ্রহ গত ২২ মে থেকে শুধু গুটি জাতের আম সংগ্রহ শুরু হলেও সুস্বাদু আম খেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন। আগামী ৩০ মে মূলত আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হবে আম সংগ্রহ। এদিন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি আনুষ্ঠানিক ভাবে আম সংগ্রহ অভিযান শুর করবেন।

    এদিকে জেলা প্রশাসন নওগাঁর আম পাড়ার সময়সীমাও নির্ধারণ করে দিয়েছে । সে অনুযায়ী, উন্নত জাতের আমের মধ্যে গোপালভোগ ২৮ মে এবং খিরসাপাত বা হিমসাগর ২ জুন থেকে পাড়া যাবে। নাগ ফজলি ৭ জুন, ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙ্গা ১০ জুন, ফজলি আম ২০ জুন ও আম্রপালি ২২ জুন থেকে পাড়া যাবে।
    সর্বশেষ ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, বারী-৪ ও গৌরমতি জাতের আম পাড়তে পারবেন চাষিরা। তবে আবহাওয়া, তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতসহ বিশেষ কারণে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আগে আম পাড়া যাবে।
    সাপাহার উপজেলা আমচাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সামনে বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার নওগাঁ জেলায় প্রায় ২হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে ।’
    আড়তদার রুহুল আমিন বলেন, আমের বাজার এখনও জমে ওঠেনি। আরও ১৫ থেকে ২০দিন সময় লাগবে। বর্তমানে স্থানীয় জাতের গুটি আম আসতে শুরু করেছে।

    নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত বছর ৭৭ টন আম রপ্তানি হয়েছে। এ বছর প্রায় ৪০০ টন রপ্তানির সম্ভাবনা আছে। এ জন্য আম চাষীদের আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী উত্তম কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ করে আম চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে । আমের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য প্রচুর প্রচারণাও করা হয়েছে। এতে সারাদেশে এ জেলার আম ব্র্যান্ডিং হিসেবে পরিচিত পাবে।
    তিনি বলেন, জেলায় সবচেয়ে বেশি আম্রপালির চাষ হয়। উৎপাদিত আমের প্রায় ৬০ শতাংশই আম্রপালি। এ ছাড়া নওগাঁয় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত আমের মধ্যে বারি-৪, ল্যাংড়া, গৌড়মতি, আশ্বিনা, হিমসাগর, গোপালভোগ ও কাটিমন আম চাষ হয়। নওগাঁয় আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে ২৫ জুন থেকে। বর্তমানে বাজারে উঠেছে হিমসাগর/ক্ষীরসাপাত, ল্যাংড়া, নাকফজলি ও আম্রপালি আম।

    কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হতো। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের এখন আর একচ্ছত্র আধিপত্য নেই। নওগাঁয় এ বছর প্রায় সাড়ে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাষ হয়েছে ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে। নওগাঁয় প্রতি হেক্টর জমিতে এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬ মেট্রিক টন। সেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ মেট্রিক টন।
    জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, নওগাঁ জেলার ১১টি উপজেলায় কমবেশি আমের চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় সাপাহার ও পোরশা উপজেলায়। চলতি মৌসুমে সাপাহারে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে এবং পোরশা উপজেলায় ১০ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে যার হেক্টরপ্রতি ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬ মেট্রিক টন।

    এ ছাড়া সদর উপজেলায় ৪৪৫ হেক্টর, রানীনগরে ১১০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ১২০ হেক্টর, বদলগাছীতে ৫২৫ হেক্টর ও পত্নীতলায় ৪ হাজার ৮৬৫ হেক্টর, মহাদেবপুরে ৬৮০ হেক্টর, ধামইরহাটে ৬৭৫ হেক্টর, নিয়ামতপুরে ১ হাজার ১৩৫ হেক্টর এবং মান্দা উপজেলায় ৪০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে।
    নওগাঁ জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২০২০-২১ মৌসুমে আমবাগান ছিল ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন হয়েছিল ১৩ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৫ মেট্রিক টন আম। যার বিক্রয় মূল্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৫৭০ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

    গত ২০২১-২২ মৌসুমে আমবাগান ছিল ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন হয়েছিল ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন আম। যার বিক্রয় মূল্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
    গতবারের চেয়ে জেলায় এবার ৫২৫ হেক্টর জমিতে আমচাষ বেশি হওয়ায় উৎপাদন অন্য যে কোনো সময়ের রেকর্ড ভাঙবে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।

    বাংলাদেশ সময়: ১১:২২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৮ মে ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ