| মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০২০ | প্রিন্ট
নবকন্ঠ ডেস্ক: করোনা প্রকোপে দেশ যখন বিপর্যস্ত তখন চট্টগ্রামে সাধারণ থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তারুণ্যের কান্ডারি প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর । চট্টগ্রামের এক আলোকিত পরিবারের সন্তান প্রকৌশলীর জ্যোতির্ময় ধর। নিতান্তই মনের তাগিদে করোনাকালীন সময়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় নিজের অর্থে রাতদিন ছুটে চলেছেন সাধারণ মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে। আবার কখনো দেখা গেছে-চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে, আবার কখনো করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অক্সিজেন সরবরাহে এবং আক্রান্তদের সৎকারের ব্যবস্থার এমন মানবিক উদ্যোগে রাজপথে।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক রণজিৎ কুমার ধর ও চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর রীতা দত্তের একমাত্র পুত্র প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর। প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর জার্মান ইনস্টিটউট অব অলটারনেটিভ অ্যানার্জিতে রিসার্চ অফিসার ও জার্মান ইনস্টিটউট অব অলটারনেটিভ এনার্জির বাংলাদেশ প্রতিনিধি।
তড়িৎ প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর দীর্ঘ ১৯ বছর পর সম্প্রতি দেশে আসেন , জার্মান ইন্সিটিউট অফ অলটারনেটিভ এনার্জির বাংলাদেশ প্রতিনিধি হয়ে , পাওয়ার সেক্টরে বিনিয়োগের লক্ষে । অল্প কিছু দিনের মধ্যেই মুখোমুখি হন করোনায় সংকটাপন্ন এক নগরীর । চিরচেনা সেই প্রাণের চট্টলা যেন অন্যরূপে আবির্ভূত হতে চলছে। ‘লকডাউন’- নামক বারণ নিষেধে ঘরে বসে থাকার পাত্র জ্যোতির্ময় নই। তবুও করার তো কিছুই নেই, এই করোনাভাইরাস থামিয়ে দিয়েছে বিশ্বের অনেক উন্নত, সমৃদ্ধশালী ও ক্ষমতাধর রাষ্ট্রকেও । থমকে যাওয়া পৃথিবীতে প্রাণের নগরী চট্টলার অসহায় পরিবারগুলোর কথা ভাবতেই অদম্য জ্যোতির প্রাণ কেঁদে উঠে। নিজের সর্বস্ব দিয়ে যুক্ত হয়ে পড়েন মানবিক কর্মযজ্ঞে। মানবতার চরম এ দুর্দিনে এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন জ্যোতির্ময় ধর নামের এই মানবতাবাদী যুবক । বৈশ্বিক বিপর্যয় আর মানবিক বিপর্যয় একাকার হয়ে তৈরি হওয়া যুগপৎ মানবিক সঙ্কটে জ্যোতির্ময় ধরের মহতী এই কার্য্যক্রম সত্যি প্রশংসামুখর । বিগত ২৭ শে মার্চ থেকে এ পর্যন্ত নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে তিনি চট্টগ্রাম শহরের প্রায় পাঁচ হাজারের মতো অসহায় নিম্ন মধ্যবিত্ত- মধ্যবিত্ত পরিবারের পাশাপাশি ভাসমান মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই পর্যন্ত নিজের অর্থসহ তার আরো দুইজন বন্ধুর সহযোগিতায় মোট ২১ লাখ টাকার উপহার সামগ্রী, রান্না করা খাবার, করোনা মোকাবেলার সামগ্রীসহ করোনা আক্রান্ত মানুষের মাঝে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করেছেন এই স্বপ্নচারী যুবক ।
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীর ফুটপাতে ভাসমান মানুষের পাশাপাশি নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত সহ নানান শ্রেণী-পেশার মানুষের পাশে ছুটে গেছেন উপহার সামগ্রী ব্যাগ নিয়ে অথবা রান্না করা খাবার নিয়ে। যখনই তার কাছে যেখান থেকে ফোন এসেছে নিজের গাড়ি নিয়ে সেখানেই উপহারসামগ্রী ব্যাগ নিয়ে ছুটে গেছেন গভীরে রাত পর্যন্ত নগরীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে নির্দ্বিধায় । কথা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জ্যোতির্ময় জানান এই কাজ করতে নাকি তার ভালো লাগে। প্রবাসেও তিনি এই ধরনের কাজের সাথে বছরের বিভিন্ন সময় যুক্ত থাকেন । বলা যায় রক্তে তার মিশে আছে সমাজসেবা-মানবিকতার বিষয়টি ।
সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত চট্টগ্রামের ২৭ জন গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য পুষ্টিকর ফলমূল সমৃদ্ধ উপহার নিয়ে তাদের খোঁজখবর রেখেছেন এই প্রকৌশলী। নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছেন করোনা-আক্রান্ত সাংবাদিকদের । ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম সংবাদপত্র কম্পিউটার অপারেটর এসোসিয়েশন এর মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পরা ৫০ জন সংবাদপত্র কম্পিউটার অপারেটর এর পরিবারকে ১০ দিনের শুকনা খাদ্য ও মানবিক সাহায্য প্রদান করেন। করোনা পরিস্থিতিতে কাজ হারানো ২০ জন সাংবাদিকের পরিবারকে তিনি খাদ্য মানবিক সাহায্য ও উপহার প্রদান করেন ।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে কর্মরত সকল ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী, পিয়ন, নৈশ প্রহরি দের তিনি ঈদ উপহার নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান তিনি। মানবসেবায় যুব রেডক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও তিনি গুরুদায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সেই সাথে বিশিষ্ট সাংবাদিক তুষার আব্দুল্লাহ কর্তৃক পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “করোনায় তারুন্য” চট্টগ্রামের ত্রাণ কর্মী হিসেবে মাঠে আছেন। জ্যোতির্ময় ধর শুধু চট্টগ্রামেই নই, ঢাকার সেচ্ছাসেবী নাফিসা আনজুম খানের মাধ্যমেও অনেক পরিবারের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফন ও সৎকার কাজে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবীদের জন্যও তিনি বাড়িয়ে দিয়েছেন সহায়তার হাত এবং করোনা পরিস্থিতিতে অর্থ কষ্টে থাকা কয়েকটি অনাথ আশ্রম ও এতিমখানায় ও তিনি বাড়িয়ে দিয়েছেন মানবকল্যাণে সাহায্যের হাত ।
গত ২৪ এ জুলাই প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর ও ঢাকার স্বেচ্ছাসেবী নাফিসা আনজুম খান এর যৌথ উদ্যোগে , চট্টগ্রামে করোনার কারনে কর্মহীন হয়ে পরা ২০০ জন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের হাতে তাঁরা তুলে দেন ব্যাতিক্রম ধর্মী ঈদ উপহার – ১০ দিনের খাদ্য সরবরাহ । এছাড়া প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধরের সহায়তায় গড়ে ওঠে যুব রেডক্রিসেন্ট পরিচালিত সপ্তাহ ব্যাপি মেডিক্যাল ক্যাম্প , যেখানে গত ২১ এ জুলাই থেকে ২৭ এ জুলাই , বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ পেয়েছে , চট্টগ্রামের প্রায় দুহাজার মানুষ ।
বর্তমানে তিনি যুব রেডক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের একজন সেচ্ছাসেবক হিসেবে , অসুস্থ রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার সাপোর্ট টিমের প্রধান উদ্যোক্তা ও সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন ।
Posted ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০২০
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।