• শিরোনাম

    আয়োজনের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে দাগনভূঞার ঐত্যিহ্যবাহী খেলা কাবাডি

    নাজমুল হাসান, রবিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

    আয়োজনের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে দাগনভূঞার ঐত্যিহ্যবাহী খেলা কাবাডি

    apps

    ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার হারিয়ে যাচ্ছে ঐত্যিহ্যবাহী গ্রামীন খেলাগুলো। যার মধ্যে অন্যতম হলো হাডুডু/কাবাডি। আধুনিকতার ছোঁয়া ও কালের বিবর্তনে শিশু কিশোরদের মধ্যে আসছে নতুন নতুন খেলা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার ও ঘরে ঘরে ভিডিও গেমের দৌরাত্ম্যে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী সব ধরনের খেলাধুলা। মহাকালের পাতা থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ খেলা। বই পুস্তকে খেলার নাম দেখলেও বাস্তবে খেলার সুযোগ হয়ে উঠেনি এমন শিশুর সংখ্যা বাড়ছেই। আর হারিয়ে যাওয়া খেলায় যুক্ত হয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাবাডি (হাডুডু) খেলার নামও। যা আমাদের দেশের জাতীয় খেলা। প্রযুক্তির দাপটে অস্তিত্ব হারিয়েছে অধিকাংশ খেলা। একটা সময় গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত শিশু ও যুবকরা পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন খেলাধুলায় অভ্যস্থ ছিল। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা অবসরে দলবেঁধে খেলতো নানা প্রকারের খেলা। এসব খেলা বাড়ির উঠান থেকে শুরু করে রাস্তার আনাচে-কানাচে, খোলা মাঠে কম পরিসরেই খেলা যেত। কিন্তু বর্তমান সময়ে মাঠ,বিল-ঝিল হারিয়ে যাওয়া, আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া ও প্রযুক্তির বিকাশে মহাকালের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে জনপ্রিয় এসব গ্রামীণ খেলাধুলা। এখানকার দিনে শহরের শিশুরা ঘরের কোণে বসে বিভিন্ন ডিভাইস নিয়ে পড়ে থাকে। যার কারণে তাদের মেধার বিকাশও সঠিকভাবে হয় না।

    জানা যায়, গ্রামীণ এসব খেলাধুলা হলো বিনোদনমূলক, স্বাস্থ্য সচেতনমূলক ও প্রতিভা বিকাশের অন্যতম। যা আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতি। এসব খেলাধুলা এক সময় আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করতো। বর্তমানে গ্রামীণ খেলাগুলো বিলুপ্ত হতে হতে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামবাংলার এক সময়ের জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে ছিল: হা-ডু-ডু/কাবাডি, ঘুড়ি খেলা, দাঁড়িয়াবান্ধা, ডাংগুলি, গোল্লাছুট, কুস্তি, গোশত চুরি, কুতকুত, চোর-পুলিশ, হাড়িভাঙা, ইচিং বিচিং, ওপেন টু বায়োস্কোপ, কড়ি খেলা, সাপ খেলা, কানামাছি, লাঠি খেলা, ষাড়ের লড়াই, বউ-ছি, বলী খেলা, টোপাভাতি, নোনতা খেলা, নৌকা বাইচ, লুডু খেলা, রুমাল চুড়ি, পুতুল বৌ, ফুল টোক্কা, বাঘ ছাগল, বরফ পানি, মার্বেল, মোরগ লড়াই, লাটিম, লুডু, ষোল গুটি, এক্কা দোক্কা, সাত পাতা, বটি বটি, দাপ্পা, রস-কস, চারগুটি, চেয়ার সিটিংসহ আরও হাজারো প্রকার খেলা। এইসব জনপ্রিয় গ্রামীণ খেলাধুলা আজ প্রায় বিলুপ্ত।

    এই বিষয়ে ষাটোর্ধ্ব আবু সেলিম বলেন, আগের দিনে আমরা মৌসুমে প্রায় দিনই এ খেলা খেলতাম। আমি ভাড়ায়ও দূর দূরান্ত গ্রামে খেলতে যেতাম। যেসব এলাকায় এ খেলার অনুষ্ঠান হতো সেইসব এলাকায় ঈদের মতো আমেজ বইতো। এখন আর আগের মতো হা-ডু-ডু খেলা দেখা যায় না। এই খেলা এখন প্রায় বিলুপ্ত।

    সিনিয়র সাংবাদিক আজাদ মালদার বলেন, কাবাডি আমাদের জাতীয় খেলা। তবে দিন দিন এ খেলাটি হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ খেলা টিকিয়ে রাখতে আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। যুব সমাজকে মাদকের থেকে দূরে রাখতে হলে আমাদের গ্রামীন খেলাগুলোর আয়েজন করতে হবে। বর্তমান প্রযুক্তির সুবিধা ও এর ব্যবহারে এগিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। তখন কেন পিছিয়ে থাকবে আমাদের প্রাণের খেলাগুলো? আমাদের সবার একটু চেষ্টাই পারে নতুন প্রজন্মকে এসব খেলার সঙ্গে পরিচিত করাতে। যা আমাদের ইতিহাস আর শিকড়কে টিকিয়ে রাখতে শক্তিশালী একটা মাধ্যম। সরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে এসব খেলার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যায় তাহলে স্কুলে শিশুদের এসব খেলার সঙ্গে পরিচয় করানোর সুযোগ আছে। চাইলেই বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমানো যায় এসব খেলাধুলায় যুক্ত করে।

    বাংলাদেশ সময়: ৮:৫৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ