
নবকণ্ঠ ডেস্ক | বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫ | প্রিন্ট
সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে ইকনোমিক মিনিস্টার পদে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ হওয়ায় কিছু শর্ত জুড়ে প্রার্থীদের কাছে আবেদন চাওয়া হয়। শর্তানুযায়ী বেশকিছু সংখ্যক যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা এ পদের প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেন।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে ছয় কর্মকর্তাকে চূড়ান্তভাবে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। নিয়োগ কমিটির প্রধান হলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। অন্যদের মধ্যে ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোঃ মোখলেস উর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দীন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহিম খান।
গত ১৮ মে সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার কক্ষে প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আশিক চৌধূরী। ইকোনমিক মিনিস্টারসহ বিদেশের অন্যান্য দূতাবাসে বাণিজ্য উইংয়ে কর্মকর্তা নিয়োগেরও জন্য মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়ে চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। বিদেশে বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন দূতাবাসে বাণিজ্য উইংয়ে যোগ্য ও মেধাবী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অতীতে রাজনৈতিক সরকারের আমলে এসব দূতাবাসে অনেকাংশে রাজনৈতিক বিবেচনায়ও কর্মকর্তা নিয়োগের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ২০২৪ সালে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর ৮ আগস্ট ড ইউনূসের নেতৃত্বে গঠন হয় অন্তর্বর্তীকালিন সরকার। এরপর মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন দূতাবাসে পতীত সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের সম্পর্কে বিশেষ তালিকা করা হয়। ইতিমধ্যে অনেকেই ওএসডি, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। বিপরীতে দলনিরপেক্ষ, মেধাবী ও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সেক্টরে পদায়নের গুরুত্বারোপ করা হয়। কেউ যাতে বিগত পতীত সরকারের সুবিধাভোগীরা পুনরায় সুবিধা নিতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-ঐক্য পরিষদ থেকেও এমন আহ্বান জানানো হয়।
ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের সময়কাল ১০ মাস পেরিয়ে গেছে। এরপরও পতীত সরকারের সেুবিধাভোগী কর্মকর্তারা সুবিধা নিতে দৌঁড়ঝাপ করছেন। তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন দুতাবাসে নিয়োগ পেতে তৎপর রয়েছেন। বিগত পতীত সরকারের আমলে আস্থাভাজন হিসেবে দুতাবাসে কর্মরত ছিলেন সেইসব কর্মকর্তারা দূতাবাসে বাণিজ্য উইংয়ে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। তারা নিয়োগ বাগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে লবিং অব্যাহত রেখেছেন। সরকারের একটি মহল নেপথ্যে থেকে তাদের সহায়তা করছেন। এরই অংশ হিসেবে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ দূতাবাসে ইকনোমিক মিনিস্টার নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন পতীত হাসিনা সরকারের আমলে দূতাবাসে চাকরি করা সেই কর্মকর্তা। তাকে নিয়োগের জন্য তথ্য গোপন করে মন্ত্রণালয়েরে এক কর্মকর্তা বাণিজ্য উপদেষ্টাকে ভুল বুঝিয়েছেন।উপদেষ্টাকে বিভ্রান্ত করে পতীত সরকারের সুবিধাভোগী এক কর্মকর্তাকে ইকনোমিক মিনিস্টার নিয়োগ দেওয়ার সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্রগুলো বলছে, সুইজারল্যান্ডস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে ইকনোমিক মিনিস্টিার পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (ডব্লিউটিও) সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় করা। সুইজারল্যান্ড সরকারের সাথে চুক্তি সম্পাদন করতে পারদর্শীতা দেখানো। সেক্ষেত্রে গবেষণায় পারদর্শী এমন কর্মকর্তাদের প্রয়োজন। তাদের বাণিজ্য কূটনৈতিক তৎপরতায় দেশের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল হবে। এজন্য যোগ্য কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেবে এমনটি প্রত্যাশা করেন অনেকেই। এরপরও অতীত পর্যালোচনা না করে পতীত সরকারের আস্থাভাজন ছিলেন এমন কর্মকর্তারা জেনেভাস্থ ইকোনমিক মিনিস্টার পদে নিয়োগ পেতে দৌঁড়ঝাপ করছেন। তারা অনেকটা এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ইকনোমিক মিনিস্টার পদের বিপরীতে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ছয় কর্মকর্তার কর্মজীবন সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা করে জানা গেছে, যুগ্মসচি দিল আফরোজ বিসিএস ২০ ব্যাচের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি প্রত্যাশী তিনি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগী কর্মকর্তা হিসেবে প্রশাসনে পরিচিত। তার স্বামীও বিগত সরকারের সময় চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মাশিয়াল কাউন্সিলর ছিলেন। তৎকালিন বাণিজ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ট হওয়ার সুবাদে তিনি এই পদে নিয়োগ পান। স্বামী চীনে কর্মরত আছেন সেই যুক্তিতে এই কর্মকর্তা (দিল আফরোজ) চার বছর পূর্ণ বেতনে ছুটি নিয়ে চীনে থেকেছেন। আরেক যুগ্মসচিব (কাস্টমস ক্যাডার) জহিরুল কাইয়ুম। তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত রয়েছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ৫ বছর ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে কর্মাশিয়াল কাউন্সিলর পদে ছিলেন। পতীত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বাণিজ্যমন্ত্রীর জোরালো তদবিরে তিনি ব্রাসেলসের কর্মাশিয়াল কাউন্সিলর পদে নিয়োগ পেয়ে যান। একই কায়দায় অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের শীর্ষপর্যায়ে সম্পর্কের মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা দুতাবাসে ইকোনমিক মিনিস্টার পদে নিয়োগ পেতে জোর লবিং করছেন। পুনরায় এই কর্মকর্তা ইকনোমিক মিনিস্টার পদে নিয়োগ পেলে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় বইবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
বিসিএস ২২ ব্যাচের আরেক যুগ্মসচিব ড. মো. মনিরুল ইসলাম। তিনিও যুক্তরাজ্য থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। মাঠ প্রশাসনে বিভিন্ন পর্যায়ে চাকরির অভিজ্ঞতা রয়েছে। এখন তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে রয়েছেন। আরেক যুগ্মসচিব ড. রহিমা খাতুন। বিগত সরকারের আমলে সুবিধাভোগী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মাদারীপুর জেলায় ছিলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি।
আরেকজন যুগ্মসচিব এ কে এম ফজলুল হক। সরকারি ছুটি নিয়ে পিএইচডি করতে বিদেশে গিয়েছিলেন। কিন্তু সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশে ফিরে আসেন। আরেক যুগ্মসচিব বিসিএস ২২ ব্যাচের মোহাম্মদ মাশুকুর রহমান শিকদার। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সির একান্ত সচিব ছিলেন। সেই সুবাদে তিনি প্রায় ৬০টি দেশ সরকারি অর্থে সফর করেছেন।
Posted ২:৪০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫
dainikbanglarnabokantha.com | Shanto Banik
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।