• শিরোনাম

    কেসিসি নির্বাচন, প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির বন্যা প্রচারণা তুঙ্গে

    মোঃ রেজওয়ান, খুলনা প্রতিনিধি: শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩

    কেসিসি নির্বাচন, প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির বন্যা প্রচারণা তুঙ্গে

    apps

    প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় খুলনা সিটি নির্বাচন জমে উঠেছে। প্রার্থীদের ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গণসংযোগ ও প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন তারা। মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রচারণা এখন তুঙ্গে। শনিবার রাত বারোটায় আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ হবে, তার আগেই সাধ্যের সবটুকু প্রচারণা শেষ করতে চান প্রার্থীরা । এদিকে, প্রার্থীদের নির্বাচনী ইশতেহার ও প্রচারণায় প্রচারণায় প্রতিশ্রুতির বন্যা ছড়াচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
    আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও সদ্য বিদায়ী মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ‘স্মার্ট খুলনা’ গড়ে তোলাসহ ৪০ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। অপরদিকে, জাতীয় পাটির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু ২২ দফা এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা আব্দুল আউয়াল ২৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান মুশফিকও বেশ কয়েক দফা প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করেছেন তার ইশতেহারে।

    আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক তার ইশতেহারে জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ড্রেন পরিষ্কার, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন ও নিরাপদ স্বাস্থ্যকর খুলনা, সূর্যোদয়ের আগেই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম এবং মাদকমুক্ত নগর গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন। এ ছাড়া তাঁর প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান উপযোগী নগরী গড়ে তোলা, হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে সেবার মান বৃদ্ধি, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, কেসিসিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, খুলনা মহানগরীর সম্প্রসারণ প্রভৃতি ।

    তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, আমার আগের কার্যক্রমের মূল্যায়ন করে ভোটাররা যদি আমাকে আবারও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেন, তাহলে সবার সহযোগিতায় খুলনাকে উন্নত, সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত আধুনিক স্মার্ট নগর হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।
    গত ২৮ মে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী আব্দুল আউয়াল। ইশতেহারে তিনি খুলনাকে আন্তর্জাতিক মানের এবং আধুনিক ও ‘শান্তির নগরী’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

    তিনি পায়ে চালিত রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ির লাইসেন্স ফি মওকুফ, হালকা যানবাহনগুলোর লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা, হোল্ডিং ট্যাক্স ৩০ শতাংশ মওকুফ ও ট্রেড লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা, সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হতে যাওয়া নতুন এলাকার হোল্ডিং ট্যাক্স পাঁচ বছরের জন্য মওকুফ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
    আউয়াল তাঁর ইশতেহারে পতিতাবৃত্তি, ব্যভিচার, লিভ টুগেদার ও নারী উত্ত্যক্ত প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহনের কথাও বলেন। এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে জানান, তিনি শান্তির নগরী গড়ে তুলতে চান। নির্বাচিত হতে পারলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবেন।
    সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু কেসিসির সকল কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং কেসিসিকে ওয়াসা, কেডিএ, পেট্রোবাংলা, খুলনা জেলা প্রশাসন, মেট্রো ও জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে খুলনা মহানগরীকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলাসহ ২২ দফা নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন।

    ২২ দফা ইশতেহারের অন্যান্য দফাগুলো হচ্ছে, কেসিসির এরিয়া বর্ধিতকরণ ও বিশ^ রোডের সঙ্গে নগরীর একাধিক বাইপাস নির্মাণ, নগরীর ২২ খালসহ ময়ূর নদী খনন ও ময়ূর নদী কেন্দ্রিক নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা, বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং শিক্ষাবৃত্তি, মুক্তিযোদ্ধা ও গুণীজন সম্মাননা প্রদান প্রভৃতি ।
    নির্বাচিত হলে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন তিনি।
    জাকের পার্টির মেয়র প্রার্থীী এস এম সাব্বির হোসেন বলেন, তিনি ‘তিলোত্তমা নগরী’ গড়তে চান। তবে জাকের পার্টির এ প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে কোন ইশতিহার ঘোষণা করেননি।

    অপরদিকে, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী শফিকুর রহমান মুশফিক মাদক মুক্ত নগরী গঠন ও হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি না করে নাগরিক সেবার মান বাড়াতে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন শ্রেণি -পেশার মানুষের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে নাগরিক পরামর্শক কমিটি গঠন, তিন মাস পর পর মুখোমুখি অনুষ্ঠান, হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
    তিনি মাদক মুক্ত নগরী গঠন, আধুনিক আর্ট গ্যালারি স্থাপন, রিকশা, ইজিবাইক, ক্ষুদ্র যানবাহানের লাইসেন্স সহজতর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
    তিনি বলেন, কেসিসির সীমানা বৃদ্ধি, সুইমিংপুল নির্মাণ, নতুন নতুন মার্কেট নির্মাণ, প্রশাসনিক কর্মকান্ড বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। মুশফিক ট্যাক্স হোল্ডারদের স্মার্টকার্ড প্রদান, শ্রমিক-কর্মচারীদের ৯০ মাসের গ্রাচ্যুইটি ফান্ড গঠন, এসডিজি নীতিমালা অনুসরণ ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সাথে সর্ম্পক স্থাপন করা হবে। সিটি করপোরেশনের প্লানিং শাখায় দক্ষ জনবল নিয়োগ, নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব নগরী গঠন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এসময় স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনী পরিবেশে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সাধারণ মানুষ এখনও নির্বাচন নিয়ে সংশয়ে আছেন। তবে পরিবেশ ভাল। আমি চাই মানুষ ভোট কেন্দ্রে আসুক। তাদের যাকে পছন্দ, তাকে ভোট প্রদান করুক। দয়া করে রাষ্ট্রের নির্বাচন প্রক্রিয়া ও এর স্বপ্নকে ব্যর্থতায় পরিগণিত হতে দেবেন না।

    এদিকে, ২৯টি ওয়ার্ডের ১৩৪ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের ৩৯ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
    এ ব্যাপারে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব বাবুল হাওলাদার বলেন, নির্বাচন এলে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভাসে নগরবাসী। নির্বাচন হয়ে গেলে দুর্ভোগ আগের মতোই রয়ে যায়। প্রতিশ্রুতির অর্ধেক বাস্তবায়ন হলেও নগরীর চেহারা পাল্টে যেত।

    বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামানও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
    সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে প্রার্থীরা ভাবা উচিত আদৌ তা বাস্তবায়ন করতে পারবেন কিনা। যদি না পারেন বা বাস্তবায়ন অসম্ভব হয় তাহলে শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি সংখ্যা না বাড়ানোই ভালো এ মন্তব্য করেন তিনি।

    বাংলাদেশ সময়: ৯:৪১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ