• শিরোনাম

    আলো ছড়াচ্ছে চোখের সেবায়-বসুন্ধরা আই হসপিটাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট

    মোঃ ওমর ফারুক : বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

    আলো ছড়াচ্ছে চোখের সেবায়-বসুন্ধরা আই হসপিটাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট

    apps

    কুমিল্লারবরুড়া উপজেলার আমড়াতলীর আছিয়া বেগম একজন কৃষিশ্রমিক। অন্যের জমিতে দিনমজুরির কাজ করেন তিনি।বয়স ৪৪ ছুঁই ছুঁই। বছর দুয়েক আগে বাম চোখেআবছা দেখতে শুরু করেন। কিছুদিনপরে দেখা যায়, ছানিরহলুদাভ থাবা ঘিরে নিচ্ছেপুরো চোখ। কিন্তু টাকারঅভাবে অপারেশন করতে পারছিলেন না।

    তারস্বামী ইয়াকুব আলী বলেন, ‘কুমিল্লারবিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছিলাম আমার স্ত্রীর অপারেশনেরজন্য। কিন্তু টাকার অঙ্ক শুনে আমরাপিছিয়ে আসতাম। গত মাসে আমড়াতলীচেরাগ আলী উচ্চবিদ্যালয়ে ফ্রিচক্ষুসেবা ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। সেখানেআছিয়াকে দেখালে তারা জানান, ছানিঅপারেশন করতে হবে। গতসপ্তাহে বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ডরিসার্চ ইনস্টিটিউট আছিয়াকে বিনামূল্যে অপারেশন করে দিয়েছে। তারাএগিয়ে না এলে আমারস্ত্রীর চোখের আলো হয়তো নিভেযেত। এই উপকারের বিনিময়েদোয়া ছাড়া আমাদের আরদেওয়ার মতো কিছু নেই।’

    শুধুআছিয়া নন, গত ১০বছরে ছানি; নেত্রনালিসহ চোখের বিভিন্ন সমস্যায় বিনামূল্যে ২ হাজার ৬৯০জনের অপারেশন করেছে বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ডরিসার্চ ইনস্টিটিউট। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকে এইহাসপাতালের অবস্থান। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ৪৯টিআই ক্যাম্পে সেবা দিয়েছেন হাসপাতালেরচিকিৎসকরা। ১ লাখ ২০হাজার মানুষ বিনামূল্যে সেবা পেয়েছে হাসপাতালথেকে।

    বসুন্ধরাচক্ষু হাসপাতালের সার্বিক পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও ভিশন আইকেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালেহআহমেদ। হাসপাতাল তৈরির স্বপ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমারমায়ের চোখে সমস্যা ছিল।কিন্তু ভাল্বে সমস্যা থাকায় চিকিৎসকরা চোখের অপারেশনের ঝুঁকি নিতে পারছিলেন না।এক সময় মায়ের চোখেরআলো নিভে যায়। আমিতখন মেডিকেল চতুর্থ বর্ষে পড়ি। তখন থেকেইস্বপ্ন একটা হাসপাতাল করার, যেন চোখের রোগ কারও আশারআলো নিভিয়ে না দিতে পারে।কেউ যেন অর্থের জন্যসেবা থেকে বঞ্চিত নাহয়। সেই স্বপ্নকে সফলকরতে আমি একটু একটুকরে টাকা জমাতে শুরুকরি। ২০১০ সালে হাসপাতালেরজন্য জমি দেখতে শুরুকরি। এ সময় বসুন্ধরাগ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান আমারএ পরিকল্পনা জানতে পেরে বসুন্ধরা আবাসিকএলাকায় জমি দেন হাসপাতালগড়ে তোলার জন্য। তৈরি করে দেনহাসপাতালের অবকাঠামো। হাসপাতালের জন্য অনুদান দিয়েস্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেন। বসুন্ধরা গ্রুপ এবং ভিশন কেয়ারফাউন্ডেশনের প্রচেষ্টায় দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছে যেতেথাকে চোখের সেবা।

    ’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশেরপ্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে আমরা হতদরিদ্রমানুষকে সেবা দিয়েছি। অপারেশনেরপরে যখন দৃষ্টি ফিরেআসে তখন রোগীর হাসিমুখদেখাটাই আমাদের নির্মল আনন্দ। মানুষ যখন মাথায় হাতদিয়ে দোয়া করে, কৃতজ্ঞতায়যখন তাদের চোখের পানি গড়িয়ে পড়েতখন আমাদের হৃদয় সিক্ত হয়।চিকিৎসক হিসেবে এর চেয়ে বেশিআর কী পাওয়ার থাকতেপারে।’

    দৃষ্টিনন্দনঅবকাঠামো ও আধুনিক কারিগরিব্যবস্থাপনায় তৈরি হাসপাতালটি চালুহয় ২০১৪ সালে। ১০বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবাদিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালটি। বসুন্ধরার এই চক্ষু হাসপাতালদেশের অন্যান্য চক্ষু হাসপাতাল থেকে অনেক ক্ষেত্রেইব্যতিক্রমী। এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসার পাশাপাশি স্বল্পমূল্যে এবং বিত্তবানদের জন্যসামান্য বেশি মূল্যে একইমানের চিকিৎসা দেওয়া হয়। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে দরিদ্র যে কেউই এখানেএসে চিকিৎসাসুবিধা নিতে পারেন। মুসলমানদেরজন্য আছে জাকাত ফান্ড; যা সম্পূর্ণ শরিয়াহভিত্তিক। অন্যান্য ধর্মের মানুষের জন্যও ফান্ড আছে। দরিদ্র রোগীদেরআধুনিক ও উন্নতমানের চিকিৎসাদেওয়ার পাশাপাশি বিনামূল্যে ওষুধ ও চশমাদেওয়া হয় এবং ইনভেস্টিগেশনও অপারেশন করা হয়।

    বসুন্ধরাআই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফাইজা রহমান বলেন, ‘সাধারণ বহির্বিভাগে সকাল ৮টা ৩০থেকে বেলা সাড়ে ৩টাপর্যন্ত ৪০০ টাকা ফিদিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন রোগীরা।বহির্বিভাগের প্রাইভেট সেকশনে দেখাতে চাইলে ফি ১ হাজার৬০০ টাকা। এই হাসপাতালে সামর্থ্যঅনুযায়ী রোগীরা তাদের পছন্দে যে কোনো ওপিডিতেসেবা নিতে পারেন। কিন্তুসেবার মানে কোনো পার্থক্যনেই।’

    এইহাসপাতালে দেওয়া সেবার মধ্যে রয়েছে- চোখের ছানি রোগ, কর্নিয়াঅ্যান্ড এন্টিরিয়র সেগমেন্ট চিকিৎসা, ভিট্রিও রেটিনার চিকিৎসা, গ্লুকোমার চিকিৎসা, অরবিট অ্যান্ড অকুলোপ্লাস্টি চিকিৎসা, শিশুর চক্ষুরোগ, কন্টাক্ট লেন্স, চোখের মণির কোলাজেন ক্রসলিংকিং, টপকন ডিআরআই ওসিটি ট্রাইটন স্টেরিও ডিস্ক ফটোগ্রাফি, অপটিক্যাল কোহিয়ারেনস টমোগ্রাফি (ম্যাকুলা, অপটিক ডিস্ক ও রেটিনা), ওসিটিএনজিওগ্রাম (ম্যাকুলা অ্যান্ড অপটিক ডিস্ক) এন্টিরিয়র সেগমেন্ট ওসিটি, টপকন রেটিনাল ক্যামেরাফান্ডাস ফটোগ্রাফি, এফএফএ, এফএএফ, রেড ফ্রি ফান্ডাসফটোগ্রাফি, ইউবিএম, গ্রিন ইয়াগ অ্যান্ড এসএলটিলেজার, লো ভিশন এইড, কর্নিয়াল টপোগ্রাফি, পেরিমেট্রি (ভিজ্যুয়াল ফিল্ড অ্যানালিসিস), বি-স্ক্যান আলট্রাসাউন্ড, নন-কন্টাক্ট টনোমেট্রি (গ্লুকোমা স্ক্রিনিং), অটোলেন্স মিটার, স্পেকুলার মাইক্রোস্কোপি, ক্যাটারাক্ট স্টেশন ইকুইভ্যালেন্ট আইওএল মাস্টার, প্যাকিমেট্রি, বায়োমেট্রি, ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরিসহ অত্যাধুনিক সব সেবা। রয়েছেবিশ্বমানের অপারেশন থিয়েটার।

    বাংলাদেশ সময়: ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    মৃত্যু ২৮, শনাক্ত ১৫৪০

    ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

    আর্কাইভ