• শিরোনাম

    বিশ্ব পানি দিবস আজ উপকূলে সুপেয় পানি যেন সোনার হরিণ

    মাসুদ রানা, মোংলা বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩

    বিশ্ব পানি দিবস আজ উপকূলে সুপেয় পানি যেন সোনার হরিণ

    apps

    ফাল্গুন পেরিয়ে চৈত্রের শুরু থেকে এক মহাযুদ্ধে নেমেছেন উপকুলের তৃষ্ণার্ত মানুষ। আর এই যুদ্ধের নাম সুপেয় পানির যুদ্ধ। দক্ষিণাঞ্চলের মোংলা উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকার মানুষ যুগ যুগ ধরে পানির মধ্যে বসবাস করলেও সুপেয় পানির জন্য হাহাকার করছেন। সর্বত্র লোনা পানি। নিরাপদ সুপেয় পানি সুন্দরবন সংলগ্ন এ অঞ্চলের মানুষের কাছে যেন সোনার হরিণ।

    মোংলা পৌর শহরের বাইরের এলাকায় আরও ভয়াবহ অবস্থা। নিম্নাঞ্চলে প্রতিদিন দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে না হতেই মেঠোপথ ধরে পানি সংগ্রহে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেন গ্রাম্য বধুরা। অনেক গ্রামের মানুষ ৪/৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন সুপেয় পানি সংগ্রহে। উপজেলার জয়মনি, বৌদ্ধমারী, চিলা, চাঁদপাই, মিঠাখালী, মাকোরডোন, নারকেলতলা, মাছমারা ও বুড়িডাঙ্গা গ্রামের অনেকেই দুরদুরান্ত থেকে সুপেয় পানি সংগ্রহে যান।

    জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপক‚লীয় অঞ্চলে লবাণক্ততার প্রভাব দিনদিন বেড়েই চলেছে। যার ফলে সুপেয় এবং নিরাপদ পানির আঁধার দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। উপকূলে নিরাপদ সুপেয় পানি নিয়ে কাজ করছে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ব্রাক। সংস্থাটির জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি প্রকল্পের মোংলা অঞ্চলের প্রজেক্ট ম্যানেজার মোঃ শফিকুর রহমান স্বপন বলেন মোংলাসহ উপকূলের প্রত্যান্ত অঞ্চলে বিশুদ্ধ বা সুপেয় পানি সংকট দীর্ঘদিনের। এমনকি দৈনিন্দন কাজে ব্যবহৃত পানির ব্যবস্থাও তেমন একটা নাই। এ অবস্থার মধ্যে চৈত্রের আগমনের সাথে সাথেই মোংলা এলাকা জুড়ে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। তবে লোনা পানি থেকে উদ্ধারে দীর্ঘ মেয়াদী বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের জন্য এই উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ২৪৭৫ পরিবারের মাঝে দুই হাজার লিটারের তারা ট্যাঙ্ক বিতারন করেছেন। এছড়া আগামী তিন বছরে একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে ৭০ হাজার মানুষকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের জন্য আরও ট্যাঙ্ক বিতরন করবে বলেও জানান তিনি।

    সুন্দরবন সংলগ্ন জয়মনি গ্রামের অলিয়ার রহমান, আজমল হোসেন, বিথিকা রানীর সাথে কথা হলে তারা জানায়, সুপেয় পানির জন্য হাহাকারের শেষ নেই। তীব্র দাবদাহে গরমের মাত্রা যখন বেড়ে যায় অসহ্য হয়ে উঠে জীবন ধারণ। গ্রামের মেঠো পথ ধরে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে যে পরিমাণ পানি আনা যায়, তার চাইতে শরীরে ঘাম যেন আরো বেশি বের হয়। তারা আরও বলেন, ভোরের সূর্য উকি দেওয়ার আগেই পানি আনতে যায় একদল নারী। কিন্তু পৌঁছাতে সামান্য দেরি হলেই সব মিলিয়ে তাদের দুই থেকে তিনটি মূল্যবান ঘন্টা পেরিয়ে যায় পানি আনার কাজে। এ যেন ছকে বাঁধা এক সংগ্রামী জীবন। বিগত ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা আর অম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ হয় চিলা এলাকার অধিকাংশ মিষ্টি পানির আঁধার। এরপর থেকে আর থামেনি সুপেয় পানির হাহাকার। বর্ষা মৌসুমে কিছুটা লাঘব হলেও চৈত্রের শুরু থেকেই শুরু হয়েছে তীব্র মিষ্টি পানির কষ্ট। এ এলাকার বিদ্যুৎ মন্ডল বলেন, বর্তমান সময়ে যেভাবে সুপেয় পানির সংকট দেখা যাচ্ছে তা আগে কখনো দেখিনি। যতদিন যাচ্ছে তত সুপেয় পানির সংকট বাড়ছে। এসময় তিনি সরকারি সেরকারি প্রতিষ্ঠানের নিকট মিষ্টি পানির আঁধার তৈরির আহবান জানান। নিরাপদ সুপেয় পানির অভাবে ভুগছেন পৌরসভার বাসিন্দারাও। লবন অধ্যুষিত মোংলা পৌরবাসীর জন্য ২০০৮ ও ২০১৬ সালে ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে মাছমারা এলাকায় খাবার পানি সংরক্ষণে দুটি পুকুর খনন করা হয়। এ পুকুরের পানি বিশুদ্ধ করে তা ওভারহেডে তুলে খাবার পানির চাহিদা মেটানো হতো দুই লাখ বাসিন্দাদের। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে দুটি পুকুরই প্রায় শুকিয়ে যাওয়ায় পানির চাহিদা মেটানো যাচ্ছেনা।

    চাহিদার তুলনায় পানি সরবরাহ করতে পারছেননা পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আসছে রমজানে পানি সংকট ভয়াবহ হবে। এরমধ্যে গত ৯ মার্চ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় থেকে পবিত্র রমজান মাসে নিরবিচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা অত্যান্ত কঠিন। শতভাগ সুপেয় পানি সরবরাহ করা সম্ভব না। এই কথা জানিয়ে মঙ্গলবার (২১ মার্চ) মন্ত্রনালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, শতভাগ সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পানি সংরক্ষনে পৌর শহরের কর্তৃপক্ষের মাছমারায় যে পুকুর দুটি রয়েছে তা পুনঃখননসহ আরও কিছু প্রকল্প দরকার। এজন্য ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পৌরবাসীর দূর্ভোগ লাঘব হবে বলেও জানান মেয়র।

    উপজেলার সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. সোহান আহম্মেদ বলেন, সম্প্রতি সরকারিভাবে জরিপ চালিয়ে দেখা হয়েছে মোংলা উপজেলায় ৮৫ শতাংশ মানুষ নিরাপদ বিশুদ্ধ পানির অভাবে রয়েছে। এই সংকট সমাধানে এক বর্ষা মৌসুম থেকে আরেক বর্ষা মৌসুম পর্যন্ত বৃষ্টির পানির সংরক্ষনের জন্য একটি প্রজেক্টের প্রয়োজন। এজন্য কাজ চলছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বৃষ্টির সংরক্ষনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি মাসেই ট্যাঙ্ক বিতরন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

    বাংলাদেশ সময়: ২:২৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ