মোঃ রায়হান মাহামুদ, মঙ্গলবার, ০১ আগস্ট ২০২৩
গাজীপুরের কালীগঞ্জ থেকে টঙ্গি হয়ে রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কি.মি. পথ যাতায়াতের জন্য অপ্রতুল পরিবহন ব্যবস্থার কারণে বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা সময় মত গন্তব্যে পৌছাতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে কালীগঞ্জ থেকে টঙ্গি পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য গুটিকয়েক লেগুনা ও লোকাল বাস ছাড়া অন্য কোন পরিবহন নেই। পরিবহন সংকটের কারণে চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও অসুস্থ্য রোগীদের কালীগঞ্জ বাজার বাসষ্টেন্ড, পুরাতন সোনালী ব্যাংক মোড়, আড়িখোলা বাসষ্ট্যান্ড, কাপাসিয়া রোড এবং মিশন মোড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থেকে লক্কড় ঝক্কড় মার্কা এসব পরিবহনে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে প্রথমে পূবাইল বা টঙ্গি যেতে হয়। পরে সেখান থেকে পুনরায় অন্য পরিবহনে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌছতে হয় কালীগঞ্জবাসীর। বারবার পরিবহন পরিবর্তনের কারণে সময় মতো নিজ নিজ গন্তব্যে পৌছাতে না পারায় প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে কর্মঘন্টা। ব্যবসায়ী, ি শক্ষার্থী ও রোগীরা পড়ছেন বিড়ম্বনায়।
কালীগঞ্জ থেকে টঙ্গি হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত পরিবহন ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণ জানতে একাধিক পরিবহন মালিকের সাথে কথা বললে তাঁরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা ও কালীগঞ্জ এবং টঙ্গি দুটি বাসষ্ট্যান্ডে বাস প্রতি দৈনিক ৯ শত টাকা চাঁদা দিতে হয়। মাত্রারিক্ত চাঁদা, পরিবহন শ্রমিকের মুজুরি ও জ্বালানী খরচ দিয়ে আমাদের কিছুই থাকে না। তাই অন্য সড়কে পরিবহন নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কালীগঞ্জ বাজার বাসষ্ট্যান্ড থেকে সরাসরি কোন পরিবহন না থাকায় ভোর থেকে রাজধানী ঢাকা অভিমুখে বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়। বর্তমানে কালীগঞ্জ হতে টঙ্গি পর্যন্ত দু’টি লোকাল বাস ও ৩০/৩৫টি লেগুনা ছাড়া আর কোন পরিবহন ব্যবস্থা নেই। কালীগঞ্জ হতে গুলিস্তান পর্যন্ত সরাসরি কোন বাস সার্ভিস বা অন্য কোন পরিবহন না থাকায় পণ্য পরিবহনে ব্যবসায়ীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন ও সাধারণ যাত্রীরা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। ঢাকার বঙ্গবাজার, ছিদ্দিক বাজার, আলুবাজার, নবাবপুর, ষ্টেডিয়াম মার্কেট, চক বাজার, সদরঘাট, ইসলামপুর, নিউ মার্কেট, কারওয়ান, ধোলাইখাল, কেরানীগঞ্জসহ বিভিন্ন পাইকারী বাজার হতে কাপড়, প্রসাধনীসহ বিভিন্ন ক্রয়কৃত পণ্য ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল কালীগঞ্জে পৌছাতে ব্যবসায়ীদের হয়রানী ও ভোগান্তীর অন্ত নেই। পরিবহন সংকটের কারণে পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়ে সাধারণ ক্রেতাদের উপর। এছাড়াও সন্ধ্যার পর কালীগঞ্জ থেকে কোন গণপরিবহন চলাচল না করায় দুরের যাত্রীদের বিভিন্ন সময়ে গন্তব্যে পৌছতে গিয়ে মলম পার্টি ও ছিনতাইকারীদের কবলে পড়তে হয়। সম্প্রতি কালীগঞ্জের শহিদ ময়েজউদ্দিন সেতু হতে ঢাকা পর্যন্ত বিআরটিসি বাস সার্ভিসের উদ্বোধন হলেও একদিন পর অদৃশ্য কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। পুর্বের ন্যায় কালীগঞ্জ থেকে টঙ্গি হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত গণপরিবহন চালুর বিষয়টি এখন কালীগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবীতে পরিনত হয়েছে। তারা গণপরিবহন ব্যবস্থা চালুর জন্য স্থানীয় সাংসদ মেহের আফরোজ চুমকি, প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এস.এম রবীন হোসেন জানান, কালীগঞ্জ থেকে টঙ্গি হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এ সমস্যার সমাধন করা একক ভাবে সম্ভব নয়। এজন্য পরিবহন ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। সার্ভিসটি চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে ইতোমধ্যে একাধিকবার কথা বলেছি, আবারো কথা বলবো।
বাংলাদেশ সময়: ১০:১৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০১ আগস্ট ২০২৩
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel