• শিরোনাম

    নিজ পায়ে দাঁড়াতে না পারলে আর্থিক ভাবে দাঁড়াছে জিতু

    রংপুর ব্যুরো: মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩

    নিজ পায়ে দাঁড়াতে না পারলে আর্থিক ভাবে দাঁড়াছে জিতু

    apps

    ভূমিহীন দিনমজুর পরিবারে জিতু রায়ের জন্ম হয়। তখন পরিবারে আনন্দের সীমা ছিল না। তবে সেই আনন্দ মলিন হতে বেশি দিন সময় লাগেনি। চার বছর বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে জিতুর পা অকেজো হয়ে যায়। এরপর থেকে নানা সময়ে প্রতিবেশী, স্বজনদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের মধ্যে দিয়ে বড় হতে হয় জিতুকে। কেউ কেউ জিতুকে ভিক্ষাবৃত্তি করার কথাও বলেছিল। তবে সেসব কথায় কান না দিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন। জিতু নিজ পাঁয়ে দাঁড়াতে না পারলেও দেড় হাজার পরিবারের দাঁড়িয়ে থাকার খুঁটি হয়েছেন তিনি। তার গড়া রকমারিশিশুঘর.কম ও এসএমজে ফ্যাশনে পোশাক তৈরি করে সংসারে বাড়তি আয়ের যোগান দিচ্ছে ১০টি এলাকার প্রায় দেড় হাজার নারী। এখান থেকে এসব নারী মাসে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছে।

    ১৯৮৮ সালে রংপুর নগরীর ঠিকাদারপাড়া এলাকায় মহেন্দ্র রায় ও মঞ্জু রাণী দ¤পতির ঘরে জন্ম হয় জিতু রায়ের। দুই ভাই এবং এক বোনের মধ্যে সবার বড় জিতু রায়। দরিদ্র দিনমজুর পিতার এক সময় কিছু না থাকলেও এখন জিতুর পরিশ্রমের বদৌলতে বদলে গেছে কষ্টের দিনগুলো। দুঃখ ও যন্ত্রণাময় দিন শেষে জিতু রায়ের পরিবারে ফিরেছে সোনালী সুখ। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গড়েছে সুখের সংসার। এখন জিতুর আছে পাকা বাড়ি, প্রাইভেটকার, বাইকসহ কোটি টাকার স¤পদ। রংপুর নগরীর তাজহাট ডিমলা এলাকায় কারখানা ঘুরিয়ে জিতু রায় শোনান তার জীবনের গল্প। জন্মের চার বছর পর পোলিও আক্রান্ত হলে হাঁটা চলা বন্ধ হয়ে যায় জিতুর।

    দিনমজুর পিতা সারাদিন মাঠে পুড়ে আয় করতেন মাত্র ৩০ টাকা। এ টাকায় তখন দু’বেলার খাবার জুটতো না। তাই চিকিৎসা করাতে পারেনি। কেনা হয়নি একটি হুইল চেয়ারও। জিতু রায়ের লেখাপড়ার প্রতি অদম্য ইচ্ছা শক্তি দেখে পিতা তাকে ঘাঁড়ে করে বিদ্যালয়ে নিয়ে গেছেন। এভাবে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেও পরে অভাব আর চলাচল করতে না পারায় জিতু রায়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন ২০০৫ সাল। পরিবারের দৈন্যদশা দেখে জিতু নেমে পড়েন ভাঙারি ব্যবসায়। বেশ কিছু দিন ব্যবসা করলে সেখানেও বাঁধা হয়ে দাড়ায় পাঁ, চলতে না পারা। এরপর মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ শিখতে যোগ দেন। পিতার পিঠে চড়ে কাজ শিখতে গেলেও তিনতলা ভবনে লিফট না থাকায় সেখানেও টিকতে পারেন না জিতু। এ অবস্থায় জিতু রায় ফ্রিল্যান্সার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হলে লাগবে ক¤িপউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ। দরিদ্র পিতা তা কেনার সমার্থ্য ছিল না। তবু দমে যাননি জিতু রায়। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে শেখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ক¤িপউটার শেখা তো দূরের কথা প্রতিবন্ধী বলে অনেকেই তাকে দেখে ক¤িপউটার বন্ধ করে দিতেন। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কেউ কেউ তাকে ফিরিয়েও দিয়েছেন।

    ২০০৯ সালে তার কম্পিউটার শেখার আগ্রহ দেখে স্কুল বন্ধু তৌফিক নিজের ক¤িপউটার দিয়ে দেয় জিতু রায়কে। আরেক বন্ধু দেন ইন্টারনেট সংযোগ। শুরু হয় ইউটিউব ও গুগল দেখে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শেখা। দিন রাত মত্ত থাকে ক¤িপউটার নিয়ে। টানা দুই বছর কাজ শেখার এরপর পুরোদমে লেগে পড়ে অনলাইন মার্কেটগুলোতে কাজের জন্য আবেদনে। কাজও পায়। প্রথম কাজে আয় করে ৩০০ ডলার। আত্নবিশ্বাস বাড়ে যায় তার। ২০১১ সালের শেষে তার আয় দেখে মা বিক্রয় করে দেন বিয়ের সময় পাওয়া স্বর্ণের রিং। সেই টাকা ও পিতার কিছু জমানো টাকা দিয়ে কেনা হয় নতুন কম্পিউটার। এরপর পুরোদমে ফ্রিল্যান্সিংয়ে লেগে পড়ে। ধীরে ধীরে তার সঙ্গে এলাকার তরুণদের যুক্ত করে। জিতু বলেন, ২০১১ সাল পর্যন্ত ৪০ জন তার অধীনে ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ করেছেন। তাদের সর্বোচ্চ বেতন ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের টাকায় ক্রয় করেছে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল। জমি ক্রয় করে শিশুদের পোশাক তৈরির কারখানা, গড়েছেন পাকা বাড়ি। ২০২১ সালে শুরু করেন রকমারিশিশুঘর.কম ও এসএমজে.কম ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে নিজের কারখানার তৈরি পোশাক বিক্রয় করছে। এসব পোশাক তৈরি করছে আশেপাশের ১০টি এলাকার দেড় হাজারেরও অধিক নারী। মাহিগঞ্জ, মীরগঞ্জ, তাজহাট, রঘুবাজার মদিখানা, মোল্লাপাড়া, ডিমলা, ফতেপুর, মাহিগঞ্জ থানাপাড়া, নুরপুরসহ ১০টি এলাকায় দেড় হাজারের বেশি নারী কাজ করছে।

    বাংলাদেশ সময়: ৮:১৭ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ