নিজস্ব প্রতিবেদক: | শনিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট
অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের পরও এখনো বহাল তবিয়তে পদ আঁকড়ে রয়েছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রাপ্ত এমডি এসএম মাহবুবুর রহমান। গণঅভ্যুত্থানে পলাতক হাসিনা সরকারের একজন সুবিধাভোগী কর্মকর্তা হিসেবে মাহবুব এখনও কিভাবে কল্যাণ ট্রাস্ট্রের এমডি হিসেবে কাজ করছেন আর কেনই বা তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হচ্ছে না সেটি নানা রহস্যের জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি এখন কল্যাণ ট্রাস্ট্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যারা তাদের মুখে মুখে। মাহবুব বরাবরই সবাইকে নিজে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, তার ৬ ভাই মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র জীবনে তিনি ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন একথা বলে এবং সদ্য সাবেক সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে নিজেকে জাহির করে আওয়ামী লীগের আমলে উপ-সচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পরপর ৩টি পদোন্নতি বাগিয়ে নেন। এছাড়া বিনা ভোটের মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হককে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে ০১-০১-২০২৪ হতে ১ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ লাভ করেন। এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ লাভের জন্য এমডি মাহবুব নিজে ৩টি ডিও লেটার লিখে ২টি আ.ক.ম মোজাম্মেল হককে দিয়ে এবং আরেকটি সাবেক এমপি শাহজাহান খানকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ বরাবর প্রেরণ করেন। সেখানে তিনি বিএনপি আমলে তার ও তার ভাইদের অমূল্যায়নের বিষয়টি তুলে ধরেন। অত্যন্ত ধূরন্ধর এ ব্যাক্তি এখন আবার রাতারাতি ভোল পাল্টে বিএনপি সমর্থক সেজে বলছেন আওয়ামী লীগ শাসন আমলে তার সচিব হওয়ার কথা, কিন্তু বিএনপি মনা হওয়ায় সেটি তার ভাগ্যে জোটেনি। জানা যায়, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে যোগদানের পর ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে ডিজি জামুকার (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) মাধ্যমে তার তিন (০৩) ভাইকে অবৈধভাবে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ লাভের পর তিনি অবৈধ মন্ত্রীকে দিয়ে ট্রাস্টের ২৮ টি প্রকল্পের অনুমোদন নিয়েছেন। অথচ ট্রাস্টে বর্তমানে যোগ্য এবং সিনিয়র কর্মকর্তা/কর্মচারী নেই, যাদের দ্বারা এ কাজ তিনি সম্পাদন করবেন। সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য প্রকল্পগুলো উন্নয়নের কাজ তিনি নিয়েছেন। এমডি পদের পাশাপাশি তিনি একাই ট্রাস্টের অপর ৩ পরিচালক- পরিচালক (কল্যাণ), পরিচালক (প্রশাসন) ও পরিচালক (অর্থ) এর দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ এসব পদে আলাদা কর্মকর্তা থাকার কথা। তিনি তার ইচ্ছামত অফিস চালান। তিনি চান না তার উপরে কেউ কোন কথা বলুক। তিনি চান না বলেই ট্রাস্টে কোন পরিচালক তিনি পদায়ন হতে দেননি। উল্লেখ্য ট্রাস্টের সাংগঠনিক কাঠামোতে এমডিসহ পাঁচটি পরিচালকের পদে প্রেষণে নিয়োগের ব্যবস্থা আছে।
তিনি তার কর্মকালে ৩১-১২-২০২০ হতে অদ্যাবধি ট্রাস্টের ৭-৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারীদের গায়ে হাত তুলেছেন যা নজিরবিহীন। এমনকি ট্রাস্টের হেড অফিসের ভাড়াটিয়া ট্রেডস ওয়ার্থ এর একজন প্রকৌশলীকে সিঁড়ির নিচে বিনা কারণে পিছন হতে লাথি মেরে ফেলে দেন তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে। যা নিয়ে ঐ সময় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং ট্রাস্ট্রের তৎকালিন কর্মকর্তারা বিষয়টি সামাল দেন।
মার্চ ২০২৪ এ অনুষ্ঠিত সিবিএ এর সাধারণ নির্বাচনে তিনি সরাসরি হস্তক্ষেপ করে কর্মচারীদের চাকুরীর ভয়ভীতি দেখিয়ে তার অনুগতদের দিয়ে সিবিএ এর একটি কমিটি গঠন করেন যা ট্রাস্টে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারী শ্রমিকগণ প্রত্যক্ষ করেছেন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই করার অধিকার বা যোগ্যতা না থাকা স্বত্ত্বেও এবং তিনি নিজে মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কাজটি পরিচালনা করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অপমান/অসম্মান করেছেন। মূলত: এ কাজটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জামুকার। তিনি অবৈধ মন্ত্রীকে দিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করে সারাদেশে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এবং এ কাজ করতে গিয়ে তিনি ২-১ জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা লাঞ্ছিতও হয়েছেন যা দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গত সরকারের আমলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের চুক্তি বাতিল হওয়ার নির্দেশনা থাকলেও মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত এ কর্মকর্তার চুক্তি এখনও কেনো বাতিল করা হয়নি সেটি এখন সবার আলোচনার বিষয় ।
Posted ১২:৪০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৪
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel
এ বিভাগের আরও খবর
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।