• শিরোনাম

    বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম পূজার মন্ডব নালিতাবাড়ীর মঙ্গলভবন

     মেহেদী হাসান সাকিব, নালিতাবাড়ী (শেরপুর) সংবাদদাতা: মঙ্গলবার, ০৪ অক্টোবর ২০২২

    বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম পূজার মন্ডব নালিতাবাড়ীর মঙ্গলভবন

    apps

    বাংলদেশের দ্বিতীয় প্রাচীন পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ‘মঙ্গলভবন’ এর মন্ডপে। যা এবার ১২৭ বছরে পা রাখলো। ১৮৯৫ সালে মঙ্গলরাম সরকার নামের এক ব্যক্তি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে উপজেলার পালপাড়া এলাকায় তৈরি করেছিলেন শ্রী শ্রী মঙ্গল ভবনের এ পূজা মণ্ডপটি। পূজা উদযাপন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন থেকে ‘উদ্বোধন’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। সেই পত্রিকায় বলা হয়েছে সিলেটের পাচঁগাও একটি পূজা মণ্ডপ রয়েছে যা প্রায় ১৭৪ বছরের প্রাচীন। আর দেশের দ্বিতীয় প্রাচীন পূজা মণ্ডপ হচ্ছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরশহরের খালভাঙ্গা এলাকার ‘মঙ্গল ভবনের’ পূজা মন্ডপটি। দেবী দুর্গার আগমনে অশুভ শক্তির বিনাশ আর জগতে শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠা হবে। এই বিশ্বাস নিয়ে বরাবরের ন্যায় এ বছরও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় পালিত হচ্ছে মঙ্গল ভবন পূজা মণ্ডপের দুর্গোৎসব। ১২৭ ​বছরের পুরনো মণ্ডপ বলে কথা। তাই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেবী দুর্গার আশীর্বাদ লাভের জন্য এই মণ্ডপেই সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে বিভিন্ন বয়সী ভক্তদের। শেরপুর জেলার সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও পুরনো দুর্গা মণ্ডপ এটি। তাই ভক্তদের আকর্ষণ একটু বেশিই থাকে মঙ্গল ভবন পূজা মণ্ডপ ঘিরে। প্রতিবছরই এই মণ্ডপে দেশীয় সংস্কৃতির প্রাধান্য পেয়ে থাকে এখানে। এই মণ্ডপের দুর্গোৎসব শুধু সনাতন ধর্মালম্বীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। অন্যান্য ধর্মালম্বীরাও এই মণ্ডপ দেখতে আসেন। তাই সকল ধর্মের মানুষের মেলবন্ধন দেখা যায় এই মণ্ডপে। দুর্গোৎসবে ভক্তদের ঢল নামে এই ঐতিহ্যবাহী মণ্ডপটিতে। বিশেষ করে নবমী পূজার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত প্রসাদ পেতে এই মণ্ডপে ভক্তদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। বন্ধুদের সাথে পূজা দেখতে আসা দর্শনার্থী রনি বর্ধন (২৫) বলেন, ‘পূজোতে একদিনের জন্য হলেও এই মন্ডপটিতে আমরা আসি। নবমী পূজার বিকেলে এখানে প্রসাদ না খেলে পূজা অসম্পূর্ণ মনে হয়। এখানে বাঙালী ঐতিহ্যের ছোঁয়া রয়েছে। গৃহিনী বিউটি রাণী সাহা (৪৫) বলেন, ‘২৭ বছর ধরে নালিতাবাড়ীতে বিয়ে হয়েছে। প্রতিবছরই পরিবারের সাথে এই পূজা মণ্ডপটিতে আসি। যতো জায়গায়ই ঘুরি না কেনো, এখানে না এলে পূজায় ঘুরাঘুরি পরিপূর্ণ হয় না। পরিবারের সকলেরই আগ্রহ থাকে এই পূজা দেখতে আসা নিয়ে।’ মঙ্গল ভবন পূজা মণ্ডপের নতুন প্রজন্মের শুভ্র প্রকাশ পাল (২৮) বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি বাঙালী ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছরই আমাদের পূজায় পালাগান, যাত্রা,রামমঙ্গলসহ নানান আয়োজন করা হতো। তবে কালের বিবর্তনে অনুষ্ঠানে পরিবর্তন আসলেও আমরা নতুন প্রজন্ম চেষ্টা করছি ঐতিহ্য ধরে রাখার। পূজা মন্ডপটির সার্বিক তত্বাবধানে থাকা বিশ্বনাথ পাল (৬২) বলেন, আমাদের এই পূজা মণ্ডপটি ১২৭ বছরের ঐতিহ্য বহন করছে। এখন পরিবারের চতুর্থ প্রজন্ম এই পূজার দায়িত্ব পালন করছে। এখানে সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চা হয়। এ ছাড়া ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করছেন বলেই এত বছর ধরে টিকে রয়েছে মণ্ডপটি। মঙ্গলভবন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি গৌরাঙ্গ চন্দ্র পাল (৭২) বলেন, এটি একটি ঐতিহ্যবাহী পূজা মণ্ডপ। এখানে পূজা শুরু হওয়ার পর থেকে শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের সময় পূজা বন্ধ ছিলো। তাই আমরা এক প্রজন্মের পর অন্য প্রজন্ম চেষ্টা করছি এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে। আশা করি এ বছর আমরা সফলভাবে আমদের দুর্গোৎসব সম্পন্ন করতে পারবো।

    বাংলাদেশ সময়: ৭:২৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৪ অক্টোবর ২০২২

    dainikbanglarnabokantha.com |

    এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

    আর্কাইভ