টি এম এ হাসান সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: বৃহস্পতিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
নির্মানের ১৫দিনেই ধসে গেলো দীর্ঘ প্রতিক্ষার রাস্তা!
সিরাজগঞ্জ প্রায় ৫যুগেরও অনেক বেশি সময় ধরে কয়েক হাজার অবহেলিত মানুষ চলাচল করছিলেন একটি গ্রামীণ কাচা রাস্তায়। যাদের বৃষ্টিতে জুতা হাতে নিয়ে কাদা মাড়িয়ে আর বন্যায় কোমর পানি বা নৌকাই ছিল ভরসা। বদলেছে একের পর সরকার, বদলেছে স্থানীয় প্রতিনিধি। আশ্বাসের উপরে আশ্বাসে ভেসে গিয়েছিল বিশ্বাস। তবুও তা আবার উকি দিল গ্রামবাসীর মনে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পরে ভাগ্য খোলে এলাকাবাসীর। মনে বূনছিল একটি পাকা রস্তার স্বপ্ন। যা দিয়ে যোগাযোগ ব্যাবস্থার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাবে এলাকাটি। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু অসাধু কর্মকর্তা আর ঠিকাদারের যোগসাজেশে নিম্ন মানের কাজে ভেস্তে গেছে গ্রামবাসীর সকল স্বপ্ন। এমনই অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। নানান সময়ে নানান জায়গায় যুগের পর যুগ ধরণা দিয়ে অবশেষে মেলে সেই বহুত প্রতিক্ষিত রাস্তাটি। কিন্তু সেটাও যেন ভাগ্যে সইছেনা গ্রামবাসীর। নির্মান শেষ হতে না হতেই ১৫দিনের মধ্যেই ধসে গেছে সেটিও। রাস্তাটিই যেন আরও কাল হয়ে দাড়িয়েছে তাদের। পাকাকরণের আগে রাস্তা থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা মোটামুটি অক্ষুন্ন থাকলেও এখন পাকাকরণের পরে রাস্তা ভেঙ্গে পরে যেন বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে সে যোগাযোগ। পা হাটা ছাড়া এখন কোনও বিকল্প অবস্থা না থাকায় সেই স্বপ্নের ফাকে উকি দিচ্ছে একরাশ হতাশা আর মানসিক কষ্ট। কিন্তু এতকিছুর পরেও দ্বায় নিচ্ছেন না স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে অনিয়মের কারনে কিছুদিন কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল বলছেন উপজেলা প্রকৌশলী। প্রায় ৮০ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত একটি রাস্তার এমনই বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের ঘরগ্রাম পূর্বপাড়ায়। রাস্তাটি দেখতে গেলে অভিযোগ ও হতাশা ছুড়তে থাকেন এলাকাবাসী। এলাকার প্রবীণরা সহ স্থানীয় অসংখ্য মানুষ বলেন, আমাদের জীবনটাই কেটে গেল একটা রাস্তার আশায় তবুও হচ্ছিলনা। তারপরে অসংখ্য জায়গায় ধরণা দিয়ে মেলে রাস্তাটির অনুমোদন। এরপরে রাস্তার কাজ শুরু হওয়ার পরেই নিম্নিমানের কাজ হচ্ছে অভিযোগ ওঠে। এরপরে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পরে খুব দ্রুত সময়ে তরিঘরি করে কাজ শেষ করেন ঠিকাদার। এই সুযোগে কোনও রকমে রাস্তার কাজ শেষ করে যাবার ১৫দিনের মধ্যেই কয়েক জায়গায় ভেঙ্গে পড়ে রাস্তাটি। এর মধ্যে একজায়গায় প্রায় ৪০-৪৫ মিটার রাস্তা ভেঙ্গে পুকুরে পড়ে গেছে। সেখান দিয়ে রাস্তা কাচা থাকাবস্থায় ভ্যান ও অটোগাড়ি চলাচল করলেও এখন সাইকেল ছাড়া কোনও যান জায়না। এখন আবার সেই পায়ে হেটে যাওয়াই ভরসা। মানুষজন অসুস্থ হলেও ঘাড়ে করে নিয়ে আসা ছাড়া কোনও উপায় থাকেনা। তাহলে এই রাস্তা দিয়ে কি করবো বলেও আক্ষেপ জানান তারা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের এই রাস্তাটি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় শুধু এক জায়গার বৃহত ভাঙ্গাটিই নয়, ভেঙ্গে যাচ্ছে রাস্তাটির আরও কয়েকটি স্থানে। তবে ৮৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাস্তাটি ১৫দিনও না টেকায় ক্ষোভ জমেছে এলাকার সবার মনেই। এমনকি কিছু কাজ না করেই বিল তুলে নেয়া হয়েছে। তবে বিল তুলে নেওয়ায় রাস্তাটি আর মেরামত হবে কিনা এটা নিয়েও তাদের মনে দেখা দিয়েছে সংশয়। তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, ৮৫লক্ষাধিক টাকা ব্যয় ধরে ১১৫০ মিটার রাস্তাটির কাজ পান তন্ময় এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ৫০মিটার বাদ দিয়ে ১১শ মিটার রাস্তার কাজ করে তন্ময় এন্টারপ্রাইজ। তখন এলজিইডি বাকি ৫০মিটার রাস্তা বাদ দিয়ে বিল কষেন, এতে অল্প রাস্তা থেকেই গ্রামবাসীর হারাতে হয় আরও ৫০মিটার রাস্তা। আরও জানা যায়, গত বছরের ১৫মে কাজ শুরু হয়ে চলতি বছরের ৩০জুলাই শেষ হবার কথা। কিন্তু গত বছরের ১৫মে কাজ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ শুরু করা হয় অনেক দেরিতে। অতঃপর তরিঘরি করে কোনও রকমে নিম্ন মানের কাজ করে দ্রুততার সাথে চলতি বছরের ৩০জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করা হয়। এমনকি সেই একই দিনে কাজ হস্তান্তর করে উত্তলন করে নেয়া হয় শতভাগ বিলও। এর ১৫দিন যেতে না যেতেই প্রায় ৫০মিটার রাস্তার সিংহভাগ ধসে পড়ে যায়। এমনকি সেই স্থলে গাইড ওয়াল দেয়ার কথা থাকলেও দেখা যায় সেখানে কোনও প্রকার গাইডওয়াল না দিয়ে নামে মাত্র কিছু খুটি দেয়া হয়েছিল। এখন পানি চলে আসায় সেই জায়গাটির আর সংস্কারও করতে পারছেন না ঠিকাদার ও কতৃপক্ষ। যার ফলে তাদের এই অনিয়ম দূর্নীতির বিষয়টি আরও বেশি প্রকাশ্যে চলে আসে। এখন বলছেন বর্ষার পরে ঠিক করে দেয়া হবে রাস্তা। কিন্তু এরই মধ্যে ভাঙ্গতে শুরু করেছে রাস্তার আরও কয়েকটি অংশ। যা নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর মনে। সবার মুখে মুখে এখন দায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তন্ময় এন্টারপ্রাইজ এর অনিয়ম দুর্ণীতির বিষয়টি আলোচ্য হয়ে উঠেছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের রাস্তাটির দায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসডি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, রাস্তাটির কাজের মান নিয়ে সমস্যা নেই কিন্তু নতুন রাস্তা জন্য ভেঙ্গে পড়েছে। তবে গাইডওয়ালের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এখানে ৪০মিটার গাইডওয়াল না দিয়ে প্যালাসাইটিং করা হয়েছে। কিন্তু সেটাও নেই বললে তিনি আর কোনও কথা বলতে রাজি হননি। তবে বর্ষা শেষ হলে আবার কাজ করে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। তবে রাস্তার অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজের ব্যাপারে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। এছাড়াও রাস্তা থেকে ৩মিটার দূরে গাইডওয়ালের কাজ করা হয়েছে বললেও তার থেকে অনেক দূরে কিছু খুটি দেখতে পাওয়া যায়। এব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ বলেন, রাস্তাটিতে নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে ও কাজে কিছু অনিয়ম হওয়ায় আমরা মাঝখানে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে আবার কাজ শেষ করা হয়েছে। তবে ধসে পরা জায়গা বর্ষা শেষে মেরামত করে দেয়া হবে জানিয়ে গাইড ওয়ালের ব্যাপারে বলেন, সেখানে নিয়ম অনুযায়ী গাইডওয়াল দেয়া হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেনের বক্তব্যের সঙ্গে বক্তব্যে অমিল পাওয়া যায়। রাস্তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তন্ময় এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এম.এ আ
বাংলাদেশ সময়: ১:২৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
dainikbanglarnabokantha.com | Romazzal Hossain Robel